
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি ভারতের মহারাষ্ট্র থেকে সরিয়ে নেওয়ার দাবিকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রের নাগপুরে বেশ কয়েকটি এলাকায় কারফিউ জারি করেছে রাজ্য সরকার। ১৭ শতকের সম্রাটের সমাধি আওরঙ্গবাদে অবস্থিত, যা বর্তমানে ছত্রপতি সম্ভাজিনগর জেলা নামে পরিচিত।
নাগপুরের পুলিশ কমিশনার রবীন্দ্র কুমার সিঙ্গাল ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ১৬৩ ধারার অধীনে একটি নোটিশ জারি করেছেন।আজ মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
এতে বলা হয়েছে, কোতোয়ালি, গণেশপেঠ, তহসিল, লাকাদগঞ্জ, পাচপাওলি, শান্তিনগর, সক্করদারা, নন্দনবন, ইমামওয়াদা, যশোধরানগর এবং কপিলনগর থানা এলাকায় কারফিউ প্রযোজ্য। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
আওরঙ্গজেব সমাধি ছত্রপতি সম্ভাজিনগর জেলা থেকে সরিয়ে ফেলার দাবিতে গতকাল সোমবার থেকে বিক্ষোভ শুরু করে বজরং দল। পরবর্তীতে এই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এর পাশাপাশি ধর্মগ্রন্থ পোড়ানোর গুজব ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠেছে।
পুলিশ কমিশনারের নোটিশ অনুসারে, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরং দলের সমর্থকরা গতকাল সোমবার নাগপুরের শিবাজি মহারাজের মূর্তির কাছে জড়ো হয়ে মহারাষ্ট্র থেকে আওরঙ্গজেবের সমাধি অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তারা স্লোগান দেওয়া শুরু করে। আওরঙ্গজেবের ছবি এবং সবুজ কাপড়ে মোড়ানো একটি প্রতীকী সমাধি পুড়িয়ে দেয় বলে নোটিশে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, সবুজ কাপড় পোড়ানোর ফলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে দাবি করে, এতে পবিত্র শ্লোক লেখা ছিল, যার ফলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
নোটিশে বলা হয়েছে, গত সন্ধ্যায় একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের প্রায় ৮০ থেকে ১০০ জন হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া হয় এবং বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ লাঠিচার্জ এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
তবে পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পিটিআইয়ের এক প্রতিবেদন অনুসারে, চারজন আহত হয়েছেন। এক ডজনেরও বেশি পুলিশ কর্মীও আহত হয়েছেন।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং নাগপুরের সংসদ সদস্য নীতিন গড়করি শান্ত থাকার আবেদন জানিয়েছেন এবং গুজবে বিশ্বাস না করার জন্য জনগণকে অনুরোধ করেছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি আপনাদের সকলকে আশ্বস্ত করছি যারা ভুল করেছে অথবা অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে। মুখ্যমন্ত্রীকে ইতিমধ্যেই এই পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে, তাই আমি সকলকে গুজবে কান না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।’
সহিংসতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে মোট ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে। এলাকায় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্য জনগণকে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি নাগরিকদের গুজবে বিশ্বাস না করার এবং আইন নিজের হাতে না নেওয়ার জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে বিরোধীরা এই সহিংসতার জন্য রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। শিবসেনা ইউবিটি বিধায়ক আদিত্য ঠাকরে এক্স-এ পোস্ট করে বলেছেন, ‘রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা আগের চেয়ে অনেক বেশি ভেঙে পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর শহর নাগপুর এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে।’
কংগ্রেস নেতা পবন খেরা বলেছেন, ‘নাগপুর তার অস্তিত্বের ৩০০ বছরে দাঙ্গার সম্মুখীন হয়নি। গত বেশ কয়েকদিন ধরে, ৩০০ বছরের পুরনো ইতিহাসকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে বিভাজন, বিভ্রান্তি এবং অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই সংঘর্ষগুলো কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয় ক্ষেত্রেই শাসকগোষ্ঠীর আদর্শের আসল চেহারা উন্মোচিত করছে।’
সূত্র: এনডিটিভি