বিপিএলের জমি দখলের চেষ্টা, সিটিমেড পূর্বাচল ভ্যালির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ

শনিবার, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪

 

এ এফ এম রাসেল পাটোয়ারী ।।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার আমলাবো ও নরাবো এলাকায় বিপিএল হাউজিংয়ের কেনা জমিতে নৌবাহিনীর লোগো সম্বলিত সাইনবোর্ডলাগিয়ে অবৈধভাবে জমি দখলের চেষ্টা এবং প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে সিটিমেড পূর্বাচল ভ্যালি নামক একটি হাউজিং কোম্পানির বিরুদ্ধে।

 

জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের কুশাবো এলাকায় বায়োফার্মা ও বায়োগ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ‘বিপিএল হাউজিং লিমিটেড’ প্রায় ১০০ বিঘা জমি ক্রয় করে একটি আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিথযশা

 


পেশাজীবীদের কাছে ৩০০ প্লট বিক্রি করে। বরাদ্দপ্রাপ্তদের অনেকেই তাদের জমিতে বাড়ি-ঘর নির্মানের প্রস্তুতি শুরু
করেছে। প্রকল্প এলাকায় বিভিন্ন অবকাঠামোগত কাজ করছে বিপিএল হাউজিং। তাছাড়াও সেখানে একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল করার পরিকল্পনাও আছে তাদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, সম্প্রতি বিপিএল হাউজিংয়ের নির্মিয়মান এই প্রকল্প এলাকায় ‘সংরক্ষিত এলাকা-নেভাল অফিসার্স
হাউজিং স্কিম’ লিখে বেশ কয়েকটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয় ‘সিটিমেড পূর্বাচল ভ্যালি’ নামক অন্য একটি হাউজিং কোম্পানি। এরপর প্রকল্পের প্লট গ্রহীতাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এ অবস্থায় বিপিএল হাউজিংয়ের পক্ষ থেকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি নৌবাহিনী প্রধানকে চিঠি এবং ৯ ফেব্রুয়ারি রূপগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়, যার জিডি নং- ৪২২, তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪। একইসঙ্গে সিটিমেড পূর্বাচল ভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাউছার হোসেন ভূঁইয়াকেও একটি চিঠি দেয়া হয়।

সিটিমেড পূর্বাচল ভ্যালির মালিককে ব্রোকার ও নামসর্বস্ব জমি ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে তাদের প্রতারণা থেকে সাবধান থাকতে নৌবাহিনী প্রধানকে দেয়া বিপিএল হাউজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লকিয়ত উল্যা স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, সাইনবোর্ড সর্বস্ব এ কোম্পানিটি বিক্রেতা সেজে নৌবাহিনীর মতো একটি দেশপ্রেমিক সূশৃঙ্খল বাহিনীর কাছে প্রতারণার ফাঁদ পেতে অন্যের জমি বিক্রির ষড়যন্ত্র করছে।

এসব সাইনবোর্ড লাগানোর মাধ্যমে তারা অহেতুক ঝামেলা সৃষ্টি করে দেশপ্রেমিক এই বাহিনী সম্পর্কে জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া তৈরী করছে এবং প্লট মালিকদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, যাতে একটি সুসজ্জিত বাহিনীর সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

চিঠিতে তিনি প্রতারকদের খপ্পরে পা দিয়ে অন্যের রেজিস্ট্রিকৃত জমি না কিনতে অনুরোধ এবং সেখানে স্থাপিত অবৈধ সাইনবোর্ডগুলো দ্রুত সরিয়ে নিতে নৌবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। একইসঙ্গে বাহিনীটির আবাসন প্রকল্পে সহযোগীতারও প্রস্তাব দেন বিপিএল হাউজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্পের একজন প্লট গ্রহীতা চিকিৎসক বলেন, আমার সন্তানদের সুন্দর একটি আবাসিক ভবিষ্যতের আশায় এবং অবসর জীবনটা শান্তিতে কাটানোর আকাঙ্খা নিয়ে একটি স্বপ্নের নীড় গড়ে তোলার লক্ষ্যে জীবনের সব সঞ্চয় বিনিয়োগ করে বিপিএল হাউজিংয়ের মতো একটি নির্ভেজাল ও স্বনামধন্য কোম্পানি থেকে প্লটটি কিনেছিলাম। কিন্তু আমাদের চোখের সামনে রাতারাতি আরেকটি কোম্পানির সাইনবোর্ড দেখে আমাদের স্বপ্ন ভঙ্গের
আশঙ্কায় আমরা রীতিমত আতঙ্কের মধ্যে আছি। এর একটা আশু সমাধান হওয়া উচিত।

