রাজনীতি, দেশপ্রেম ও সমাজসেবা

রবিবার, আগস্ট ২৪, ২০২৫

সৈয়দা রাশিদা বারী
লেখক একজন কবি ও সাংবাদিক

বাংলাদেশের সংবিধানের শর্ত কি? হ্যাঁ সেটাই বলছি। বাংলাদেশের সংবিধানের শর্ত দেশের প্রত্যেক নাগরিকের প্রাপ্তি অধিকার- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা সুনিশ্চিত করা থাকা বা পাওয়া। একজন নাগরিকের এটা পেতে এবং নেওয়া তার কোন প্রকারের বেগ পেতে, ছোট হতে এবং ভিক্ষা করতেও হবে না। এটা সে ন্যায্য অধিকারে পাবে। লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, প্রবঞ্চিত অপমানিত এসব পরের কথা অথবা এসবের প্রশ্ন কেন আসবে? যেহেতু এটা নাগরিক অধিকার ন্যায্য প্রাপ্তি তাই না? আবার এই প্রত্যেকের মানে কিন্তু এর ভিতরে নারীও আছে, এমনকি উভয় লিঙ্গ হিজড়াও আছে শুধু পুরুষের জন্য নয়।
তাহলে এত নারীর অথবা হিজড়ার পেটের দায়ে কি করা দেখি? সাথে বঞ্চিত হতে, লাঞ্চিত হতে কেন দেখা যায়? রাস্তার মধ্যে জনসম্মুখে কাপড় খুলেও নিচ্ছে। দুই তিন দিন আগেই তো ভাইরাল ফেসবুকে দেখলাম। কত নারীর দুষ্ট প্রবৃত্তি মাথা ফাটিয়ে কিংবা চুল টেনে ছিঁড়ে দিচ্ছে। চোখ উপড়িয়ে ফেলছে! কবর পর্যন্ত জ্যান্ত দিতে উঠে পড়ে লাগছে! নারীর প্রতি এমন এমন দানব ব্যবহার, এমন বিবস্ত্র উলঙ্গ ও অন্যান্য অন্যায় করে কি প্রকাশ করা হচ্ছে? কি পেতে চাচ্ছে বা করতে চাচ্ছে দেশে?? এখানে হচ্ছে নিরীহ নিষ্পাপ কন্যা শিশু ধর্ষণ।
মা বোন লাঞ্ছিত অপমাণিত। তাছাড়া বিনা অপরাধে অথবা মিথ্যা অজুহাতে ৪০০ মাজার ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মাজারও কারো পাকা ধানে মই দেয় নাই। কারো অধিকার ছিনিয়ে নেয় নাই। ভাত ভোট চায় নাই ইত্যাদি। আসলে কি বলবো জনসাধারণ তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ বলছে যা, তাদের দাবি এবং তাদের কথা ‘প্রথম শর্ত হোক দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে হলে, রাজনীতি করতে হলে, বিদেশে তার কিছুই থাকা যাবে না। বিদেশি নাগরিক নাগরিকত্বের প্রশ্নই নাই। বিদেশে গাড়ি বাড়ি প্রতিপত্তি আছে, রাজনীতিও করে বাংলাদেশে, এরকম ধরা পড়লে তাকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হবে।
এমনকি রাজনীতি করতে হলে, রাজনীতিবিদরা তার সন্তানদের বিদেশে পড়ালেখা, ব্যবসা-বাণিজ্য করাতে বা বিদেশে রাখতে পারবে না। বিশেষ করে পোয়াতি মা বোনের, রাজনৈতিক ফ্যামিলি থেকে, বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বে বিদেশি নাগরিকত্ব জন্ম সূত্রে পাওয়ার লোভ পলিটিক্স করে সেখানে ভূমিষ্ঠ করানোর হয় কোন একটা অজুহাতে। কেননা সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে, ওই সন্তানের নাগরিক অধিকার বলে, সন্তানের নাগরিক সূত্রে, সন্তানের মা-বাবা নাগরিকত্ব পায়। তাই রাজনীতিবিদদের ফ্যামিলিতে এটা দেখা যায় করতে। যে কারণে তাদের কন্যা অথবা পুত্র বধুর এই সুযোগ দেয়া যাবে না।
