জাতির সংবাদ ডটকম।।
বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি দেশকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়। তিনি বলেন বর্তমান সরকারের সময়ে সাগর-রুনি দম্পতিসহ অন্তত ৫০জন সাংবাদিক খুন হয়েছে। এসব হত্যার কোন বিচার হয় না। সাংবাদিক হত্যা নির্যাতনের ব্যাপারে সরকারের নীরবতা রহস্যজনক। সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন ৯৫ বার পেছানোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, একটি সভ্য দেশে এটা কল্পনাও করা যায়না।
আজ শনিবার বিকেলে গাজীপুর থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজকের জনতার সদ্য প্রয়াত সম্পাদক ওগাজীপুর মহানগর বিএনপির আহবায়ক সোহরাব উদ্দিনের স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সাংবাদিক ইউনিয়ন গাজীপুর (জেইউজি), নগরীর হাবিব উল্লাহ স্মরণির ইকবাল কুঠির প্রাঙ্গনে এ সভার আয়োজন করে। জেইউজি সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ গাজীপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আসাদুজ্জামান আকাশ ও জেইউজি’র কোষাধ্যক্ষ এস এম হাবিবের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট চিকিৎসক ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মাজহারুল আলম,বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ গাজীপুর জেলার সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি রাশেদুল হক, গাজীপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মুকুল কুমার মল্লিক, দৈনিক বাংলাভূমির সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজহার, জেইউজি’র সহসভাপতি শেখ আজিজুল হক, গাজীপুর জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অ্যাডভোকেট নাছির উদ্দিন, জেলা যুবদলের আহবায়ক আতাউর রহমান মোল্লা, অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম মোল্লা প্রমুখ।
পেশাজীবিদের এ নেতা বলেন, ফ্যাসিবাদ দেশকে এমনভাবে আঁকড়ে ধরেছে বিদেশে অবস্থান করেও মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পাওয়া যায় না। দেশের বর্তমান এই অসভ্য শাসন ব্যবস্থায় অনেক কষ্ট নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন সোহরাব উদ্দিন। তিনি বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা হয়। এই ভুয়া মামলা নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখিও হয়। আমরা মনেকরেছিলাম এ নোংরা কাজটি যে সব পুলিশ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেটাতো করেনি উল্টো ওই মামলায় সোহরাব ভাইকে জামিন না দিয়ে জেলে পাঠায়। সেখানে তিনি আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তিনি জামিনে মুক্ত হওয়ার কয়েকদিনের মাথায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যু বরণ করেন।
একই সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মাজহারুল আলম বলেন, মরহুম সোহরাব উদ্দিন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতির সাথে তিনি কখনই আপস করতেন না। তিনি তার পত্রিকার মাধ্যমে অনেক পেশাদার সাংবাদিক তৈরি করেছেন, যারা দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখছেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাদের গনি আরো বলেন, দেশে ফ্যাসীবাদী শাসন চলছে। যেখানে মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর কোনো গ্যারান্টি নেই। ইজ্জত আব্রæর কোনো নিরাপত্তা নেই। পথে ঘাটে পরিবহনে নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত ৯৫ বার পেছানো হয়েছে, এটা কি কোনো সভ্যতার পরিচয় হলো ? অবিচার-কুবিচার রাষ্ট্রকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। দখলদার সেনা শাসিত সরকারের সময় সকল রাজনৈতিক দলের নেতাদের নামে মামলা দিয়ে দেশকে রাজনীতিশূন্য করার চক্রান্ত হয়েছিল। শেখ হাসিনাসহ সরকারিদলের সকলের মামলা প্রত্যাহার হলেও খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মামলা রেখে দেয়া হয়। সেই মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে জেল জরিমানা ও তারেক রহমান-জোবাইদা রহমানের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেয়া হলো। যত অসভ্য কাজ আছে সব এই সরকারের দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে। মানবিক রাষ্ট্র চাইলে, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য দেশকে বাসযোগ্য করতে চাইলে ফ্যাসিবাদকে না বলতে হবে। কারণ, ফ্যাসিবাদ কাউকে বাঁচতে দেয় না, কাউকে বাঁচতে দেবেও না। মনুষ্য বাসযোগ্য দেশ গড়তে হলে ফ্যাসিবাদকে অবশ্যই না বলতে হবে।
উল্লেখ্য, সোহরাব উদ্দিন গাজীপুর মহানগর বিএনপির আহবায়ক ছিলেন এবং চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার সক্রিয় ভূমিকার কারণে সরকারের হয়রানির শিকার হন। চিকিৎসার জন্য বিদেশে অবস্থানকালেও তাকে গায়েবি মামলার আসামী করা হয়। দেশে ফিরে চিকিৎসার যাবতীয় প্রমাণাদি দেখনোর পরও আদালত জামিন না দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠান। জামিনে মুক্ত হওয়ার সপ্তাহ খানেক পর তিনি স্টোক করেন। ২৩ দিন রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় তিনি মারা যান। তিনি রয়েল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম বাবুলের সহোদর ছোট ভাই।