শারদীয় উৎসব কি এবং কেন

সোমবার, অক্টোবর ২৩, ২০২৩

 

           ।। ঝলক চক্রবর্তী ।।

 

নতুন প্রজন্মের জন্য শারদীয় উৎসব কি এবং কেন এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন একজন ডিজিটাল ও স্মার্ট যুগের শিক্ষাক্ষেত্রে নতুনত্ব আনতে গুণগতমানে এগিয়ে নেয়ার জন্য যিনি সার্বক্ষণিক কাজ করেন সিলেট বিভাগের একজন মডেল শিক্ষক “ভূনবীর দশরথ হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি” ঝলক চক্রবর্তী।

*বোধন কি ?
ধর্মীয় মতে শরৎকাল দক্ষিণায়নের সময়,দেবতাদের রাত্রিকালীন প্রহর। এটি পূজার্চনার সঠিক সময় নয়। পূজা করার জন্য দেবীকে অসময়ে জাগিয়ে তুলতে হয়।
এই জাগরণের প্রক্রিয়াকে বলা হয় বোধন বা অকাল বোধন
চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে দেবীকে মর্ত্যালোকে আবাহন জানানো হয়। উল্লেখ্য যে মূল পূজার সময় বসন্তকাল তাই বসন্তকালে দেবীকে বাসন্তীদেবী রুপে আবাহন করেও পূজিত করা হয়।

*নবপত্রিকা কি ?
নয়টি গাছ ১.কলা ২.হলুদ ৩.জয়ন্তী ৪.বেল ৫.ডালিম
৬.অশোক ৭.পান ৮.ধান ও ৯.কচু
পাতাযুক্ত কলাগাছের সঙ্গে উল্লিখিত ০৮ টি গাছের পাতা ও মূল সহ বেঁধে লালপেড়ে শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধুর আকারে সিঁদুর দিয়ে অবয়ব তৈরি করা প্রতিমা। প্রকৃতির গাছপালার প্রতিনিধি হিসেবে মূলত নবপত্রিকার মাধ্যমে প্রকৃতিরই পূজা করা হয়।

*কেন তিনি দশভুজা ?
পূর্ব,পশ্চিম,উত্তর,……. এভাবে দশ দিকের কথা আমরা জানি। মূলত শত্রুপক্ষের দশ দিক থেকে আগত বিপদের আশাংঙ্কাকে মোকাবেলা করতেই প্রতীকী হিসেবে দশ হাত বা দশভুজা করে দেবীকে উপস্থাপন করা হয়েছে।

* বাহন হিসেবে প্রাণীকূল কেন ?
সিংহ,মহিষ,ইঁদুর,পেঁচা,হাঁস,ময়ুর ও সাপ এরা সবাই প্রাণীজগতের প্রতিনিধি। দেবী দুর্গার সাথে এদেরও পূজা করার অর্থ শুধু প্রকৃতি নয়,দেবলোক, প্রাণীলোক ও প্রকৃতি জগতের সকল কিছুর মহামিলনে সৃষ্ট মহাজাগতিক শক্তির পূজাই দুর্গাপূজা।

অসুরদের দলপতি মহিষাসুরকে বধ করে দেবকুল রক্ষা করেছিলেন দেবী দুর্গা। তাই তিনি সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সংগ্রামকারীদের আদর্শ ও অনুপ্রেরণার প্রতীক।

*কেন দেবী দুর্গার বাহন সিংহ ?
সিংহ ক্রোধ ও ক্ষিপ্রতার প্রতীক। অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হতে চাইলে শক্তি,রাগ ও ক্ষিপ্রতারও প্রয়োজন।

*কেন সিদ্ধিদাতা গণেশের বাহন ইঁদুর ?
সব প্রাণীকে জালে আটকানো গেলেও ইঁদুরই একমাত্র যে জাল কেটে বের হয়ে আসতে পারে। সিদ্ধির জন্য, সাফল্যের জন্য শত্রুর ষড়যন্ত্রের জাল ঠিক ইঁদুরের মতোই ছিন্ন করে আসতে হবে।

*কেন কার্তিকের বাহন ময়ূরপঙ্খী ?
ময়ুরই একমাত্র পাখি যার তারুণ্য ও সৌন্দর্য কখনও নষ্ট হয় না।পাখিকুলের মধ্যে ভয়ংকর যোদ্ধা পাখিদের সম্রাট”ময়ুর”
কার্তিক দেবতাও ঠিক তেমনি সৌন্দর্য, তারুণ্য ও পরাক্রমশালী যোদ্ধার প্রতীক।

*কেন সাপের অবস্থান ময়ুরপঙ্খীর পায়ের নিচে ?
সাপ হচ্ছে গোপন ষড়যন্ত্রের প্রতীক,ময়ুর নিমিষেই সকল ষড়যন্ত্র দমন করে পদদলিত করতে পারে,তাই এরুপ।

*কেন সরস্বতীর বাহন রাজহাঁস ?
দুধ এবং জল একত্র মিশিয়ে দিলে একমাত্র রাজহাঁসই দুধকে আলাদা করে পান করতে পারে। সমাজে ভাল-মন্দ সবই রয়েছে,তোমাকে মন্দটি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ভালোটি গ্রহণ করা শিখতে হবে। সরস্বতী দেবীই হলেন সমাজের মন্দটি বাদ দিয়ে সুশিক্ষা অর্জনের পথিকৃৎ।

*সরস্বতী দেবীর বীণা কিসের প্রতীক ?
বীণা হচ্ছে শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতীক, যা মানুষকে সাধারণ থেকে অসাধারণের অনন্য উচ্চতায় আরোহন করাতে পারে।

*কেন লক্ষী দেবীর বাহন পেঁচা ?
পেঁচা যা কঠিন অন্ধকারেও দেখতে পায়। ধনদেবী লক্ষীর কল্যাণে যারা ধন ও সম্পদশালী হয়,তাদের জীবনে কঠিন বিপদের মুহূর্তেও ধন ও সম্পদের কল্যাণে তারা পথ দেখতে পায়,বিপদমুক্ত হতে পারে।
পেঁচা দিনের বেলা দেখতে পায়না,তাই নিজেকে লুকিয়ে রাখে। ঠিক ধন সম্পত্তিও গোপনে লুকিয়ে রাখতে হয়,যাতে বিপদের সময় কাজে লাগে।

*কেন মহিষাসুর ?
বাঘ ও সিংহ এর চেয়ে শারীরিক শক্তিতে মহিষ অনেকটা এগিয়ে। বর্ণিত আছে অসুর যে কোন রুপ ধারণ করতে পারে। তাই অসুর সবচেয়ে শক্তিশালী ‘”মহিষ” রুপ ধারণ করে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়।