জাতির সংবাদ ডটকম।।
টিকিট যার, ভ্রমণ তার-রেলের নতুন স্লোগান। এর আওতায় হাওয়ার গতিতে ট্রেনের টিকিট কাটা যাবে। স্টেশনে পৌঁছতে দেরি হয়েছে, টিকিটের লম্বা লাইন, বিদেশ থেকে টিকিট কাটতে চান কোনো সমস্যা নেই।
সাধারণ যাত্রীদের সবাই কী ইন্টারনেট বোঝে, নেট কিভাবে ব্যবহার করতে হয় সেটাই বা কজন জানেন। সধারণ যাত্রীদের মনে এমন শত প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। অথচ এর সমাধান মিলছে না।
এ অবস্থায় অনলাইন টিকিট কাটতে গিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। অনলাইনে ঢুকতে পারছেন না। সার্ভারের প্রয়োজনীয় সক্ষমতা না থাকায়, সহজে এন্ট্রি পাওয়া যাচ্ছে না।
দুর্বল সার্ভার ঠিকমতো কাজ করে না। সেখানে (অনলাইনে) গিয়েও টিকিট মিলছে না-এ এক নতুন দুর্ভোগ। ঈদ মৌসুমে এ পরিস্থিতি আরও চরম আকার ধারণ করতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই।
ঈদের টিকিট দেওয়া শুরু হয়েছে ৭ এপ্রিল থেকে। অনলাইন জটিলতায় দিশেহারা অধিকাংশ যাত্রী। তারা বুঝতে পারছেন না কিভাবে টিকিট করবেন, বাড়ি যাবেন।
অনলাইনে টিকিট কাটতে না পেরে কিছু বিক্ষুব্ধ যাত্রী প্রায় প্রতিদিনই কমলাপুর স্টেশনে ছুটে আসছেন। রোববারও এসেছেন অনেকেই। তাদের অভিযোগ, অনলাইনেও অধিকাংশ মানুষ টিকিট কাটতে পারছেন না।
১০ থেকে ১৫ ভাগ যাত্রী টিকিট পাচ্ছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেও বাকিরা পাচ্ছেন না। যাদের স্মাটফোন, কম্পিউটার রয়েছে-তারাই যৎসামান্য টিকিট পাচ্ছেন।
রেলসংশ্লিষ্টদের সাফ বক্তব্য, শতভাগ টিকিট অনলাইনে আছে। নেটের মাধ্যমেই টিকিট কাটতে হবে। ২৭ হাজার ৬৮৪টি অগ্রিম টিকিটের বিপরীতে ১ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ ‘রেল অ্যাপস’ এ হিট করছে।
একজন যাত্রী গড়ে ৩টি করে টিকিট কাটলে ৯ হাজার ২২৮ জন টিকিট কাটতে পারবেন। ফলে টিকিট প্রত্যাশী হাজার হাজার মানুষ টিকিট পাবেন না, ওটাই স্বাভাবিক।
অনলাইনে টিকিট ছাড়ার ১ সেকেন্ডের মধ্যে প্রায় ৮ হাজার লোক প্রবেশ করেন। ১ মিনিটের মধ্যে কেবিন, এসি ও শোভন চেয়ারের ১০ থেকে ১২ হাজার টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। বাকিগুলো ধীরে ধীরে বিক্রি হয়।
রোববার সকালে কমলাপুর স্টেশন গিয়ে দেখা যায়, বেশকিছু যাত্রী কাউন্টার ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ আবার স্টেশন ম্যানেজার, মাস্টারের রুমে গিয়ে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলছেন।
তাদের অভিযোগ, অনলাইনে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে স্টেশনে ছুটে এসেছেন। স্টেশনেও টিকিট নেই। এখন আমরা বাড়ি যাব কিভাবে। রাজশাহীগামী যাত্রী শিমুল খান জানান, তার মা-বাবা স্ত্রী ও এক সন্তান ঢাকায় রয়েছে।
ঈদ করবেন গ্রামে। ৭, ৮ ও ৯ এপ্রিল অনলাইনে শতবার চেষ্টা করেও টিকিট কাটতে পারেননি। পরিবারের দুটি মোবাইল দিয়ে শতবার চেষ্টা করেও ঢুকতে পারেননি অ্যাপসে। তার মতো অনেকেই কমলাপুর আসছেন। কিন্তু এখানকার কাউন্টারগুলো বন্ধ, সংশ্লিষ্টদের মুখ বন্ধ। বড়জোর বলছেন, ‘সব টিকিট অনলাইনে, কাউন্টার কিংবা স্টেশনে কোনো টিকিট নেই।’
খুলনাগামী যাত্রী আনিসুর রহমানের বক্তব্য, গত ঈদেও কাউন্টার থেকে অগ্রিম টিকিট কেটেছেন। যদিও সেবার দুদিন ‘টিকিট যুদ্ধ’র পর সফল হয়েছেন। অনলাইনে গত ৩ দিন চেষ্টা করেও টিকিট পাননি। স্টেশনে আসা যাত্রী শুধু নন, ঘরে বসে টিকিট কাটতে পারেননি এমন অর্ধশতাধিক টিকিটপ্রত্যাশী বললেন, অ্যাপসে প্রবেশই করা যায় না। কখনও প্রবেশ করা গেলেও টিকিট কাটতে পারেননি। অধিকাংশ টিকিটপ্রত্যাশীর অভিযোগ, নতুন এ ব্যবস্থায় অনিয়ম-দুর্নীতি রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা রেলওয়ে মহাব্যবস্থাপক মো. সফিকুর রহমান যুগান্তরকে জানান, কাউন্টারের সামনেও এক সময় হাজার হাজার মানুষের ভিড় ছিল। ওই সময়ও অধিকাংশ যাত্রী টিকিট পাননি।
