
জাতির সংবাদ ডটকম।।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, আজকে আমাদের ঐক্যের যে জায়গা দরকার, এ দেশে এমন একটা রাষ্ট্র তৈরি করা দরকার, যেটা জবাবদিহিমূলক হবে। যেটি কোনও অবস্থাতে স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে উঠবে না। তিনি বলেন, ‘এমন ব্যবস্থা করবো যেন নাগরিকের অধিকার সুরক্ষিত থাকে। এ জায়গায় ঐক্য আছে। ফলে রাজনৈতিক মতপার্থক্য সত্ত্বেও এ ঐক্য ধরে রাখা দরকার।’
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘বাংলাদেশের স্বপ্ন ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে তিনি এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘বাংলাদেশের দলগুলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তৈরি করেছিল। এখন জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হচ্ছে। তার লিখিত রূপ হিসেবে জাতীয় সনদের কথা বলা হচ্ছে। সেটাই হচ্ছে সামাজিক চুক্তি। রাষ্ট্র তার নাগরিকদের সঙ্গে চুক্তি করবে। ফলে নাগরিকের অধিকার সুরক্ষিত হবে, অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে, রাষ্ট্র জবাবদিহির মধ্যে যাবে। এ জায়গাটা তৈরি করতে হবে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত নেই।’
তিনি বলেন, ‘মতপার্থক্যকে যাতে শত্রুভাবাপন্ন না করে তুলি। প্রয়োজন নেই। আমরা একত্রে পারি। সেটা প্রমাণ করেছেন। ঐক্যের জায়গা চিহ্নিত করতে হবে। সেই সনদ তৈরি করতে হবে—যা সামাজিক চুক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হবে। যেটা দিকনির্দেশনা দেবে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ কেমন হবে। এটা হচ্ছে বাংলাদেশের সনদ। এটা নাগরিকদের স্বপ্ন। তারা নিরাপত্তা চায়, যেন ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। তাকে না জানিয়ে সরকার যা ইচ্ছা তা করতে না পারে।’
সংবিধান সংস্কার কমিশনের জন্য নাগরিকতন্ত্রের সুপারিশের সমালোচনার বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘প্রচলিত শব্দ হচ্ছে প্রজাতন্ত্র। সংবিধান সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে বলেছি—প্রজাতন্ত্র বাদ দিয়ে নাগরিকতন্ত্র করি। অনেকের আপত্তি আছে, থাকতেই পারে। প্রজা না হওয়া ভালো। প্রজা হলে প্রভুর একটা সামন্ততান্ত্রিকতা তৈরি হয়।’
তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক সমাজ হলে তো দলগুলোর মধ্যে পার্থক্য থাকবেই। গণতান্ত্রিক সমাজ চাইবো, আর ভাববো আপনি-আমি সব বিষয়ে একমত হতে পেরেছি। তাহলে তো উত্তর কোরিয়ায় বাস করতে হবে। আমরা তো উত্তর কোরিয়া হতে চাই না। সেই রকম প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে গত ১৬ বছর ধরে লড়াই-সংগ্রাম করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। সেখানে মতপার্থক্য ও ভিন্নমত থাকলেও সহিষ্ণুতা থাকবে।’
গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশের জনগণ নানান স্বপ্ন দেখলেও তা ডাকাতি হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। তিনি বলেন, ‘স্বপ্নের বাস্তবায়নের লক্ষণ দেখা গেলেও বাস্তবতায় ছুঁতে পারিনি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমাদের স্বপ্ন নতুন একটা পর্বে এসে পৌঁছেছে। এবার আমরা যে স্বপ্নের কাছাকাছি এসেছি, তার বাস্তবায়ন না ঘটাতে পারলে ভবিষ্যতে বহুকালের জন্য স্বপ্ন দেখার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। স্বপ্ন দেখবার মতো কোনও চোখ এ রাষ্ট্রের থাকবে না। তাই এবার স্বপ্নকে ডাকাতি হতে দেওয়া যাবে না। এখানে জাতির শক্ত অবস্থান দরকার।’
বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেন, জাতীয় নির্বাচন তিন বছর পর অনুষ্ঠিত হবে? এই প্রসঙ্গ কেন আসলো আমি বুঝতে পারছি না। সরকারে আমি আছি বলে না, আমরা কোন? নির্বাচনের জন্য তারা দিচ্ছি? সারাদেশে এখনও ৬০% জেলার ডিসি এসপি আওয়ামী দোসর। বলতে পারেন বর্তমান ড. ইউনূস সরকার এই ৬ মাসে কি করেছেন? উত্তরে বলা যায় কি করবে তাদের বিকল্প খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিকল্প খুঁজতে গিয়ে গত ১৫ বছরে সবাই আওয়ামী দোসরে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থায় নির্বাচন দিলে আওয়ামী লীগের লোকজন প্রার্থী হলে তাদের ঠেকাবে কে? বর্তমানে নির্বাচনী যে অবস্থা ডিসিদের করতে হয় রিটার্নিং অফিসার। ডিসিরা ফলাফল নির্ধারণ করবেন দিন শেষে। কে কাকে ভোট দিলো সেটা বিষয় নয়, গত তিনটি নির্বাচনে যা হয়েছে এইচটি ইমাম নির্বাচনের তিনদিন আগে ভোটের ফলাফল ডিসিদের পাঠিয়ে দিতেন। সেই আলোকে এদেরকে বিজয়ী ঘোষণা করতে হতো। কোথায় কে ভোট দিয়েছে সেদিকে নজরই দেয়ার কথা ছিল না। নাহলে আমাদের সংস্কারের জায়গাগুলি এগনট করে নির্বাচন দিলে আগের নির্বাচনের মতোই হবে।
প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, আওয়ামী লীগের সময়ে কলাম লিখতে অনেক মৌলিক লেখা বাদ দিতে হতো। ৭১ নিয়ে, ৭৫ নিয়ে, শেখ মুজিবের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোন কিছু লেখা বা বলা যেত না। নির্বাচন ও সংস্কার দরকার, কিন্তু এই দুইটার জন্য প্রয়োজন ঐক্য। যদি ঐক্য না থাকে তাহলে এই নির্বাচন ও সংস্কার কোনটাই কাজে আসবে না। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে অতিদ্রুত নির্বাচন দিতে হবে।
উক্ত প্রকাশনা উৎসবে সভাপতিত্ব করেন আহমদ পাবলিশিং হাউস এর প্রকাশক মেসবাহউদ্দিন এবং চ্যানেল আই এর বিশিষ্ট সাংবাদিক আদিত্য শাহীন এর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, বইয়ের লেখক ডা. ওয়াজেদ খান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, আমেরিকা বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের কো চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান হাসান, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাব সভাপতি মনোয়ারুল ইসলাম প্রমুখ।