সকলের জন্য ন্যায্য, অন্তর্ভূক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব শহর গড়ে তোলার আহবান

বুধবার, মে ২১, ২০২৫

জাতির সংবাদ ডটকম।।

ন্যায্য, অন্তর্ভূক্তিমূলক, দূষণমুক্ত, প্রাণবন্ত, বসবাস উপযোগী খুলনা শহর গড়তে হলে শিশু থেকে বৃদ্ধ – সবার জন্য সমতাভিত্তিক ও উপযোগী খেলাধুলা, বিনোদন, শরীর চর্চা ও সামাজিকীকরণ, কর্মসংস্থান, শিক্ষার সুযোগ থাকতে হবে। নাগরিক অধিকার, সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য খুলনা শহরে বিদ্যমান সংশ্লিষ্ট সকল সরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে। এসব কাজে তরুণসহ সকল নাগরিকদের অধিকার ও দায়িত্ব সচেতন হতে হবে। তবেই অন্তর্ভূক্তিমূলক ন্যায্য, প্রাণবন্ত ও পরিবেশবান্ধব খুলনা শহর নিশ্চিত করা যাবে। একইসঙ্গে, সমন্বিত প্রচেষ্টায় দূষণমুক্ত পরিবেশ, জলাশয় ও উন্মুক্ত স্থান, পর্যাপ্ত গণপরিবহন, হাাঁটা ও সাইকেল চালানোর সুযোগসহ সবার ব্যবহার উপযোগী পরিবেশ রাখতে হবে।

 

আজ খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত “Fair Urban Transition in Khulna: Possibilities, Responsibilities, and the Way Forward” শীর্ষক দিনব্যাপী সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ আলোচকগণ এ অভিমত ব্যক্ত করেন। এ সম্মেলনে মূলত ন্যায়সঙ্গত শহরের রূপান্তরের সম্ভাবনা, নাগরিক ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব ও করণীয় বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি), খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ), খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি), খুলনা ওয়াসা, খুলনা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি., সমাজসেবা অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি, সিরাক বাংলাদেশ, সিয়াম, আরডিআরসি’র যৌথ উদ্যোগে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সম্মেলনে ‘ন্যায়্য নগরে উত্তরণ এবং খুলনা নগরে এর তাৎপর্য’ শীর্ষক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, “উন্নয়ন তখনই টেকসই হয় যখন তা মানুষের প্রয়োজন, পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে পরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়িত হয়।” স্বাগত বক্তব্যে WBB ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, “সবার জন্য ন্যায্য নগর নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসন, নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানসমূহের সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি।” প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুষার কান্তি রায়। তিনি বলেন, “ন্যায্য নগর রূপান্তর মানে শুধুমাত্র অবকাঠামো নয়, তা একটি চিন্তার রূপান্তরও, যেখানে প্রতিটি মানুষ এবং অঞ্চল সমান সুযোগ পায়।”

সম্মেলনে ৬টি পৃথক সেশন অনুষ্ঠিত হয়। ন্যায্য নগর নিশ্চিতে ‍তরুণদের সম্পৃক্ততা, স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততায় ন্যায্য ও অন্তর্ভূক্তিমূলক নগর, সকলের জন্য বাসযোগ্য শহর, জলবায়ু বিপর্যয় এবং ন্যায্য নগরে উত্তরণ, কর্মসংস্থান: সমস্যা ও সমাধান, নগরে ন্যায্যতা নিশ্চিতে সকল অংশীজনের সমন্বয় – – – প্রেক্ষিত খুলনা শীর্ষক সেশনগুলোতে আয়োজক ১৪টি সংস্থার প্রতিনিধিরা আলোচনা করেন। এছাড়া, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), সিভিল সার্জন অফিস, জেলা প্রশাসন, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা আইনজীবী সমিতি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ভাইটাল স্ট্রাটেজিস, খুলনা প্রেসক্লাবসহ খুলনার স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। এ সম্মেলনে শিক্ষাবিদ, গবেষক, পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশবিদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি বিশেষজ্ঞগণ বিভিন্ন সেশনে আলোচনা করেন। এছাড়া শিশুদের চোখে ন্যায্য শহর বিষয়ক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এতে শতাধিক শিশুকিশোরের আঁকা ছবি প্রদর্শিত হয়।

সমাপনী অনুষ্ঠানে অতিথি উপস্থিত ছিলেন কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার। তিনি ছাত্রছাত্রীদের সচেতনতামূলক বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন এবং সেসব বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি শহরকে নিরাপদ করতে সকলের সহযোগিতা প্রত্যোশা করেন। বক্তব্য রাখেন খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মো. হোসাইন শওকত। তিনি বলেন, “এই ধরনের সম্মেলন ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নির্ধারণে প্রশাসনের জন্য দিকনির্দেশক ভূমিকা রাখে।” আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শিল্পী রায়, কেসিসি’র সচিব শরীফ আসিফ রহমান কাঙ্খিত শহরের প্রয়োজনীয়তা ও করণীয় বিষয়ে প্রবন্ধ তুলে ধরেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন খুলনা সিটি করপোরেশন, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনা ওয়াসা, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, পরিবেশ অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তর, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। আলোচকরা নগরের যুবসম্পৃক্ততা, স্বাস্থ্যকর নগর পরিকল্পনা, কর্মসংস্থান সমস্যা, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ এবং নগর ন্যায্যতায় স্থানীয় জনগণের ভূমিকা নিয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

সম্মেলনের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন WBB ট্রাস্টের স্বাস্থ্য অধিকার বিভাগের প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমান। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সিয়ামের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট মো. মাসুম বিল্লাহ এবং সভাপতিত্ব করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন ড. আশরাফুল আলম।

সম্মেলনে বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণের মাধ্যমে খুলনার টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ন্যায্য নগর রূপান্তরের পথনকশা তৈরিতে একধাপ এগিয়ে গেল বলেই আয়োজকেরা অভিমত দেন।