আবুল কাশেম জামালপুর প্রতিনিধিঃ
জামালপুরের ইসলামপুরে যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূ নির্যাতন মামলায় আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও রহস্যজনক কারণে অভিযুক্ত স্বামীকে ধরছেনা পুলিশ। জানাযায় আসামির আত্মীয়-স্বজন ক্ষমতাসীন দলের লোক হওয়ায় নাকি আসামি প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করলেও পুলিশ তা না দেখার ভান করছে বলে অভিযোগ মামলার বাদিনী গৃহবধূর।
রবিবার (৯ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১টায় শহীদ হারুন সড়ক এলাকায় একটি মিডিয়া হাউজে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এই অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী গৃহবধূ রোকসানা আক্তার শিলা তাঁর অভিযোগে বলেন, ‘আমি জামালপুর সদর উপজেলার চালাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রশিদের কন্যা। আমি পেশায় একজন নার্স। বর্তমানে জামালপুর শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে কর্মরত। আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, ইমন সরকার আমার স্বামী। তিনি জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার দক্ষিণ কিসমত জান্না গ্রামের মো. জাকিউল ইসলাম তিব্বতের পুত্র।’
‘বিগত ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর তারিখে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট / নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে আদালতে উপস্থিত হয়ে আমি আর ইমন সরকার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। পরবর্তীতে কাজির মাধ্যমেও দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী আমরা আমাদের বিবাহ নিবন্ধন করি।’
‘বিয়ের পর থেকে আমাদের সংসার জীবন ভালোভাবেই চলছিল। কিন্তু বিয়ের কয়েকদিন পরেই আমার স্বামী ইমন সরকার ও তাঁর স্বজনরা যৌতুক হিসেবে আমার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকাও নেন। একপর্যায়ে তারা আমার কাছে আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। আমি টাকা দিতে আপত্তি জানালে আমাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও হুমকি ধমকি দেন তাঁরা। একপর্যায়ে বিয়ের মাত্র ১৫ দিনের মাথায় জোরপূর্বক তাঁরা আমাকে আমার বাপের বাড়ি জামালপুর শহরের চালাপাড়ায় পাঠিয়ে দেন।’
এরপর থেকে তাঁরা বিভিন্ন সময়ে আমার কাছে টাকা দাবি করে নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন। এতে করে আমার জীবনে অশান্তি নেমে আসে। আমার স্বামী ও তার স্বজনদের চাপের মুখে অতীষ্ঠ হয়ে আমি গত ১২ জানুয়ারি বিজ্ঞ জামালপুর আদালতে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা দায়ের করেছি।’
আমার স্বামীর বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা দায়েরকে কেন্দ্র করে আমার স্বামী ইমন সরকার ও তাঁর স্বজনরা আমার প্রতি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। যৌতুক নিরোধ আইনের মামলায় ইমন সরকারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ারা থাকলেও আসামিরা ক্ষমতাসীন দলের লোক হওয়ায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করছে না। মামলাটির আসামি ইমন সরকারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর ইমন সরকার, তাঁর বাবা জাকিউল ইসলাম তিব্বত, বোন জেমি পাহলোয়ান ও বোন জামাই রাহাত পাহলোয়ান জামালপুর শহরের চালাপাড়ায় এসে আমাকে মামলা তুলে নিতে চাপ ও টাকা না দিলে তালাক নেওয়ার হুমকি দেন। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে বাড়িতে অন্য কেউ না থাকার সুযোগে তাঁরা আমাকে মারধর করলে আমি গুরুতর আহত হয়ে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিই। আমাকে মারধর করে নির্যাতনের ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে জামালপুর সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি।’
তিনি আরও জানান, ‘আমার স্বামী ইমন সরকারের বোন জামাই রাহাত পাহলোয়ান ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক হওয়ায় দলীয় প্রভাব খাটিয়ে যৌতুক মামলায় আমার স্বামীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার পরও তাঁকে গ্রেপ্তার করতে দেওয়া হচ্ছে না। উক্ত আসামিকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে ইসলামপুর থানার ওসিকে বারবার বললেও তাঁরা বিষয়টি কোনো আমলে নিচ্ছেন না। আমি ইমন সরকারকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে ইসলামপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মাজেদুর রহমান বলেন, ‘আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলে আসামিকে অবশ্যই গ্রেপ্তার করা হবে। তবে অভিযুক্তের নামে যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে সেটা আমি জানিই না। ক্ষমতাসীন দলের লোক হওয়ায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছেনা, এ অভিযোগও সঠিক নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’