মরিয়ম লিপি
সেই মুখটি এখনো ভেসে উঠে,
ভুলতে দেয়নি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার মূহুর্তকে,
চোখের সামনে তোমার শেষ নিশ্বাস চলে গিয়েছিল।
ঠিক তখনি মাগরিবের আযান দিচ্ছিল
মগবাজার রাশমনো হাসপাতালের পাশেই!
এভাবে চলে যাবে বুঝার বয়স হয়নি তখনো,
তোমার লিভার সিরোসিস হয়েছিল তাই পেটটা ফুলে গিয়েছিল,
তুমি একটা ইজি চেয়ারে বসে প্রতিদিন রৌদ্র নিতে,
যখন সুস্থ ছিলে রুগি দেখে রাত্রে আমাদের সব ভাই বোনদের ঘুম থেকে তুলে মজার খাবার আনতে খাওয়ার জন্য ডাকতে।
মনে পরে প্রাই ইগলু আইস্ক্রিম আনতে কাগজের বড় প্যাকেটে,তখন বক্স করেনি কোম্পানি গুলোতে।
ছুটির আগের দিন বাসায় অনেক রাত্রে তুমি,বড় আপা,মেঝো আপু,আম্মা আর বড় ভাইয়া ক্যারাম বোর্ড খেলতে,
মনে পরে কোরবানির সময় গরু, ছাগল হাট থেকে আনবে?
কখন আসবে সেই অপেক্ষায় রইতাম।
হঠাৎ করেই আম্মাকে টেলিফোন করে বলতে তোমার শালিদের দাওয়াত করেছ,
বাজার নিয়ে আসছ বাড়ি ভর্তি খালা মামাদের মেলা বসে যেতো।
মনে পরে ফলের মাসে আর পিঠার মাসে আমাদের বাড়িতে গমগম করতো মাসব্যাপী।
এখন বাবা তুমি যাওয়ার পর আর এরপর আম্মা যাওয়ার পর সেই আয়োজন আর হয়নি!
বাড়িতে হয়না আর গমগম আত্মীয় স্বজনদের ভীর!
তোমার ৫ই ফেব্রুয়ারিতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার পর আর কেউ অনেক রাত্রে এসে ডেকে তুলেনা মজার খাবার খাওয়ার জন্যে,
কেউ খাটের নীচ ভরে ফল আনেনা!
ঠিলা ভরা গূঢ় আনেনা!
লিপু বলে কেউ ডাকেনা,
জ্বর এলে অভিমান করে বসে থাকিনা না খেয়ে!
তোমার চলে যাওয়া কেড়ে নিল আমার মায়ের
নাক ফুল আর হাতের চুরি গুলোকে!
প্রাণ খোলা হাসি দেখেছি মায়ের মুখে তুমি চলে যাওয়ার বহু বহু বছর পরে!
বিধবার মুখ দেখেছি প্রথম তোমার শেষ নিশ্বাসে!
ভানূর কৌতূক আর বাজেনি সেই টেপরেকর্ডারে!
সব কিছু থামিয়ে দিয়ে চলে গেলে আমাদের এতিম করে,
সময় তো হয় নি তখনো শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার জন্যে?
মাত্র বয়স হয়েছিল ৪৪ কি ৪৫ জানুয়ারির ৩ তারিখে!
সবার বাবাকে এখনো দেখি আছে তাদের পাশে ছায়া হয়ে,
তুমিও আছো ঐ আকাশে আমাদের বটগাছ হয়ে??