নুরুল আলম, মিরসরাই চট্টগ্রামঃ
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বারইয়ারহাট পৌরসভা এলাকায় বেগম খালেদা জিয়ার রোড মার্চের গাড়ি বহরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় ৭ বছর পর মামলা করা হয়েছে।
বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহবায়ক দিদারুল আলম মিয়াজি সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং তার ছেলে সাবেক এমপি রুহেল সহ ৯২ জনের বিরুদ্ধে জোরারগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলার এজাহার নামীয় আসামি আরিফ উদ্দিন নাঈম কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
জানাগেছে, ২০২৭ সালের ২৮ অক্টোবর কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগস খালেদা জিয়া কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাওয়ার পথে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বারইয়ারহাট পৌরসভা এলাকায় দপায় দপায় গাড়ি বহরে হামলা ও ভাংচুর চালানো হয়েছিলো । একইদিন ঘটনার সুত্র ধরে বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহবায়ক দিদারুল আলম মিয়াজির বাড়িতে হামলা বাজারের বিএনপি সমর্থিত ব্যবসায়ীদের দোকানে তালা লাগিয়ে দিয়ে বাজারে তান্ডব চালায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা ।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) জোরারগঞ্জ থানায় এজাহার নামীয় ৪২জন সহ অজ্ঞাত ৪০/৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। মামলা নং ১২,স্বারক নং ৩৯৯৫(৩)।
মামলার অপর অসামীরা হলেন, সাবেক মেয়র রেজাউল করিম খোকন, পৌরসভা আওয়ামীলীগের সভাপতি মীর আলম মাসুক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন, করেরহাট ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান গিয়াস উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কামরুল ইসলাম, সোনা মিয়া চেয়ারম্যান, সাবেক মেয়র ভিপি নিজাম উদ্দিন, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল ভুঁইয়া, উত্তরজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি নাছির উদ্দীন দিদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শাখাওয়াত উল্লাহ রিপনসহ মোট এজাহার নামীয় ৪২ জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদি বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপি’র আহবায়ক দিদারুল আলম মিয়াজি এজাহারে উল্লেখ করেন মামলার আসামিরা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সাধারণ জনগণের উপর অন্যায়-অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ণ চালিয়ে জোরারগঞ্জ এবং মিরসরাই উপজেলায় একছত্র আধিপত্য বিস্তার করে। তাহাদের ভয়ে সাধারণ মানুষ কথা বলতে পারতো না।
বিগত ২৮/১০/২০১৭ইং তারিখ সকাল ১০টায় সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার পূর্ব নির্ধারিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফরে গাড়ি বহর বারইয়ারহাট পৌঁছামাত্র প্রধান আসামি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং তার পুত্র মাহবুব উর রহমান রুহেল এর নির্দেশে অপরাপর আসামীরা মিলে বেগম খালেদা জিয়ার রোড মার্চের সফর বানচাল করার উদ্দেশ্যে গতিরোধ করে লোহার রড, রাম দা, কিরিচি, লাঠিসোঠা সহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালায়।
বেগম খালেদা জিয়ার রোড মার্চের গাড়ি বহরে কে স্বাগত জানানোর জন্য মিরসরাই উপজেলার বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন এলাকার অনুমান ১০০/১২০জন দলীয় নেতাকর্মী জোরারগঞ্জ থানাধীন বারইয়ারহাট পৌরসভাস্থ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন খান সিটি সেন্টার ও রোজিনা হোটেল এর সামনে এবং বারইয়ারহাট ট্রাফিক মোড় পাকা রাস্তার উপর অবস্থানকালে তাদের উপর হামলা করে মারাত্মক জখম করে।
প্রধান এবং দ্বিতীয় নাম্বার আসামীর হুকুমে ৩নং, ৪নং ও ৫নং বিবাদীর নেতৃত্বে উল্লেখিত সকল বিবাদীগণ সহ অজ্ঞাতনামা ৪০/৫০ জন আসামীরা উত্তেজিতভাবে অকথ্যভাষায় গালমন্দ করে বলতে থাকেন বিএনপির বংশ ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ আছে বলতে বলতে ঘটনাস্থলে ত্রাস সৃষ্টি করে।
বাদি আরো উল্লেখ করেন, একপর্যায়ে ৬নং-২০নং বিবাদী তাহাদের হাতে থাকা লাঠিসোঠা দিয়া আমাকে এবং উপস্থিত নেতাকর্মীদের হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাথারী হামলা করে মারাত্মক জখম করে। ২১-৪২নং বিবাদীগণ তাহাদের হাতে থাকা লোহার রড, দা কিরিচ ইত্যাদি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বহনকৃত ৫ থেকে ৭টি গাড়ীর সামনের ও পিছনের গ্লাস ভাংচুর করে প্রায় আড়াই লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে।
সামলার বাদি দিদারুল আলম মিয়াজি জানান, একপর্যায়ে আমরা প্রাণ রক্ষার্থে ঘটনাস্থল হইতে পিছু হটলে লাঠি-সোটা, দা, চেনী অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে আমার বসতবাড়ীতে হামলা এবং ভাংচুর চালায় আসামীরা। ঘরে বৃদ্ধ নারী ও শিশুরাও রেহাই পায়নি তাদের হামলা থেকে।
এছাড়াও আসামীরা বারইয়ারহাট বাজারে বিএনপি সমর্থিত ব্যবসায়ীদের দোকান-পাটে ভাংচুর ও তালা লাগিয়ে দেয়। তৎসময়ে উক্ত ঘটনা দেশব্যাপি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক আজিজুল হাকিম জানান, বাদির আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলার একজন আসামি গ্রেফতার হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত মামলার রেকডিং কর্মকর্তা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানেন।
জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এটিএম শিফাতুল মাজদা’র জানান, বারইয়ারহাট পৌরসভার দিদারুল আলম মিয়াজি মামলার বাদি। মামলা রুজু হওয়ার পর একজনকে গ্রেফতার করেছে। বাকি আসামিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।