এই সমস্ত সুযোগ সুবিধার অংশ থাকবে রাজনীতি মুক্ত সাধারণ মানুষের জন্য। সাধারণ মানুষ ভাগ্য অন্বেষণের জন্য বিদেশে পড়ালেখা করতে, ব্যবসা বাণিজ্য করতে যেতে ও বসবাস করতে, গাড়ি-বাড়ি করতে পারবে। এটা পারবেনা রাজনীতিবিদদের পরিবার। রাজনীতিবিদদের আত্মীয়-স্বজন। এই আইন সাব্যস্ত হলে, তাহলে এমনিই ঘুসমুস জুলুম অন্যায় রাহাজারি অত্যাচার ইত্যাদি ঘুচে যাবে। নিশ্চিহ্ন অর্থাৎ ক্লোজ বন্ধ হবে। মন্দ কিছুই থাকবে না দেশে। চোরাই কারবারি, ডাকাতি চাঁদাবাজি কিছুই থাকবে না। একবার দেখেছিলাম একটা পত্রিকা অফিসে সাহিত্যিক একজনের সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া। সেখানে মূল সম্পাদক শর্ত দিয়েছিল, সে নিজের কোন লেখা তার ওই পত্রিকায় ছাপাতে পারবেন না! আমি তখন বুঝি নাই কিন্তু এখন বুঝি এর কারণ। আসলে ঐরকম রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও নিয়ম হওয়া প্রয়োজন।
নিজের পরিবার থেকেই যদি দেশের সুযোগ-সুবিধা গুলো রাজনীতিকরা নেয়, তাহলে অন্যদের বলতে রাজনীতি মুক্ত সাধারনদের দেবে কি? রাজনীতি করতে আসে মানুষের দেশের ভাগ্য উন্নয়নে সেবা করতে। অতএব যার সেরকম ক্যাপাসিটি আছে পরিবার থেকে। যাকে রাজনীতির মাঠ থেকে কিছু নিতে হবে না। যার ফ্যামিলি নিজস্ব পারিবারিক সম্পত্তিতেই চলতে পারে। আর উ”চ কোন আকাঙ্ক্ষা নাই, লোভী নয়। রাজনীতি করতে মানুষের সেবা করতে, সেই তো আসবে। নিতে আসবে কেন?! দিতে আসবে। সময় এনার্জিও ফ্রি দেবে। যার দেওয়ার ক্যাপাসিটি নাই নিজের ফ্যামিলি থেকে। তার রাজনীতিতে আসার সুযোগ দেওয়া এবং আসা ঠিক নয়।
কবি সাহিত্যিকরাও তো তাদের অবদান, সেবা, দেশের প্রতি ফ্রী সার্ভিস দেয়। এছাড়াও জনসাধারণের কথা, যখন রাজনীতিতে আসবে, ব্যাংক ব্যালেন্স ইত্যাদি তার যা কিছু আছে সহায় সম্পদ সেটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে লিখিত জমা নিতে হবে জনগণের পক্ষে মানে জনগণের হাতে। যখন রাজনীতির মাঠ থেকে বিদায় হবে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে, তখনও সেটা যাচাই-বাছাই করে জনগণ দেখে বুঝে নিতে হবে তবেই দেশের দুর্নীতি যাবে’। আমার আব্বাও রাজনীতির মাঠে ভাষা আন্দোলন করেছিলেন। দেশ প্রেমিক ছিলেন। ঠিকই বাবার সম্পদ নিজের পাওনা অংশ থেকে, বিরাট একটি অংক, হারাতে হয়েছিলো।
