মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী প্রেরণে সিন্ডিকেট চক্রের পুনরায় অপতৎপরতা বন্ধের দাবি 

বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ৩, ২০২৪

শাহজালাল (রাসেল)।।

০৩ অক্টোবর ২০২৪ ইং, বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, নজরুল হামিদ হলে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সী (বায়রা) এর আয়োজনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

 

বিগত সরকারের আমলে প্রত্যেক সেক্টরে বিভিন্নভাবে সিন্ডিকেট প্রথা তৈরি হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা বড় বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের খাত বৈদেশিক কর্মসংস্থান। যেখান থেকে প্রতি বছর প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। সে খাতকে চরমভাবে কলঙ্কিত করে সিন্ডিকেট চক্র। আপনারা জানেন মালয়েশিয়া সিন্ডিকেট চক্রের কারণে বার বার শ্রম বাজার বন্ধ হচ্ছে। অনিয়ম, দুর্নীতি ও অতিরিক্ত আভিবাসনের কারণে এই বছর ৩১ মে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ায় ৫০ হাজার কর্মী যেতে পারেনি। যার মধ্যে ১০ হাজার ছিল চূড়ান্ত ভাবে BMET সম্পন্ন করা। যার ফলে কর্মী ও এই সেক্টরের উদ্যোক্তরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 

সাবেক স্বৈরাচারী সরকারের মন্ত্রী এম পি ও নেতাদের নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন বায়রার সাবেক মহাসচিব জনাব রুহুল আমিন স্বপন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল অবঃ প্রাপ্ত মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, নিজাম হাজারী, বেনজীর আহমেদ, মহিউদ্দিন মাহ সহ অনেকের নাম ইতিমধ্যে উঠে এসেছে এবং কি পরিমান অনিয়ম দুর্নীতি ও টাকা পাচার হয়েছে প্রতিবেদনও আপনারা প্রকাশ করেছেন। আপনাদের পাশাপাশি ILO, IOM, জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল সংস্থা এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছেন।

 

মালয়েশিয়া সিন্ডিকেট এর কারণে কি কি ক্ষতি হয়েছেঃ-

 

কর্মীদেবকে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়েছে, যেখানে সিন্ডিকেটের চাঁদা ছিল জনপ্রতি ১,৫২,০০০ টাকা।

বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া উভয় দেশের সুনাম নস্ট হয়েছে।

সিন্ডিকেটের ১,৫২,০০০ টাকার অতিরিক্ত চাঁদার কারণে বড় বড় RBA কোম্পানি গুলো (যারা বিনা পয়সায় কর্মী নেয়) বাংলাদেশ থেকেও কর্মী না নিয়ে নেপাল থেকে নিয়েছে। অথবা অনেকে কর্মী নিতে পারেনি।

এই সেক্টরের ৯৫% রিক্রুটিং এজেন্সী বৈষমের স্বীকার হয়েছে।

সিন্ডিকেটের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে শ্রম বাজার বন্ধু হওয়ায় ৫০ হাজার কর্মী যেতে পারেনি।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এতকিছুর পরও স্বৈরাচারী সরকারের দোষর রুহুল আমিন স্বপন ও কাজী মফিজুর রহমানের নেতৃত্বে আবারো সিন্ডিকেট করার অপচেষ্টা চলছে। FWCMS System প্রতি লাইসেন্সকে (৩০,০০০* ১০০) ৩০ লক্ষ মায়োগ্রাম প্রদান করা তারই প্রমান।

 

মালয়েশিয়া সিন্ডিকেট কিভাবে হলো:-

 

দাতুশ্রী আমিনের মালয়েশিয়ান IT কোম্পানি Bestinet এবং এই কোম্পানির Manpower Recruitment Online পদ্ধতি FWCMS (Foreign workers centralized Management system), এই পদ্ধতির মাধ্যমে মালয়েশিয়া সরকারের সাথে শুধু মাত্র বিদেশ থেকে কর্মী আনয়নের অনলাইন সাপোর্ট এর জন্য চুক্তি হয় কিন্তু দাতুশ্রী আমিন নূর দুই দেশের সরকারের অসাধু লোকদের এবং বাংলাদেশে তার পার্টনার কহুল আমিন স্বপনকে ব্যবহার করে উক্ত পদ্ধতির অপব্যবহার করে কর্মী পাঠানোর সকল প্রক্রিয়া কন্ট্রোল করে অর্থাৎ FWCMS ব্যবহার করে ম্যানপাওয়ার ব্যবসায় লিপ্ত হয় উক্ত Fwcms online পদ্ধতির মাধ্যমে মালয়েশিয়া আরো ১৪ টি দেশ থেকে কর্মী নিলেও বাংলাদেশ ছাড়া কোনো দেশে কোন প্রকার সিন্ডিকেট করতে পারেনি।

