জাতির সংবাদ ডটকম।।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেছেন, শ্রমের বিনিময়ে ন্যায্য মজুরি পাওয়ার জন্য শ্রমিকরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দেশের গার্মেন্টস সেক্টর অর্থনীতির ভারসাম্য রক্ষা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের গার্মেন্টস সেক্টর ধ্বংস করতে দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। একশ্রেণীর অসাধু লোকেরা ঠুনকো অজুহাতে বিভিন্ন আন্দোলন করে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করার চক্রান্ত করছে।
আজ ৫ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার, সকালে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন এর কেন্দ্রীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হারুন অর রশিদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি আলহাজ্ব মুহাম্মাদ আমিনুল ইসলাম,
সহকারী সেক্রেটারি এইচ এমন রফিকুল ইসলাম, আলহাজ্ব মুহাম্মাদ হায়দার আলী, হাফেজ শাহাদাত হোসেন প্রধানিয়া ও মুহাম্মাদ মাহবুব আলম প্রমুখ।
শায়খে চরমোনাই বলেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশকে ধ্বংস করার চক্রান্তের অংশ হিসেবে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাদের মজুরি ঠিকভাবে দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, গার্মেন্টস সেক্টর পরিচালনার বর্তমান আইন শ্রমিকদের জন্য কল্যাণকর নয়। যার কারণে শ্রমিকদেরকে অবৈধভাবে অপসারণ করা হয়। কোন কোন গার্মেন্টস শ্রমিকরা জানেই না কখন তাদেরকে বিদায় নিতে হবে। এ কারণে অনেক শ্রমিক সন্তুষ্টির সাথে কাজে মনোনিবেশ করে না। যে কারণে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি বলেন, শ্রমিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি না করে জুলুম বন্ধ করে যথাযথ অধিকার দেয়া হলে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে শ্রমিক, মালিক ও দেশ লাভবান হতো। শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। শ্রমিকদের জন্য প্রয়োজনীয় মানসম্পন্ন আবাসন ও পরিবহন ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। বিশেষ করে কলকারখানায় নারী শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা থাকা দরকার। তিনি মালিক শ্রমিকদের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনার উপর গুরুত্বারোপ করেন। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে গার্মেন্টস সেক্টরের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। শ্রমিকরা কোন অবস্থাতেই যাতে অধিকার বঞ্চিত না হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। অসুস্থ শ্রমিক বা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতার অঙ্গীকার থাকতে হবে।
চামড়া শিল্পের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে দেশের চামড়া খাতকে ধ্বংস করা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরাসরি বা ইউরোপে চামড়া বিক্রি করতে পারে না, বাংলাদেশকে ভারত হয়ে চামড়া বিক্রয় করতে হয় বলে ট্যানারি মালিকরা জানিয়েছেন। তিনি এজন্য চামড়া রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রচলিত বিধি-বিধান পরিবর্তন করতে গুরুত্বারোপ করেন। গার্মেন্ট শিল্প ধ্বংস প্রায় গার্মেন্টস শিল্প যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে দিকে নজর দেয়া জরুরি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেছেন, ভারতে আমাদের উপ-হাইকমিশন আক্রমণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের পতাকাকে অপমান করা হয়েছে। ভারতে থাকা আমাদের দেশের কুটনীতিবিদদেরকে আক্রমণের কারণ কি? ভরত কি বাংলাদেশের পায়ে পাড়া দিয়ে যুদ্ধ বাজাতে চায়? ভারত যদি যুদ্ধ বাজাতেই চায় তবে তারা আমাদের কেমন বন্ধু? ভারত আমাদের কেমন বন্ধু তা মমতা ব্যানার্জির বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে। তার বক্তব্য শত্রুতা প্রমাণিত হয়েছে।
ইসকন সম্পর্কে তিনি বলেন, ইসকন হিন্দুদের কোন ধর্মীয় সংগঠন নয়। এটা সন্ত্রাসীদের সংগঠন। দেশের হাজারো হিন্দু দেশপ্রেমিক। তারা দেশ নিয়ে ভাবে। দেশের উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করে। কিন্তু ইসকন দেশ নিয়ে নয় বরং দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ইসকনের সদস্যরা বাংলাদেশের নাগরিক হলে বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করতে ভারতের কাছে দাবি জানাতো না। তারা বাংলাদেশের অফিস আদালত ও আইনের প্রতি আস্থাশীল নয়। তারা অন্য কোন দেশের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে কিনা তা তদন্ত করে খুঁজে বের করা দরকার।
মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেন, ভারত বাংলাদেশের মানুষের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে। বৃটিশ ও পাকিস্তানীরা ষড়যন্ত্র করে টিকতে পারেনি। ভারত ও কোন ষড়যন্ত্র করে টিকতে পারবে না। বাংলাদেশ কে নিয়ে ভারতের বক্তব্য আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বৃটিশকে ভয় পায়নি। পশ্চিম পাকিস্তানের কামান ও ট্যাংক ভয় পায়নি। আর বাংলাদেশের মানুষ ভারতকে ভয় পাওয়ার প্রশ্নই আসে না।
সম্মেলনে মুহাম্মাদ হারুন অর রশিদ কে সভাপতি ও হাজী মোঃ ফারুক হাওলাদার কে সাধারণ সম্পাদক করে গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলনের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।
গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন এর সভাপতি হারুন অর রশিদ বলেন, বৈষম্যের কারণে গার্মেন্টস শ্রমিকরা অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। ছাত্র শ্রমিক জনতার আন্দোলনে শ্রমিকরা রক্ত দিলেও সরকারে কোন শ্রমিক নেই। আমরা চাই সরকারে শ্রমিকদের প্রতিনিধি থাকবে।