নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও জাতীয় রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে খালেদা জিয়া নিয়মিতভাবে ড. মাহবুব উল্লাহর পরামর্শ নিতেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামো, গণতন্ত্রের পথরেখা, অর্থনীতি ও সাংবিধানিক সংস্কার, এসব প্রশ্নে খালেদা জিয়ার সবচেয়ে বিশ্বস্ত উপদেষ্টাদের একজন ছিলেন তিনি।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাহবুব উল্লাহর জন্মদিন উপলক্ষ্যে বই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, যখনই দেশনেত্রী কোনো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় বিষয়ে গভীর আলোচনা করতে চাইতেন, তিনি ড. মাহবুব উল্লাহকে ডেকে পাঠাতেন। খালেদা জিয়া তার মতামতকে অত্যন্ত মূল্য দিতেন। রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণে তার চিন্তা ও পরামর্শ সবসময় গুরুত্ব পেয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপির জাতীয় পুনর্গঠন পরিকল্পনা ‘মিশন-২০৩০’ এর মূল দৃষ্টিভঙ্গি, রাজনৈতিক সংস্কার, সাংবিধানিক রূপরেখা এবং অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরিতে চিন্তা-ভাবনা বিশেষ ভূমিকা রেখেছে মাহবুব উল্লাহ।
ফখরুল বলেন, আমরা যে রাজনৈতিক রূপান্তরের নথি তৈরি করেছি, তার মূল ভিত্তিগুলো এসেছে তার বিশ্লেষণ ও দর্শন থেকে। তিনি রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক, বৈষম্যবিরোধী ও নাগরিক-অধিকারভিত্তিক রূপে কেমন দেখতে চান, সেসবই আমাদের পরিকল্পনায় প্রতিফলিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালের ফ্রন্ট গঠন থেকে শুরু করে নির্বাচন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের প্রতিটি পর্যায়ের পরামর্শ ও কৌশল তৈরিতেও তিনি সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। তিনি শুধু একজন বুদ্ধিজীবী নন, তিনি ছিলেন নীতি-নির্ধারণের এক শক্তিশালী আলো।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে খালেদা জিয়া নিয়মিতভাবে তার সঙ্গে আলোচনা করতেন। বাংলাদেশের রাজনীতি, গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা নিয়ে তিনি যে দূরদর্শিতা দেখিয়েছেন, তা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। তার প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতেও দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় দিকনির্দেশনা দেবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, আজকে যে বাংলাদেশপন্থী রাজনীতির আবহাওয়া শুরু হয়েছে তার ভীত মাহবুব উল্লাহর মতো মানুষেরা তৈরি করে দিয়েছেন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, দেশের রাজনীতিতে গুরুতর একটা পরিবর্তন হয়েছে। আমরা একটা ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত হয়েছি। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, ধর্মের নামে বা কখনও অন্যান্য মাধ্যমে আমাদের উপর নতুন করে জোর-জবরদস্তিমূলক শাসন চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিরোধের বিষয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা তারাই রাজনীতিতে আছি যারা জুলাইয়ের পক্ষে ছিলাম। কিন্তু আমাদের মধ্যে এখন বিভক্তি স্পষ্ট। এটা যেন মারামারির পর্যায়ে না যায় সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা একটা রুপান্তর মুহূর্তে আছি। এখন গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি মারামারি করলে আম-ছালা সবই যাবে।
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, আপনারা আমার জন্য প্রার্থনা করবেন। আজকে আমার ৮১তম জন্মদিন ও ৮০ তম জন্মবার্ষিকী। আমরা অনেক কিছু দেখিছি, আরও অনেক কিছুই দেখার আছে। সেই দেখাটা যেন ভালো হয়। এ দেশের মানুষ অনেক আত্মত্যাগ করেছে; সবই একটা ভালো ও সুখের দিন দেখার জন্য। আমরা যেন সেই দিনটা পাই, কোনো অনাচার-অত্যাচার যেন আমাদের সমাজে না থাকে, সেই প্রত্যাশা করবো।
দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক ও কবি আব্দুল হাই শিকদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন– অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, অধ্যাপক আহমদ কামাল, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা হুসাইন জিল্লুর রহমান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, এ এম এম বাহাউদ্দীন, অধ্যাপক নিলুফার সুলতানা প্রমুখ।