 

বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া সরকারের মাধ্যমে সম্পাদিত এমওইউ (MOU) তে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সীর সিলেকশন করার জন্য মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয় কিন্তু কোনো প্রকার ক্রাইটেরিয়া ছাড়াই ঘুষের মাধ্যমে জনাব রুহুল আমিন স্বপন ও তার মালয়েশিয়ান পার্টনার দাতুশ্রী আমিন Fwcms system অপব্যবহার করে নিজেদের পছন্দ মত রিক্রুটিং এজেন্সী সিলেকশন করেন।

 

দাবীসমূহ:-

১. সিন্ডিকেটের মূল হোতা রুহুল আমিন স্বপনসহ সিন্ডিকেটের পরিকল্পনাকারী, বাস্তবায়নকারী, নিয়ন্ত্রণকারী আওয়ামীলীগ সরকারে জড়িত মন্ত্রী এমপি ও নেতাদের এখনো বিচারের আওতায় আনা হয়নি, অনতিলম্বে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

 

২. কোন ক্রমেই সাবেক স্বৈরাচারী সরকারের পদাংক অনুসরণ করে সিন্ডিকেটে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। যদি সিন্ডিকেট করার পুনরায় সুযোগ দেয়া হয় তাহলে বর্তমান সরকারের সাথে পূর্বের সরকারের কোন পার্থক্য থাকবেনা।

 

৩. দুই দেশের MOU সন্নিবেশিত বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সী মালয়েশিয়া সরকার সিলেকশন করার সুযোগ বাতিল করতে হবে। রিক্রুটমেন্ট এজেন্সী সিলেকশন করবে নিয়োগকর্তা। সিন্ডিকেট মুক্ত ভাবে সকল এজেন্সী কম খরচে বা বিনা খরচে কর্মী পাঠানোর জন্য মন্ত্রণালয় পক্ষ থেকে সেন্টাল অনলাইন পদ্ধতি সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

 

৪. সিন্ডিকেটের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে নির্দিষ্ট সময়ে যে সকল কর্মী যেতে পারেনি, তাদেরকে কম খরচে সিন্ডিকেট মুক্ত ভাবে পুনরায় মালয়েশিয়া পাঠানোর দাবি করছি।

 

৫. নেপালসহ অন্যান্য ১৩ টি দেশ থেকে মালয়েশিয়া যে প্রক্রিয়ায় কর্মী গ্রহণ করে ঠিক বাংলাদেশ থেকেও একই .

প্রক্রিয়ায় শ্রমিক প্ররনের দাবি করছি।

 

৬. বিতর্কিত ও দুর্নীতিগ্রস্থ FWCMS online পদ্ধতি বাদ দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব online পদ্ধতি এবং

মালয়েশিয়া সরকারের প্রস্তাবিত Epax পদ্ধতি বা manual পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে।

 

৭. FWCMS এর মাধ্যমে Medical পদ্ধতি বাদ দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত যে কোন মেডিকেল সেন্টারের মাধ্যমে মেডিকেল চেকআপ করার ব্যবস্থা করতে হবে।

 

৮. Manual পদ্ধতিতে চালু হওয়া দূতাবাসের সত্যায়ন অব্যহত রাখা এবং সিন্ডিকেটকে সহায়তাকারী সাবেক ফ্যাসীবাদী আমলে নিয়োগকৃত মন্ত্রনালয় ও দুতাবাসের কর্মকর্তাদের অপসারন দাবি করছি।

 

বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও মালয়েশিয়ার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতি আকুল আবেদন:-

 

মালয়েশিয়ান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দাতোশ্রী আনোয়ার ইব্রাহিম আগামী কাল ঢাকা সফর করবেন। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাই। উনার প্রতি রহিল প্রাণ ঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। মালয়েশিয়ান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বায়রার ২৫০০ সদস্য ও মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের পক্ষ থেকে অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশের শ্রম বাজার কোন প্রকার সিন্ডিকেট কে প্রশ্রয় না দিয়ে সকলের জন্য উন্মুক্ত করার বিনীত অনুরোধ করছি। কারণ সিন্ডিকেটের কারণে শুধুমাত্র কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বরং বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া দুই দেশে সুনাম নষ্ট হয়েছে। সাথে সাথে আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, বিশ্বসমাদৃত ও নোবেল বিজয়ী ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ডঃ আসিফ নজরুল এর প্রতি মালয়েশিয়ার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে সিন্ডিকেট মুক্ত অন্য ১৪টি source country এর আদলে বাংলাদেশের শ্রম বাজারের নতুন ধারা উন্মুক্ত করার জন্য বিনীত আহবান করছি।