দেশপ্রেম ভাষা প্রেমের নেশায় ছাড়তে হয়েছিলো। বিক্রি করে দিয়ে সেই পয়সায় রাজনীতি করেছিলেন সেবার দায়িত্বের জায়গা থেকে। তিনিও ছাত্র ছিলেন। কুমারখালী এমএম হাই স্কুল, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, তারপরে জগন্নাথ কলেজ, লাস্টে চিকিৎসা বিদ্যার বর্তমান সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ছিলেন। কিন্তু কখনোই চাঁদাবাজি করেন নাই। বরং আরো রাজনীতির কারণে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নটাও তাকে হারাতে হয়েছিলো। এটাকেই বলা হয় ত্যগ করা, বিসর্জন দেওয়া। দেশের পরিচালক রাজনৈতিকদের ত্যাগী হতে হয় দেশ প্রেমের বিনিময়ে। পূর্বের দেশ প্রেমিক তারা কখনো জনগণের প্রাপ্তি অধিকার শোষণ করে অথবা চাঁদাবাজি করে আই ইনকাম করেন নাই?? আমার বাবা যিনি পিতৃকুলের সম্পত্তি হারিয়েছেন, অর্থাৎ ব্যক্তিগত সম্পত্তি কমেছে, বাড়ে নাই বৃদ্ধি পায় নাই ওই মেয়াদকালীন সময়ের মধ্যে বা ওই কারণে! তারপরও সারাদিন জীবন মানুষের চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন, বিনা পয়সায়। বাড়িতে মানুষের অক্ষর জ্ঞান দিয়েছেন।
বড় ক্লাসের ছাত্ররাও এমনকি সননং ডাক্তারি পড়া ছাত্ররাও এসে শিক্ষা নিয়েছেন। মা দিয়েছেন আরবি শিক্ষা। নিরক্ষরতা দূরীকরণেও মায়ের ভূমিকা অনেক। মা বাংলা ইংরেজি অংক শিক্ষা দিয়েছেন প্রাথমিক পর্যায়ের মানুষের কিন্তু সেটা ফ্রি। মায়ের কাছে ছেলেরা আসতো শিখতে ছোট বয়সের। মেয়ে সব বয়সের। বয়জ্যেষ্ঠ বৃদ্ধ মহিলারাও আমার মায়ের থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। লিখেছেন পড়েছেন বাংলা ইংরেজি অংক ধারাপাত এবং আরবি। কোরআন শরীফ পড়া নামাজ পড়া শিক্ষা নিয়েছেন অগণিত নারী। আমার নিজের কোরআন শিক্ষাও মায়ের থেকে নেওয়া। আমি ছিলাম একই জিনিস ডবল ডবল পড়াও আলা। ছোটবেলা থেকেই একটু বিশেষজ্ঞ গবেষক টাইপের ছিলাম। তাই উচ্চারণ বা ইত্যাদি মিলাবার জন্য মসজিদে হুজুরের কাছে।
আমার শিক্ষাবিদ শিল্পপতি দাদার কাছারি ঘরে লজিং থাকা, আমারই চাচার প্রতিষ্ঠিত প্রাথমিক বিদ্যালয়, বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সেখানকার শিক্ষক এবং মাদ্রাসার শিক্ষক কারিয়ানা মাওলানার থেকেও আরবি শিক্ষা গ্রহণ করেছি। বাংলা তো আছেই, মা-বাবার পাশাপাশি বাইরের শিক্ষকদের থেকে নেওয়া বিদ্যা জ্ঞান। আমার ছিলো চর্চার বহুত ধারা বয়স অনুপাতে। দিয়েছেন আমার মা এবং বাবা দুজনে বিনা পয়সায় তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ। মানে নিজেরা পড়াইছে সময় দিয়ে পয়সা না নিয়ে, বিনা পারিশ্রমিকে। আবার নিজের টাকায় তাদের বই সেলেট পেন্সিল চক খাতা কলম সার্ভিস দিয়েছেন এমনকি ক্ষুধার্তকে খেতেও দিয়েছেন! এছাড়াও স্কুল-কলেজে পড়ার ছেলেপেলের বই কিনে দিয়েছেন।
