
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ২৬ মার্চ চার দিনের জন্য চীন সফরে যাচ্ছেন। এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার।
প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর নিয়ে রোববার (১৬ মার্চ) ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, বৈঠকে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন-প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন আনুষ্ঠানিক সফর হবে দুই বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মধ্যে ৫০ বছরের দীর্ঘ সম্পর্কের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সফর। বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশের সরকার প্রধানের জন্য এই সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে চিন সফরের বিস্তারিত সূচি তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সচিব শফিকুল আলম বলেন, এই সফরের সময় চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিন পিংয়ের সঙ্গে বেইজিংয়ে ২৮ মার্চ অধ্যাপক ইউনূসের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। সেখানে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সব বিষয় নিয়ে আলাপ হবে। তিনি বলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি হবে তার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে একটা বৈশ্বিক ম্যানুফেকচারিং হাব (উৎপাদন কেন্দ্র) হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। সেলক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার সফরে চীনের কারখানাসমূহকে কীভাবে বাংলাদেশে স্থানান্তর করা যায়, সে বিষয়টি আলোচনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে।
প্রফেসর ইউনূসের সফরসূচির বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘২৬ মার্চ চীনে পৌছাবেন প্রধান উপদেষ্টা। এরপর ২৭ তারিখে তিনি চীনের হাইনান প্রদেশে অনুষ্ঠেয় বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে বক্তব্য রাখবেন। বিএফএকে বলা হয়-প্রাচ্যের দাভোস। এই সম্মেলনে এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং বড় বড় প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরা যোগ দেবেন। আমরা আশা করছি, বিএফএ সম্মেলনের সাইডলাইনে চীনসহ অন্যান্য দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক হবে প্রধান উপদেষ্টার।’
সফরকালে অধ্যাপক ইউনূস পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করবেন এবং এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে অনারারি ডক্টরেট ডিগ্রি দেওয়া হবে। এছাড়া তিনি চীনের হাইটেক পার্ক পরিদর্শন করবেন বলেও জানান প্রেস সচিব। শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ম্যানুফেকচারিং হাব হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হবে।
তিনি বলেন, এই সফরে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে মূল ফোকাস থাকবে চীনের কোম্পানিগুলো যেন তাদের কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তর করে। তিনি বলেন, গত বছর জাতিসংঘ সম্মেলনের সাইডলাইনে অনুষ্ঠিত চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস চীনের নবায়নযোগ্য জ্বালানি কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে সাড়া দিয়ে চীনের দুটি কোম্পানি ইতিমধ্যে বাংলাদেশে অফিস স্থাপন এবং সোলার এনার্জিতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শফিকুল আলম বলেন, চীনের সোলার কোম্পানি ট্রেড প্রোটেকশনের কারণে অনেক ক্ষেত্রে তাদের বিনিয়োগে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু, বাংলাদেশে তারা কোনো বাধার সম্মুখীন হবেন না।
তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা কত দ্রুত বাড়ানো যায়, সেবিষয়টিও আলোচনায় স্থান পাবে। তিনি আরো জানান, বৈঠকে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছেন-৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় চীনের কোম্পানিগুলো সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করেছে। প্রেস সচিব বলেন, আশা করছি এই সফরের পর আরো চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে আসবে। চীনের হাসপাতাল চেইন যেন বাংলাদেশে যৌথ বিনিয়োগ করে সেবিষয়েও আলোচনা হবে। প্রফেসর ইউনূস ‘পরিবর্তনশীল বিশ্বে এশিয়া : অভিন্ন ভবিষ্যতের দিকে’ শীর্ষক বক্তৃতা দেবেন। চীনের নির্বাহী ভাইস প্রিমিয়ারও অধিবেশন চলাকালে তার সঙ্গে যোগ দেবেন। বৈঠক শেষে দুই দেশ একটি যৌথ বিবৃতি দেবে।
বাংলাদেশে সোলার প্যানেল উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীনা কোম্পানি ‘লোংগি’
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে চিনের রাষ্ট্রদূত জানান, বিশ্বের বৃহত্তম সৌর প্যানেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘লোংগি’ বাংলাদেশে একটি অফিস স্থাপন এবং সোলার প্যানেল উৎপাদনে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, চীনের বেশ কয়েকটি শীর্ষ সোলার প্যানেল নির্মাতা বিনিয়োগের সুযোগ অনুসন্ধানের জন্য ডিসেম্বর বাংলাদেশ সফর করে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রদূত বলেন, তারা খুব শিগগিরই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে। চীনের একটি নিবেদিত রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল শিগগিরই কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রফেসর ইউনূস বাংলাদেশে আরো চীনা বিনিয়োগকারীকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, যেসব কোম্পানি পশ্চিমা দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানি করতে চায়, বাংলাদেশ তাদের জন্য শীর্ষ উৎপাদন কেন্দ্র হতে পারে। তিনি চীনের হাসপাতাল চেইনগুলোকে এখানে শীর্ষস্থানীয় ক্লিনিক স্থাপন অথবা বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে স্বাস্থ্যসেবাসুবিধা গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশের ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন। চীনের হাসপাতাল চেইনগুলো এখন এখানে হাসপাতাল নির্মাণের অনন্য সুযোগ পেয়েছে।