ভ্যাট অব্যাহতি পুনঃবহালের দাবিতে পাদুকা প্রস্তুতকারক সমিতি

শনিবার, জানুয়ারি ২৫, ২০২৫

 

জাতির সংবাদ ডটকম।।

“প্লাস্টিক ও রাবারের তৈরি হাওয়াই চপ্পল এবং প্লাষ্টিক পাদুকা” (১৫০ টাকা মূল্য সীমা পর্যন্ত) উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি পুনঃবহালের জন্য জোর দাবি জানিয়েছে।

 

আজ রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাগর রূনি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির নেতারা জানান, পূর্বের ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা বাতিল করে ১৫% ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পাদুকা শিল্প মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

 

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্যঃ

সংবাদ সম্মেলনে সমিতির উপদেষ্টা জনাব সাখাওয়াত হোসেন বেলাল লিখিত বক্তব্যে বলেন, “প্লাস্টিক ও রাবারের তৈরি হাওয়াই চপ্পল এবং পাদুকার উপর ১৫% ভ্যাট আরোপ করার প্রস্তাব অত্যন্ত অযৌক্তিক। এটি কার্যকর হলে এই সাশ্রয়ী পণ্য সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। বিশেষত শ্রমজীবী, দিনমজুর, কৃষক, রিকশা-ভ্যান চালক এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায় এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। ভ্যাট অব্যাহতির ফলে সরাসরি পণ্যের উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গিয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় নিম্ম আয়ের ক্রেতা সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বিবেচনায় এতো উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের উদ্ধগতির মধ্যেও ১৫০/- (একশত পঞ্চাশ) টাকা মূল্যের রাবার ও প্লাস্টিকের চপ্পল সরবরাহ অব্যহত রেখেছে। এই কম উৎপাদন খরচের সুবিধা সরাসরি ভোক্তাদের কাছে পৌঁছেছিল, যার মাধ্যমে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ সাশ্রয়ী দামে প্রয়োজনীয় হাওয়াই চপ্পল ও পাদুকা ক্রয় করতে পেরেছেন। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য এই পণ্যগুলো অত্যাবশ্যকীয়, কারণ এগুলো ছিল তাদের জন্য সবচেয়ে সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য পাদুকা।”

 

 

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “এই পণ্যের মূল কাঁচামাল হচ্ছে পরিত্যক্ত রাবার ও প্লাস্টিকের চপ্পলজাতীয় অপচনশীল দ্রব্যাদি, যা সংগ্রহ করা হয় দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছিন্নমূল টোকাই ও অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাধ্যমে। সংগৃহীত এই সমস্ত অপচনশীল পরিত্যক্ত প্লাস্টিক ও রাবারের চপ্পল রি-সাইকেলিং করে পুনরায় উৎপাদন করা হয়। যা পরিবেশের ভারসাম্য তথা জমির উর্বরতা বৃদ্ধি এবং জলবদ্ধতা রোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। ভ্যাট অব্যাহতির ফলে তারা রিসাইক্লিং কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত করতে পেরেছিল।

 

এতে একদিকে যেমন উৎপাদন খরচ কমেছে, অন্যদিকে পরিবেশ দূষণ হ্রাস পেয়েছে।উক্ত বিবেচনায় ভ্যাট আইনের শুরু হতেই আমাদের উৎপাদিত প্লাস্টিক ও রাবারের পাদুকা ভ্যাট অব্যহতি সুযোগ দিয়ে আসা হয়। এই শিল্প দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাট অব্যাহতির আওতায় রয়েছে, যা পণ্য উৎপাদনের খরচ কমিয়ে গরিব জনগোষ্ঠীর জন্য সাশ্রয়ী দামে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করেছে। কিন্তু ভ্যাট আরোপ করা হলে পণ্য উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে এবং বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।”

 