আর আমার ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলকদের স্পন্সার পৃষ্ঠপোষক দাদার জমিগুলো বর্গা দেয়া ছিলো, সেই দাদার আমলেই। পূর্বের প্রেসিডেন্ট পরবর্তীতে চেয়ারম্যান চাচা উকিও দেইনি সেই জমির আইলে, বড়গাদাররা যা খুশি দিয়ে গিয়েছে নিজের থেকে বাড়ির উপর এসে। মা তো পুরুষ মানুষের সামনে যেতেন না। বাবা চাচারা তাকিয়েও দেখেননি। খোঁজ খবর বা হিসাব নেওয়া তো দূরের।
আমিই লাফিয়ে লাফিয়ে তাদের একা একাই ঢেলে বা রেখে যাওয়া দেখেছি। দেশপ্রেম কি সস্তা নাকি? জন মানুষের সেবা করা কি এতই সস্তা? রাজনীতি করতে যে সম্মানীয়রা আসেন, দেশের উন্নয়নে জনগণের সেবায়?লোভ দেখিয়ে কথা দিয়ে দুই নাম্বারি করে, তারপরে ক্ষমতা চলে গেলে পালিয়ে যায়। এর নাম রাজনীতি করা নয়, জনসেবা দেশ সেবা করা নয়।
মানুষের পেটে লাথি দিয়ে সবকিছু নিজেরা খায়, আমার দেশের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে, জনগণের অধিকার লুন্ঠিত করে, দেশ শাসনের নামে শোষণ করে, গরিবের বুকে পাড়া মারে। রক্ষক হয়ে পড়ে ভক্ষক। কিন্তু জনগণের কথা, জনগণের চাওয়া ‘রক্ষক না হোক ভক্ষক’। ফ্যানের তলে এসির মধ্যে শুয়ে ভোগ বিলাসে মত্ত না হোক। দেশপ্রেমের নামে, রাজনীতির নামে, জনগণের না খাইয়ে রেখে, নিজে পেট পুরে খেয়ে, নাক ডাকিয়ে ঘুমাই। অথচ পথে ঘাটে কত অসংখ্য মানুষ না খেয়ে ভিক্ষা প্রবৃত্তি করছে। এক মুঠো ভাতের জন্য কতভাবে অপদস্থ হচ্ছে। চিকিৎসা নাই বাসস্থান নাই। আস্তানা খুড়ে রাস্তায় অসুস্থ আবর্জনার মধ্যে পড়ে আছে!! পাচ্ছে না ঘুমাবার জায়গা।
পাচ্ছে না এতোটুকু জীবনের নিরাপত্তা। এইতো দুদিন আগেও, রাস্তার মধ্যে নারীর কাপড় খুলে নেওয়ার আগে অথবা পরে, কুষ্টিয়া কুমারখালীতে ১৫ বছরের নিষ্পাপ বালকের লাশ বানিয়ে তার থেকে তার জীবিকা নির্বাহ করা ভ্যান গাড়িটা কেড়ে নিয়েছে। যদি ছেলে না হয়ে মেয়ে হত তাহলে ধর্ষণও করতো নিশ্চিত।
আবার স্কুল কলেজ থেকে ফিরতে আটকিয়ে মোটা অংকের চাঁদাও দাবি করে। পিতামাতা নিশ্চিন্ত হতে পারে না সন্তানকে কাজে পাঠিয়ে। অথবা স্কুল কলেজে পাঠিয়ে। কারণ সন্তান আর ফেরেনা জীবন নিয়ে। এই কি আমার দেশের প্রত্যেকের নাগরিকত্বের প্রাপ্তি?
খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জাতীয় অধিকার? জনগণের সাধারণ চাহিদা মিটিয়ে দুঃখ দুর্দশা ঘুচাবার দায়িত্ব না নিতে পারলে, স্বাধীন দেশে, কিসের রাজনীতি করা হয় সেটা? দেশ পরিচালনার জন্য, সাধারণ মানুষকে স্বাভাবিক রাখার জন্য, রাজনৈতিকদের সেটা কি কোন রাজনীতি করা হলো নাকি? জনগণ বলে এটা নাকি দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা। আপডেট যুগের সাধারণ জনগণ, বাংলাদেশে একনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক, ত্যাগী নেতা, ত্যাগী অভিভাবক পেতে চায়।