জাতির সংবাদ ডটকম।।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে পুরাতন এবং ঐতিহ্যবাহী
প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) আওতায় ৩০ জুন ২০২০ পর্যন্ত ২৫টি মিল চালু ছিলো। কিন্তু পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার বিশ্বের পাটজাত পণ্যের বাজার ভারতের হাতে তুলে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ জুট মিলস্ কর্পোরেশন কর্তৃক পরিচালিত ২৫টি জুট মিল গত ১লা জুলাই ২০২০ তারিখে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বন্ধ করে দেয়। এর ফলে মিলগুলোতে কর্মরত প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক-কর্মচারী চাকরি হারিয়ে পরিবার-পরিজান নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। সে সঙ্গে এ শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যবসায়ি, ঠিকাদার, দোকানদারসহ লক্ষ লক্ষ লোক কর্মসংস্থান হারিয়ে পথে বসেছে। এছাড়া, দেশকে প্রতি বছর বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হতে বঞ্চিত করা হয়েছে।
বন্ধ পরবর্তী দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার তাদের দোসরেরা মনগড়া পলিসি তৈরি করে নামমাত্র মূল্যে ১৩-১৪টি পাটকল ৩০ বছরের দীর্ঘমেয়াদে লিজ প্রদান করেছে। জানা যায় যে, খুলনা, যশোর, নরসিংদী ও চট্টগ্রামের কয়েকটি মিলের লিজ প্রদানে মারাত্মক দুর্নীতি ও অনিয়ম করা হয়েছে। অবশিষ্ট মিলগুলোর লিজ কার্যক্রমে চলমান রয়েছে। এসকল কার্যক্রমের বড় হোতা ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ও বিধায়ী সচিব আব্দুর রউপ। বন্ধ পরবর্তী বেসরকারি খাতে চালু করে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতের ঢোল বাজানো হলেও লিজ প্রদানকৃত ২-৩টি মিলে নামমাত্র উৎপাদন কার্যক্রম চালু হয়েছে। কিন্তু মিলগুলোতে স্থাপিত যুক্তরাজ্যের বেলফাস্ট এর জেমস মেকি এন্ড সন্স কোম্পানির মেশিন ও যন্ত্রপাতিগুলো স্ক্র্যাপ হিসেবে কেজি দরে ন্যূনতম মূল্যে বিক্রি করে একদিকে জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করা হচ্ছে, অন্যদিকে মিলের মূল্যবান জায়গা-জমি দখল ও লুটপাটের সর্গরাজ্য কায়েম করা হয়েছে। যা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিধ নোভেল বিজয়ী ড. ইউনুস-এর অন্তবর্তী সরকারের সময়েও চালু রয়েছে।
সরকারের সবচেয়ে বড় কর্পোরেশন হিসেবে এর প্রচুর জায়গা-জমি ছিলো। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য এর কোন নিজস্ব অফিস ভবন নেই। বর্তমানে যে জায়গাটি-তে অফিস ভবন রয়েছে, এটি আদজী জুট মিলের বিল্ডিং। সে হিসেবে এর মালিকানা থাকার কথা বিজেএমসি’র। কিন্তু এর পরিবর্তে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় আদমজী এন্ড সন্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরী করে এই সমস্ত বিল্ডিং ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ফলে বিজেএমসি’র সম্পদ হওয়া সত্ত্বেও ভাড়া বাবদ বিজেএমসি অর্থ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে ভাড়ার অর্থ লুটপাট করা হচ্ছে। এরপর ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দিয়েছে মতিঝিল তথা ঢাকা শহরে বিজেএমসি’র একমাত্র অফিস ভবন ‘করিম চেম্বার’। বিভিন্ন সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় যে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অফিস ভবন নির্মাণের জন্য করিম চেম্বার তাদের দখলে নেয়ার জন্য পায়তারা করছে। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করছে যে, অর্থ মন্ত্রণালয় বিজেএমসি’র নিকট সরকারি পাওনা হিসেবে টাকা পাবে। বিজেএমসি টাকা পরিশোধ করতে পারেনি। বস্তুত সরকারি পাওনা হিসেবে সরকারের বিভিন্ন সরকারি সংস্থার নিকট বিজেএমসি’র চেয়ে কয়েকগুন বেশি অর্থ পাওনা রয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় কোন কথা বলছে না।
অপরদিকে, বিজেএমসি’র নিয়ন্ত্রণাধীন আদমজী জুট মিল, গুলশানের আবাসিক এলাকা, চট্টগ্রামের হাফিজ জুট মিল, আমিন জুট মিল, ঢাকার লতিফ বাওয়ানী এবং জুটো ফাইবার মিলসহ প্রায় ৩২৪ একর জায়গা স্থাপনাসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান-কে বিনামূল্যে সরকার দিয়ে দিয়েছে। যার বর্তমান আনুমানিক বাজার মূল্য ২৫ (পঁচিশ) হাজার কোটি টাকা। এ টাকার সাথে বিজেএমসি’র নিকট প্রাপ্য সরকারি পাওনা সমন্বয় করলেও বিজেএমসি আরো বিপুল পরিমান টাকা সরকার/সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিকট পাওনা থাকবে। এছাড়া প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের মাধ্যমে ৭টি মিল বেসরকারি উদ্যেগতাদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে, এ মিলগুলোর জমির পরিমান ১৯৭.৮৫৭২ একর। এ বাবদ প্রাপ্ত সকল অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করা হয়েছে। সরকারের উচ্চ মহল-কে বিষয়টি খতিয়ে দেখার এবং বাংলাদেশ সরকারের পাট সেক্টরের ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচিয়ে কয়েকটি জুট মিল সরকারিভাবে চালানোর জন্য অনুরোধ করছি। এতে করে সরকারের খাদ্য বীজ নিরাপত্ত নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।