মালিক সমিতি মনে করছে, গত দুই বছরের বেশী সময় ধরে দেশে যেখানে উচ্চ মূল্যস্ফিতি বিরাজ করছে সেখানে ভোক্তার কাছ থেকে কোন ভাবেই ১৫% ভ্যাট আদায় করা সম্ভব নয়। চাইলেই পণ্যের দাম বৃদ্ধি করা যায় না। অথচ বিগত সরকারের আমলে পরিষেবার ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে শ্রমিকদের মজুরি। দৈনন্দিন খাদ্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির জের তো আছেই। উচ্চ মূল্যস্ফিতির কারনে এমনেই ব্যবসা ৩০-৪০% কমে গিয়েছে। এই অবস্থায় ভ্যাট বাড়লে পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে। তিনি আরো বলেন, যেদিন থেকে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে সেদিন থেকেই এই পণ্যের ভ্যাট অব্যাহতি ছিলো। এমনকি রি-সাইকেলিং প্লাস্টিক হইতে তৈরিকৃত দানার কোন ভ্যাট নাই। কিন্তু এই পণ্যের উপর কেন বা কি কারনে ভ্যাট আরোপ হবে? অথচ রাবারের ও প্লাষ্টিকের চপ্পল রিসাইকেলিং এর মাধ্যমে উৎপাদন হয়ে থাকে। যা পরিবেশ দূষণ রোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। তাহলে এই পণ্যে ভ্যাট কেন?

 

ব্যবসায়ীদের মতে নি¤œ আয়ের এই পণ্যের উপর ভ্যাট ও করের বোঝা চাপানো হলে দেশের শ্রমজীবি ও নি¤œ আয়ের বৃহৎ জনগোষ্টি যথাঃ কৃষক-শ্রমিক, দিনমজুর, রিক্স্রা/ভ্যান ওয়ালা, ভিক্ষুক সহ প্রান্তিক জনগোষ্টি সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। যে হারে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে তাতে উক্ত পণ্য ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে যাবে। আর ভোক্তারা ক্রয় ক্ষমতা হাড়ালে এই পণ্যের অধিকাংশ কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। ব্যবসায়ীদের মতে ভ্যাট আইন/ ভ্যাট আরোপ আমরা সমর্থন করি। কিন্তু তা গরিব দুঃখিদের জন্য কোন ভাবেই না।

 

ভ্যাট আরোপের নেতিবাচক প্রভাব

১. উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি: ১৫% ভ্যাট আরোপ হলে উৎপাদন খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে, যা বিক্রির ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর চাপ সৃষ্টি করবে।

২. ক্রেতার ক্ষতি: নিম্ন আয়ের মানুষেরা এই পণ্য কিনতে অপারগ হবে।

৩. শিল্প ধ্বংস: অধিকাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে, যা ব্যাপক বেকারত্বের সৃষ্টি করবে।

৪. পরিবেশের প্রভাব:

প্লাস্টিক ও রাবার দিয়ে তৈরি হাওয়াই চপ্পল ও পাদুকা মূলত রিসাইক্লিং পদ্ধতির মাধ্যমে উৎপাদিত পরিবেশবান্ধব পণ্য। এই পণ্য উৎপাদনে প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয় পরিত্যক্ত রাবার ও প্লাস্টিক জাতীয় অপচনশীল দ্রব্য, যা স্বাভাবিকভাবে পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।সংগঠনের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়, এই পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় দুই দিক থেকে পরিবেশ রক্ষা সম্ভব হয়েছে। প্রথমত, টোকাই এবং অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য এই পরিত্যক্ত রাবার ও প্লাস্টিক সংগ্রহ করে, যা তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। দ্বিতীয়ত, এই অপচনশীল পণ্যগুলো পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য হিসেবে তৈরি হওয়ায় পরিবেশ দূষণ রোধে এটি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

 

ব্যবসায়ীদের দাবি ও আন্দোলন কর্মসূচি

সংগঠনটি সরকারের কাছে অতিসত্ত্বর ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। দাবি পূরণ না হলে শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন, অবস্থান ধর্মঘট এবং চূড়ান্তভাবে কারখানা বন্ধের মতো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবে তারা।

 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল কুদ্দুস (রানা), সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ রেজাউল করিম, সহ-সভাপতি আশরাফ উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান রহমান (সাজু), সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকুর রহমানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন পাদুকা প্রতিষ্ঠানের মালিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

 

পরিশেষে সংগঠনের নেতারা বলেন, “আমরা ভ্যাট আইন মানি, তবে তা অবশ্যই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বার্থ বিবেচনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই, এই ধরনের সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রত্যাহার করে দেশের পাদুকা শিল্প এবং সাধারণ জনগণের স্বার্থ রক্ষা করূন।” জুলাই-আগষ্ট অভ্যূত্থ্যানের বা বিল্পবের ফসলই কি তাহলে দরিদ্র শ্রেণীর উপর ভ্যাট আরোপ? আই.এম.এফ এর তথাকথিত চাপে ভ্যাট আরোপ করেছে তা গরীবদের উপর কেন?