জাতির সংবাদ ডটকম।।
স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে বিচার বিভাগ সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হলেও জনগণের কাঙ্খিত ন্যায় বিচার পাওয়ার প্রক্রিয়া এখনো বাস্তব রুপ লাভ করেনি। বিগত তত্বাবধায়ক সরকারের সময় উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের লক্ষ্যে ২০০৮ সালের ১৬ মার্চ “সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিশন অধ্যাদেশ” জারী করলেও আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার বিচার বিভাগকে দলীয় হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহারের উদ্দ্যেশ্যে সংসদে আইনটি পাস করেনি। স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা আমাদের জাতীয় অগ্রগতির একটি অপরিহার্য শর্ত। সেদিকে লক্ষ্য রেখে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ২১ জানুয়ারী “বিচারপতি নিয়োগ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ ২০২৫” জারী করেছেন। এই অধ্যাদেশ উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতা মূলক করবে বলে প্রত্যাশা জানিয়েছেন আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমেদ ভুইয়া।
আজ “বিচার বিভাগ সংক্রান্ত সংস্কারমূলক অধ্যাদেশের মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা” নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি করেন। পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়ে আরও বক্তব্য রাখেন এবি পার্টি’র সাধারন সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, বিচার বিভাগ সংস্কার ও উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু নিম্ন আদালতে পিপি, এপিপি নিয়োগের কোন স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নেই। তেমনি আমরা মনে করি নিম্ন আদালতে শুধুমাত্র বিজিএস পরীক্ষা দিয়েই একজন আইনের ছাত্র বিচারপতি নিয়োগ পেতে পারেনা। বিচারক নিয়োগ পেতে কমপক্ষে আইনজীবী হিসেবে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক করতে হবে। তা নাহলে নিন্ম আদালতে নানা সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
বিচার বিভাগ সংস্কার নিয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে মুল বক্তব্যে ব্যারিস্টার যোবায়ের আরও বলেন, সম্প্রতি আইন উপদেষ্টা সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় এবং স্থায়ী অ্যাটর্নী সার্ভিস চালুর যে ঘোষণা দেন, এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। দীর্ঘ দিন যাবত এবি পার্টি এই দাবি জানিয়ে আসছে। তিনি বলেন, এই সংস্কার উদ্যোগে জনগন আংশিক ভাবে উপকৃত হবে। সংস্কার বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও বার কাউন্সিলসহ আরো কতিপয় সংস্কার না হলে শুধু এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে জনগন বিচারালয় থেকে কাঙ্খিত ন্যায় বিচার পাবেনা। তিনি বলেন ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে ফৌজদারী অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে তদন্ত ব্যতীত পুলিশের ভূমিকা থাকতে পারবে না; দীর্ঘসূত্রতা এড়িয়ে যথা সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের ব্যবস্থা করতে হবে।
বর্তমান অধ্যাদেশে শুধু মাত্র আইন পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের কাউন্সিলের সদস্য করা হয়েছে। এবি পার্টি মনে করে উন্নত বিশ্বে বিভিন্ন কমন ল’ সিস্টেমে বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক, তেমনি আইনি দৃষ্টিকোন ও জনগণের দৃষ্টিভঙ্গির ভারসাম্য রাখতে জনগণের প্রতিনিধির অন্তর্ভুক্তি জরুরি। তিনি বলেন, আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগে স্বচ্ছতার লক্ষ্যে কোরাম সদস্য ৩ এর বদলে ৫জন করা জরুরি। বয়সসীমা নির্ধারণ সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জে পড়তে পারে উল্লেখ করে ব্যারিস্টার যোবায়ের বলেন, বয়সসীমা নির্ধারণের পরিবর্তে সংবিধান অনুযায়ী যোগ্যতার বিধান কার্যকর করা জরুরী। সেখানে সাক্ষাৎকার মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রকাশ্যে আনা, প্রার্থীদের মেধা, অভিজ্ঞতা, ও সততাকে গুরুত্ব দেয়া দরকার।
তিনি বলেন, ৪০ লক্ষাধিক মামলার জট কাটাতে বিচার বিভাগকে উদ্যোগী হতে হবে। সেই লক্ষ্যে প্রত্যেক স্তরে বিচারিক প্রশাসন গঠন, আপিল করার সময় সীমা নির্ধারণ, পরাজিত পক্ষকে খরচের দায়িত্ব নিতে বাধ্য করা, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থাকে বিচারিক সচিবালয়ের অধীনে ইউনিয়ন / উপজেলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা জরুরি।
তিনি লক্ষ লক্ষ মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা নিষ্পত্তির জন্য স্থায়ী “ফৌজদারী মামলা পুনর্মূল্যায়ন কমিশন ” গঠন করার দাবি জানান।
আদালত প্রাঙ্গনে দলীয় রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। মিছিল, মিটিং, শ্লোগান, ব্যানার, পোষ্টারিং করে আদালতের ভাবমূর্তি হেয় করবার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রত্যেক বারকে বিচারিক আদালতের সীমানা থেকে আলাদা করবার ব্যবস্থা করতে হবে বলে অভিমত জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, ব্যারিস্টার সানী আব্দুল হক, আলতাফ হোসাইন, এবি লইয়ার্সের যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান, আইনজীবি নেতা তারিকুল ইসলাম নাহিদ, আব্দুল্লাহ আল আরিফ, অ্যাডভকেট আরাফাত, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সদস্য সচিব আহমাদ বারকাজ নাসির, উত্তরের যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুর রব জামিল, সহ সাংস্কৃতিক সম্পাদক এনামুল হক, সহ মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আমেনা বেগম সহ পার্টির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।