ভারতকে এবার পারমাণবিক হামলার হুমকি দিলেন পাকিস্তানের রেলমন্ত্রী

সোমবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পেহেলগামে ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তৃতীয় বারের মতো গোলাগুলি হয়েছে। সীমান্তে থমথমে পরিস্থিতির মধ্যে ভারতকে পারমাণবিক হামলার হুমকি দিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির রেলমন্ত্রী হানিফ আব্বাসী বলেছেন, ভারতের দিকে ১৩০টি পারমাণবিক অস্ত্র তাক করে রেখেছে পাকিস্তান। অন্যদিকে, আরব সাগরে জাহাজ বিধ্বংসী মিসাইলের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে ভারতের নৌবাহিনী। বিশ্লেষকদের শঙ্কা, যে কোনো মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরু হতে পারে।

আজ সোমবার ভারতীয় গণমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান।

মোহাম্মদ হানিফ আব্বাসি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ১৩০টির বেশি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র এমনি এমনি সাজিয়ে রাখেনি পাকিস্তান। শুধু ভারতের জন্যই রাখা হয়েছে এগুলো।

গত শনিবার ভারতকে সরাসরি উদ্ধৃত করে পাকিস্তানি এই মন্ত্রী আরও বলেন, পাকিস্তানের সব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রই তোমাদের (ভারতের) দিকে তাক করা আছে।

গার্ডিয়ান বলছে, আব্বাসির এমন মন্তব্য দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে। এর আগে, তিনটি যুদ্ধ করেছে ভারত ও পাকিস্তান। এর মধ্যে দুটিই কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে। উভয় দেশই পুরো কাশ্মীরকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে থাকে। তবে, বর্তমানে দুই দেশ কাশ্মীরের ভিন্ন ভিন্ন অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে।

এছাড়াও আরও কয়েকবার যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল ভারত-পাকিস্তান। এ কারণে হিমালয় অঞ্চলকে বিশ্বের ‘সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান’ বলে অভিহিত করেছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন।

পাকিস্তানের ‘ফুল স্পেকট্রাম ডিটারেন্স’ নামক সামরিক নীতিমালায় প্রচলিত হুমকিকে প্রতিরোধ করতে ট্যাকটিক্যাল পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, ভারতের ‘কোল্ড স্টার্ট ডকট্রিন’-এর নকশা করা হয়েছে দ্রুত হামলা চালানোর কথা মাথায় রেখে। এই বিপরীতমুখী কৌশলগুলোর কারণে যেকোনো সংঘর্ষ দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও লেখক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, জনগণের চাপ, গত সপ্তাহের হামলার ভয়াবহতা এবং প্রতিরোধ শক্তি পুনর্গঠনের ইচ্ছাকে বিবেচনায় নিয়ে দিল্লির দিক থেকে কোনো না কোনো ধরনের সামরিক প্রতিক্রিয়া দেখানো হতে পারে। আর যদি তা ঘটে, তাহলে পাকিস্তান নিজেদের দুর্বল দেখাতে চাইবে না। তারা অবশ্যই পাল্টা জবাব দেবে।

তবে কুগেলম্যান এটাও মনে করেন যে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা নেই। ভারত কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেও তারা আসলে ভারতবিরোধী সন্ত্রাসীদের দুর্বল করা এবং প্রতিরোধ শক্তি পুনরুদ্ধার করার মতো সীমিত বিকল্প পথগুলোর কথা ভাবছে।

প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় পর্যটকশ ২৬ জন নিহত হন। পরোক্ষভাবে পাকিস্তান এ হামলায় জড়িত, এমন অভিযোগ তুলে বুধবার দেশটির সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় দেশটি। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। স্থগিত করে দেওয়া হয় ভারতের সঙ্গে সবরকম বাণিজ্যও।

এছাড়া, সিন্ধু নদের পানি ইস্যুতে কড়া বার্তা দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। স্পষ্ট ভাষায় তিনি ঘোষণা দেন, যেকোনো মূল্যে নিজের পানির অধিকার রক্ষা করবে পাকিস্তান।

সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের জেরে ভারতকে হুমকি দেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা ও দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টোও। তিনি বলেন, সিন্ধু দিয়ে হয় পানি বইবে, না হয় ভারতীয়দের রক্ত বইবে।

অন্যদিকে পেহেলগাম হামলায় জড়িত ও মদতদাতাদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি সন্ত্রাসী ও তাদের মদতদাতাদের খুঁজে বের করব এবং এমন শাস্তি দেব, যা তারা কল্পনাও করতে পারবে না। সময় এসেছে সন্ত্রাসের আশ্রয়স্থল সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার। ১৪০ কোটি মানুষের দৃঢ় সংকল্প সন্ত্রাসের মদতদাতাদের চূর্ণ করে দেবে।