শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা কেনা যায় না- ইউজিসি চেয়ারম্যান

শুক্রবার, জুন ২৮, ২০২৪

আব্দুল বাসেদ, নোয়াখালী।। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেছেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা কখনো কেনা যায় না। এটা মানুষের মৌলিক অধিকার ও সেবাপ্রাপ্তির বিষয়। জাপানে পড়তে গিয়ে দেখেছি, সেখানে কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স এসে পৌঁছানোর পর থেকে ওই ব্যক্তি ও তার পরিবারের আর কোনো বিষয় নিয়ে ভাবতে হয় না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই সব ধরনের সেবা প্রদান করে। একইভাবে অভিভাবকরা সন্তানকে স্কুলে দেয়ার পর তার লেখাপড়া নিয়ে আর চিন্তা করতে হয় না। নাগরিকদের জন্য এ দুটি সেবা নিশ্চিত করতে পারলে অন্য অনেক সমস্যার স্বয়ংক্রিয় সমাধান হয়ে যায়।

 

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন: চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণ’ শীর্ষক নলেজ শেয়ারিং কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

 

কর্মশালার উদ্বোধনকালে উচ্চশিক্ষার বরাদ্দ বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, উচ্চশিক্ষায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে জাতীয় বাজেটে উচ্চশিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর বিকল্প নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শিক্ষা খাতের বিনিয়োগকে সর্বোৎকৃষ্ট উল্লেখ করেছেন। যদিও বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এ দর্শনের ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়নি। উচ্চশিক্ষায় কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ না পাওয়ায় গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন চাহিদার আলোকে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ সময় তিনি ইউজিসির ক্ষমতায়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু ও নিয়ম মেনে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার পরামর্শ দেন।

নোবিপ্রবির ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স সেলের সেমিনার কক্ষে ইউজিসির বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) কমিটি এ কর্মশালার আয়োজন করে। ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোবিপ্রবির উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ দিদার-উল-আলম ও উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী। কমিশনের এপিএ ফোকাল পয়েন্ট বিষ্ণু মল্লিক এর সঞ্চালনায় এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নোবিপ্রবি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন এবং নোয়াখালী সায়েন্স এন্ড কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আফতাব উদ্দিন। উক্ত কর্মশালায় বিভিন্ন সেশনে নোবিপ্রবির এপিএ আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সেলিম হোসেন ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এপিএ ফোকাল পয়েন্ট মো. নাসির উদ্দিন নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিএ কার্যক্রম তুলে ধরেন। অনুষ্ঠান শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য দেন ইউজিসির অতিরিক্ত পরিচালক মো. শাহীন সিরাজ।

 

কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নোবিপ্রবির উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ দিদার-উল-আলম বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার পর শুদ্ধাচারসহ নানা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তারপরও তা নীতি-নৈতিকতায় খুব বেশি ইতিবাচক উন্নয়ন ঘটছে না। এর কারণ হচ্ছে চাকরিতে প্রবেশের আগে একজন মানুষ যে উপায়ে, পরিবেশে ও শিক্ষায় বেড়ে ওঠে কর্মক্ষেত্রেও তার প্রতিফলনই ঘটছে। আমরা কেউই ভুলের উর্ধ্বে নয়। তবে সবার চেষ্টা থাকতে হবে, কত কম ভুলের মাধ্যমে জীবন পরিচালনা করা যায়। বিশেষ করে লোভ, হিংসা ও প্রতিহিংসার মতো বিষয়গুলো সর্বোচ্চ পরিহার করতে হবে।

 

নোবিপ্রবির উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী বলেন, এপিএ বিষয়ক এ কর্মশালা আয়োজনের জন্য নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে বেছে নেয়ায় আমরা ইউজিসির প্রতি কৃতজ্ঞ। আজকের এ কর্মশালার মাধ্যমে কমিশনের কর্মকর্তাগণের সঙ্গে ও বিশ^বিদ্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ মত বিনিময়ের সুযোগ পাবে। পরিকল্পনা ও উন্নয়ন এবং বাজেট সংক্রান্ত নানা কাজে কমিশন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে সব সময় সহযোগিতার হাত বাড়ায়, এজন্য চেয়ারম্যান মহোদয়সহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাই।

 

প্রফেসর ড. আফতাব উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মানেই হলো গবেষণা। তাই গবেষণাকে দিতে হবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আর কারিগরি শিক্ষাকেও প্রাধান্য দিতে হবে। না হয় দেশ এগোবে না। শিক্ষার বাজেট আরও দশগুণ বাড়াতে হবে। পৃথিবীর কোথাও এত কম বাজেট নেই। এছাড়া কারিগরি শিক্ষার পাশাপাশি কৃষিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

 

কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্যে নোবিপ্রবি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষাসহ যাবতীয় একাডেমিক কার্যক্রম যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হয়। প্রশাসনিক কার্যক্রমেও আমরা ইতিমধ্যে ডি-নথি পদ্ধতি চালু করেছি। এছাড়া আমাদের ডিজিটাল মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এর ফলস্বরুপ নোবিপ্রবি এপিএর বিভিন্ন সূচকে এগিয়ে রয়েছে।

 

অনুষ্ঠান সভাপতি ড. ফেরদৌস জামান বলেন, এপিএ কার্যক্রমের বিভিন্ন সূচকে নোবিপ্রবি ভালো করছে। দিনে দিনে আরো ভালো করবে, এই প্রত্যাশা ইউজিসির। আমাদের প্রিয় মার্তৃভূমিকে গড়ে তুলতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তা অনুসরণ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দের উচিৎ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

 

ইউজিসির এপিএ কর্মপরিকল্পনা (২০২৩-২৪) এর আওতায় অনুষ্ঠিত কর্মশালায় ইউজিসি, নোবিপ্রবি ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিএর ফোকাল পয়েন্ট ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ, নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি ও অফিসার্স সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দপ্তর প্রধানবৃন্দ অংশ নেয়।

 

উল্লেখ্য, কর্মশালা শেষে ইউজিসির মাননীয় চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর নোবিপ্রবি গ্রন্থাগার, বঙ্গবন্ধু কর্ণার, বিজিই ল্যাব, টেকনোলজি ফেস্টিভ্যাল পরিদর্শন করেন ও গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।