বিপিএল হাউজিংয়ের ক্রয়কৃত জায়গায় সাইনবোর্ড ঝুলানো প্রসঙ্গে সিটিমেড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাউছার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, অন্য কারো জায়গায় নয়, নিজেদের খরিদকৃত জায়গার উপরই আমরা সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছি।

পরবর্তীতে তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে এবং স্থানীয় পৌর কাউন্সিলরের মধ্যস্ততায় তাদের প্রকল্প অফিসের সামনে থেকে আমরা ৩টি সাইনবোর্ড সরিয়ে নিয়েছি।

বিপিএল হাউজিংয়ের প্রজেক্টের ভিতরেই তাদের ৫.৬ ডিসিমেল জায়গা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, রূপগঞ্জ থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি কিন্তু তারা তাতে সাড়া দেননি। তারা কাগজপত্র নিয়ে আমাদের সঙ্গে বসুক, তাহলে সবকিছু পরিস্কার হয়ে যাবে।

সমঝোতা বা আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগেই নিজেদের জায়গার উপর থেকে সাইনবোর্ড অপসারন করা আপনাদের
দূর্বলতাকে আড়াল করতে পিছু হটা নয় কী? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের ব্যবসার ক্ষতির কথা চিন্তা করে
আমরা নিজেদের সাইনবোর্ড সরিয়েছি।
বিপিএলের দেয়া চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এটি আমার কোম্পানিকে নয়, ব্যক্তিগতভাবে আমাকে দেয়া হয়েছে।

তারপরও এর আইনগত দিক পর্যালোচনা করে আমারা শিগগিরই এই চিঠির জবাব দিব। বিপিএল হাউজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লকিয়ত উল্যা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অন্যতম
প্রতীক এবং আমাদের গৌরবের প্রতিষ্ঠান দেশপ্রেমিক নৌবাহিনীর নাম ব্যবহার করে কিছুব্যক্তি বা গোষ্ঠী নিজেদের অশুভ স্বার্থকে চরিতার্থ করার মিশনে সাইনবোর্ড ব্যবসার নামে এ ধরনের জায়গা দখলের মহড়া রাষ্ট্র ও জনগণের সঙ্গে ভয়াবহ প্রতারণার শামিল। সঠিকভাবে তদন্তের মাধ্যমে এর সঙ্গে দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত
ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।

ডা. লকিয়ত উল্যা বলেন, বিপিএল হাউজিং ২০১০ সাল থেকে অত্যন্ত সুনাম ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে আবাসন ব্যবসা শুরু করে এবং এ পর্যন্ত ১২৪ বিঘা জমি ক্রয় করে। এরমধ্যে ৯৪ বিঘা জমিতে আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৩০০ গ্রাহকের মধ্যে প্লট বিক্রি করে।
যাদের অধিকাংশই চিকিৎসক, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষক, আইনজীবি, সাংবাদিক এবং বিভিন্নপেশাজীবি ব্যক্তিবর্গ। এসব বরেণ্য ব্যক্তির জন্য একটি মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা এবং তাদের জন্য আবাসন তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি দুষ্টচক্র প্লট গ্রহীতাদেরকে বিভ্রান্ত করে বিপিএল হাউজিংকে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র করছে।
রূপগঞ্জ পৌরসভার স্থানীয় কাউন্সিলর রোকন উদ্দিন বলেন, শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিপিএল হাউজিং কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানিকে ঠকিয়ে বা প্রতারণা করে এক অজুতাংশ জায়গাও ক্রয় করেনি। ন্যায্যমূল্যে জায়গা ক্রয় করে চিকিৎসকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করছে তারা। কোম্পানির অধিকাংশ মালিক চিকিৎসক হওয়ায় তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা,দুর্বলতা ও সরলতাকে কাজে লাগিয়ে একটি মহল প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তা
নস্যাৎ করতে নানা ফন্দি-ফিকির করছে।

রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, আমাদের থানায় বিপিএল হাউজিংয়ের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত
একটি জিডি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা যায়, প্রকল্প এলাকার ৫৫ দাগে ৭৮ শতাংশ জায়গার মধ্যে ৬৬ শতাংশ জায়গা বিপিএল হাউজিং ক্রয় করে। বাকি জায়গা সড়ক ও জনপদ বিভাগ রাস্তার জন্য অধিগ্রহণ করে নেয়। বিপিএল সাইট অফিসের সামনে ৫৯ দাগে ৪৫ শতাংশ জায়গার মধ্যে ৪৪ শতাংশ জায়গা তারা ক্রয় করে। ১ শতাংশ জায়গার ওয়ারিশ না পাওয়ায় ক্রয় করতে পারেনি।
আর এই ১ শতাংশ জায়গা সিটিমেড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাউছার হোসেন ভূঁইয়া অন্য ওয়ারিশ থেকে ক্রয় করে নেয়। যা এখন বিপিএল হাউজিংয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।