বেরোবিতে নানা আয়োজনে রোকেয়া দিবস ২০২৫ পালিত

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ৯, ২০২৫

 

বেরোবি প্রতিনিধি।।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে রোকেয়া দিবস-২০২৫ পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার (০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫) সকালে প্রশাসনিক ভবনের সামনে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শওকাত আলী । এরপর বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) এর সদস্য প্রফেসর ড. মাছুমা হাবিব। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আজম এবং গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. হোসেন উদ্দিন শেখর। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শওকাত আলীসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ শোভাযাত্রায় অংশ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ, দপ্তর ও আবাসিক হলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। শোভাযাত্রাটি শহীদ আবু সাঈদ চত্বর মডার্ন মোড় ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক মাঠে এসে শেষ হয়।
সকাল সাড়ে ১০টায় স্বাধীনতা স্মারক মাঠে রোকেয়া দিবস-২০২৫ উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মাছুমা হাবিব। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের ইতিহাসে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের অবদান চিরস্মরণীয়। রোকেয়া দেখানো পথ ধরে আজ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে নারী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রত্যন্ত অঞ্চলেও নারী শিক্ষার প্রসার ঘটেছে। নারী জাগরণ ও নারীশিক্ষার প্রসারে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আগামী দিনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
আলোচনা সভায় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আজম প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি বলেন, লেখক হিসেবে রোকেয়া সাখাওয়াত ছিলেন বাস্তবতবাদী । এটি রোকেয়ার রচনা বা কাজের প্রধান সূত্র। রোকেয়া তুলনামূলক কম প্রবন্ধ লিখলেও বাংলা ভাষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং খুবই ব্যক্তিত্বসম্পন্ন স্বতন্ত্র ধারার প্রাবন্ধিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি বলেন, নারীকে স্বাধীন, স্বশিক্ষিত ও আত্মনির্ভর মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাঁর ভূমিকা অনন্য।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বিশ শতকের প্রথম দিকে নারীসমাজে আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষার ব্যাপক প্রচার ও প্রসারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে রোকেয়া তাঁর জ্ঞানের মাধ্যমে সমাজে নিজেকে তুলে ধরতে এবং আদর্শের প্রতিফলন ঘটাতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নতুন প্রজন্মের মাঝে রোকেয়া চেতনা ও আদর্শ ছড়িয়ে দিতে রোকেয়া দিবস আগামীতে আরও বড় ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্য বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শওকাত আলী বলেন, নারী জাগরণ, শিক্ষার প্রসার, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার ও সাম্যের চেতনায় রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন যে স্বপ্ন লালন করেছিলেন তারই ধারাবাহিকতায় আজ নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন। বেরোবি উপাচার্য বলেন, মহীয়সী এই নারীর নামে প্রতিষ্ঠিত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর আদর্শকে ধারণ করে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন রোকেয়া দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক প্রফেসর ড. মোঃ তাজুল ইসলাম, বাংলা একাডেমির সচিব ড. মোঃ সেলিম রেজা, জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান কুন্তলা চৌধুরী, বেরোবি ইন্সটিটিউট অব রিসার্চ এক্সিলেন্স এর সিনিয়র রিসার্চ অফিসার মেহজাবীন ইলাহী, বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুর রহমান সুমন, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে হানি জোহরা তানিয়া প্রমুখ। রোকেয়া দিবস ২০২৫ উপলক্ষে প্রকাশিত ’রোকেয়া-পাঠ’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ। ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. মোঃ ইলিয়াছ প্রামানিক ও শহীদ ফেলানী হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মোছাঃ সিফাত রুমানার আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন। এছাড়াও রোকেয়া দিবস উপলক্ষে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।