
নিজস্ব প্রতিবেদক
কন্যার মৃত্যুর প্রায় ১৫ বছর পর এসে রহস্য উদঘাটন ও দায়ীদের সুষ্ঠু বিচার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়েছেন একজন বাবা। সঙ্গে ছিলেন আরেক কন্যা। সেই বাবার নাম আব্দুল হামিদ, তিনি খুলনার পাইকগাছা এলাকার বাসিন্দা। তার অভিযোগ, বর্তমানে খুলনার এপিবিএন এ কর্মরত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম তার কন্যার মৃত্যুর জন্য দায়ী। তরিকুলের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করা অবস্থায় তার মেয়ে মিনা খাতুন ২০১০ সালে মৃত্যুবরণ করে। তখন প্রভাব খাটিয়ে লাশ দেখতে না দিয়ে তড়িঘরি করে দাফন করে দেয়। তবে বাবা আব্দুল হামিদ মনে করেন, নির্যাতন করে তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর প্রেসক্লাবের সামনে তিনি দাঁড়িয়েছেন বিচার নিশ্চিতের দাবিতে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া লিখিত অভিযোগে ও প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থানকালে তিনি বলেন, আমি গ্রামের অশিক্ষিত ভ্যানচালক। অন্যদিকে এসপি মোঃ তরিকুল ইসলাম একজন প্রভাবশালী, হিংস্র, খুনী, পুলিশ কর্মকর্তা। ২০১০ সালের দিকে তিনি ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের এসএসএফ বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন এবং ন্যাম ভবনে বসবাস করতেন। তরিকুলের বাবা আবুল কালাম ভুক্তভোগী বাবার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন।
তৎসময়ে আবুল কালাম তার ছেলে ও বৌমার দেখাশুনা ও বাড়ীর কাজের জন্য লোক চাইলে আব্দুল হামিদ তার সেঝ মেয়ে মিনা খাতুনকে তরিকুলের ঢাকার তেজগাঁওয়ের বাসাতে পাঠায়। সেখানে মিনা খাতুন কাজ শুরুর এক মাসের মাথায়ই এক দিন তার মায়ের কাছে ফোন করে জানায় যে, এসপি তরিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। মেয়ের অভিযোগ শুনে তরিকুরের বাবাকে বলে মেয়েকে দেখার জন্য গ্রামের বাড়িতে ফেরত নিয়ে আসেন আব্দুল হামিদ। কিছু দিন পর তরিকুলের বাবা-মা তাদের বাড়ি গিয়ে অনুরোধ করে ও ভাঙ্গা ঘর মেরামতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মিনা খাতুনকে পুনরায় তরিকুলের বাসায় কাজের জন্য পাঠায়। এরপর ২০১০ সালের ৬ নভেম্বর আব্দুল হামিদকে জানানো হয়, মিনা ডায়রিয়ায় অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। মেয়ের লাশ আনতে ঢাকায় গেলে আব্দুল হামিদকে পুলিশের গাড়িতে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন মেয়েকে কাফনের কাপড় পড়ানো। কিছুক্ষণ পর এ্যাম্বুলেন্সে লাশ নিয়ে ভোর ৬টায় তরিকুলের বাবার উপস্থিতিতে দাফন করা হয়। এসময় পরিবার ও এলাকাবাসীকে লাশ দেখতে পর্যন্ত দেয়া হয়নি।
গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে তরিকুলের বাবা ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, মিনা খাতুন আত্মহত্যা করেছিল। এ খবর শুনে বিস্মিত হন আব্দুল হামিদ। মেয়ের মৃত্যুর ১০ বছর পর তিনি জানলেন তার মেয়ে ডায়রিয়ায় মৃত্যুবরণ করেনি, করেছে আত্মহত্যা।
আব্দুল হামিদ বলেন, মৃত্যুর সময় মিনা খাতুনের বয়স ছিল ১৪ বছর। তার এমন কোনো সমস্যা ছিল না যে সে হতাশাগ্রস্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। যে কারণে মুনা খাতুনকে হত্যার অভিযোগে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলার আবেদন করেন করেন। মামলা নম্বর- ১৩৭/২০২৫। বিচারক মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) আদেশ দিয়েছেন।