কারণ, সীমিত টিকিটের বিপরীতে হাজার হাজার মানুষ কাউন্টারে দাঁড়াতেন। একই অবস্থা অনলাইনে, প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার টিকিটের বিপরীতে হিট পড়ছে দেড় কোটিরও বেশি। তিনি বলেন, সক্ষমতার চেয়ে শতগুণেরও বেশি হিট পড়ছে অনলাইনে। কারও ভাগ্যে টিকিট জুটছে, কারও নয়। তবে আমরা শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে টিকিট বিক্রি করছি।
৭ এপ্রিল ১৮৫০০, ৮ এপ্রিল ২৫২০০ এবং ৯ এপ্রিল ২৪৫০০ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে না।
পূর্বাঞ্চল রেলে চলা ট্রেনগুলোর অনেক টিকিট এখনো অবিক্রীত রয়েছে জানিয়ে সফিকুর রহমান বলেন, আমাদের এখন লক্ষ্য, টিকিটধারী যাত্রীদের শতভাগ সেবা নিশ্চিত করে গন্তব্য স্টেশনে পৌঁছে দেওয়া।
এবার বিনা টিকিটের যাত্রী ধরতে, ৪ স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তাকর্মীদের একাধিক টিম স্টেশন, ট্রেনে অবস্থান করবে। অবিক্রীত টিকিটও দ্রুতই শেষ হয়ে যাচ্ছে। অনলাইনে টিকিট পাচ্ছে, তবে প্রতিদিন দেড় কোটির উপরে হিট পড়ায় কোনো কোনো সময় ধীরগতিতে চলে অ্যাপসটি। আমরা সবকিছু চিহ্নিত করছি। ধীরে ধীরে নতুন এ নিয়ম সাধারণ মানুষের প্রিয় হয়ে উঠছে।
রেলের নিজস্ব কোনো আইটি সেল কিংবা অ্যাপস নেই, যা দিয়ে রেল টিকিট বিক্রি করতে পারবে। রেলের নানা ধরনের উন্নয়ন হলেও যাত্রীসেবার প্রথম ধাপ ‘টিকিট বিক্রি’র বিষয়টিই বেসরকারি সংস্থার সহজ লিমিটেডের হাতে।
সহজ লিমিটেডের কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেন যুগান্তরকে বলেন, সাধারণ মানুষের অভিযোগ আসছেই। কিন্তু আমরা শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করছি। টিকিট ধরে রাখার কোনো মাধ্যমই নেই।
প্রতি মুহূর্তে কি পরিমাণ টিকিট বিক্রি হচ্ছে, কতটি টিকিট অবিক্রীত তা রেলকে ডকুমেন্টসহ জানানো হচ্ছে। প্রতি সেকেন্ডে ৫ লাখ হিট নেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে প্রতি সেকেন্ডে ২০ থেকে ২৫ লাখ হিট পড়ছে। ৯ এপ্রিল ৩ মিনিটে ১ কোটি ৮৪ লাখ হিট পড়েছে। এতে সার্ভারের গতি কমছে।
রোববার দুপুরে কমলাপুর স্টেশন কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলছিলেন মামুনুর রশিদ নামের এক টিকিটপ্রত্যাশী। জানালেন, যাদের নিবন্ধন আছে, স্মার্ট মোবাইল, কম্পিউটার আছে-এদের ৯০ শতাংশ অ্যাপসে ঢুকতেই পারছেন না। যাদের এ প্রযুক্তিগুলো নেই, তাদের কী হবে। পাশে থাকা রংপুরগামী যাত্রী বিল্লাল হোসেন জানান, তার কাছে এসবের কিছুই নেই।
কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার যুগান্তরকে জানান, স্টেশনে অনেক লোক আসছেন টিকিট কাটতে। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কিন্তু আমরা তো শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করছি।
রোববার দুপুর ১২টা ১২ মিনিট পর্যন্ত ২৫ হাজার ৭৭৮টি টিকিটের বিপরীতে ২৪ হাজার ৫০০ বিক্রি হয়েছে। চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে আন্তঃনগর ট্রেনের বেশকিছু টিকিট অবিক্রীত আছে।
তিনি বলেন, যারা টিকিট পাচ্ছেন না তাদের জন্য আসনবিহীন টিকিট বিক্রি হবে। ঢাকা-চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর সুবর্ণ এক্সপ্রেস ছাড়া বাকি ৩৬টি আন্তঃনগর ট্রেনে শুধু যাত্রার দিন আসনবিহীন ২৫ শতাংশ টিকিট বিক্রি করা হবে।সূত্র- যুগান্তর