জাতির সংবাদ ডটকম।। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলাকালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) রামপুরা ভবনে ব্যাপক হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা মামলায় বিএনপি নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ ছয়জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
কারাগারে পাঠানো অপর আসামিরা হলেন- ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল আলম নীরব, দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মজনু, ১২ দলের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা, মহিউদ্দিন হৃদয় ও তরিকুল ইসলাম।
আজ শুক্রবার (২ আগস্ট) চার দিনের রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খিলগাঁও জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদার তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবীর তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে ২৯ জুলাই তাদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এদিন বনানী থানায় সেতু ভবনে মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষে না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে, বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর রামপুরায় বিটিভি ভবনে অগ্নিসংযোগের মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো পূর্বক দশ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আদালত তাদের গ্রেফতারের আবেদন মঞ্জুর করে শুনানি শেষে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
তারও আগে গত ২৪ জুলাই তাদের বনানী সেতু ভবনের মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ১৮ জুলাই বিটিভির রামপুরা অফিসে হামলার ঘটনা ঘটে। পরের দিন বিটিভির ঢাকা কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজা আক্তার বাদী হয়ে রামপুরা থানায় একটি মামলা করেন। মামলাটি পেনাল কোডের /১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/১৮৬/৩৫৩/৩৮৪/৪৩৬/৩০৭/১০৯/১১৪/৫০৬সহ ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩) ধারায় দায়ের করা হয়।
মামলার অভিযোগে বাদী মাহফুজা আক্তার আরও উল্লেখ করেন, গত ১৮ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টার সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন লেখা সম্বলিত ব্যানার নিয়ে ডিআইটি রোডগামী রামপুরা ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও বিটিভি ভবনের সামনের সড়কে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা তাদের বুঝিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে দেন। এরপরই বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণে অজ্ঞাতনামা তিন-চার হাজার কর্মী বেআইনি জনতায় দলবদ্ধ হয়ে সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
আসামিরা দায়িত্বরত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের বাধা উপেক্ষা করে অবৈধভাবে বিটিভি ভবনের প্রধান চারটি গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে এবং জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টির লক্ষ্যে ভবনের ভেতর ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। টেলিভিশন ভবনে কর্মরত বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নাম ও পদবি উল্লেখ করে খোঁজাখুঁজি করে প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে। একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পরিকল্পিতভাবে অন্তর্ঘাতমূলক সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে ‘ক’ শ্রেণির কেপিআইভুক্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনের ভেতরে থাকা সরকারি মালামাল ভাঙচুর ও ক্ষতিসাধন করে। যার ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৫০ কোটি টাকা। একপর্যায়ে পুলিশ ও বিজিবি রাত ৯টার দিকে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা লুটপাট, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস ও হত্যার উদ্দেশে লাঠিসোটা ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবৈধভাবে বিটিভি ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর তারা ভবনটিতে আক্রমণ চালায় এবং ইট পাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। একই সঙ্গে চলে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ-
মামলার এজহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি সম্প্রচারকাজে নিয়োজিত পোর্টেবল ডিএসএনজি সিস্টেমের সব সম্প্রচার যন্ত্রপাতি এবং এসব যন্ত্রপাতি পরিবহন কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস, কেন্দ্রীয় শীতাতপ ব্যবস্থার প্রভূত ক্ষতিসাধন ও অগ্নিসংযোগ, ১৭টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ৯টি গাড়ি ভাঙচুর, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২১টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর, বিটিভির মূল ভবনের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট, ঢাকা কেন্দ্রের রিসিভশনে অগ্নিসংযোগ, ট্রান্সপোর্ট ভবনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর, ক্যান্টিনে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট এবং ভাঙচুর, অডিটোরিয়ামে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর, মেকআপ শাখা ভাঙচুর, ডিজাইন শাখার মেকআপ (ওয়ার্কশপ, স্টোর, ওয়ারড্রব ও গ্রাফিক্স রুম) রুমে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট। এতে বিটিভির ৫০ কোটি টাকা ক্ষতি সাধন হয়।