‘সমাজে টিকে থাকতে হলে লড়াই করে যেতে হবে’

শনিবার, মার্চ ১১, ২০২৩

      ।। একান্ত সাক্ষাৎকার।।

আউয়াল চৌধুরী প্রথিতযশা সাংবাদিক লেখক গবেষক ও সংগঠক। ১৯৮২ সালের তেশরা অক্টোবর তিনি ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানার কাশিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্কুল জীবন থেকেই তিনি গল্প প্রবন্ধ লিখার মাধ্যমে লেখালেখির চর্চা শুরু করেন। এরপর মফস্বলে এসে ফেনী কলেছে পড়াকালিন সময়ে কলেজের সাহিত্য ম‍্যাগাজিনে সহ সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। এছাড়া দৈনিক হাজারিকা পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হয়ে নিয়মিত লেখালেখি চালিয়ে যান। পরবর্তীতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঢাকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। নানা মাধ্যমে কাজ করেছেন এই সাংবাদিক। যুক্ত রয়েছেন বজ্রপাতে সৃষ্ট ক্ষতি নিয়ে প্রান্তীক মানুষের জীবন মান উন্নয়নে গবেষণা কার্যক্রমের সঙ্গে। তিনি বর্তমানে একুশে টেলিভিশনে সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত আছেন। রিপোর্ট তৈরি করা প্রবন্ধ লেখার পাশাপাশি তিনি গল্প উপন্যাস লিখে চলেছেন। ২০২৩ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার একটি উপন্যাস ‘আফসানা’।

 

সামগ্রিক বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন রিপোর্টার রাসেল আহমেদ।

 

আপনি দীর্ঘদিন থেকে লেখালেখি করছেন। লেখালেখি টা কেমন এনজয় করছেন? কোন সময়টাতে লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?

 

হ্যাঁ, লেখালেখি এটা একেবারেই আত্মার সঙ্গে মিশে আছে। নিয়মিত লেখার চেষ্টা করি। ছোটবেলা থেকেই চলছে। এখনো অব্যাহত আছে। লিখতে ভালো লাগে। রিপোর্ট তৈরি করা, গল্প লেখা, বইমেলায় উপন্যাস বের করা সব মিলিয়ে লেখার মাঝেই আছি। আমি লেখালেখিটাকে বেশ এনজয় করি। লিখার জ‍ন‍্য আমার নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। যখন সুযোগ পাই তখনই লিখি। বিশেষ করে এখন স্মার্টফোনেই বেশি লিখা হয়। যেখানে যাই কাজের ফাঁকে একটু সময় পেলে লিখা শুরু করি। তবে রাতের বেলা নিরিবিলি পরিবেশে লিখতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।

 

আপনার উপন‍্যাসে ধর্ষীত এক নারীকে তুলে ধরেছেন। এটি কি বাস্তব কোনো ঘটনা নাকি কল্পনা? সমাজের জন‍্য কি ম‍্যাসেজ রয়েছে?

 

আমাদের সমাজে এমন ঘটনা অহ রহ ঘটছে। উপন্যাসে যে নারীটি এসেছে সেটা আসলে বাস্তব ঘটনার সঙ্গে মিল রেখে করা হয়েছে। এই সমাজে নারীর এককী পথচলা অনেক কঠিন। পদে পদে বিপদ আর বাধা। আর সেখানে কোনো নারী ধর্ষীত হলেতো কথাই নেই। তার পথ চলা আরও বেশি সংকুচিত হয়ে যায়। এ ধরনের একটি ঘটনাকে তুলে ধরা হয়েছে। বলা যায় উপন্যাসটি সমাজেরই প্রতিবিম্ব। গল্পের লড়াইটা শুধু আফসানার নয়, এটি সব নারীদের। পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে আমাদের একজন নারী চাইলেই অনেক কিছু করতে পারেনা। সুতরাং লড়াইটা নিজের, অন্যকে দিয়ে এটি হবে না। আফসানার একটি অনাকাঙ্খিত সন্তান হয় যা এই সমাজের কেউ গ্রহণ করতে পারেনি। কিন্তু সে সমাজ থেকে বিচ‍্যুত হয়েও থেমে যায়নি। নিজের লড়াই চালিয়ে গেছে। এটি সমাজের জন‍্য বিশাল ম‍্যাসেজ। নিজের জীবনে অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে তাই বলে থেমে যাওয়া যাবে না। নিজেকে শেষ না করে লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে। নিজের পথ করে নিতে হবে। এবারের বই মেলায় উপন‍্যাসটি ভাল বিক্রি হয়েছে। এটি আমার জন্য ভালো লাগার একটি বিষয়।

 

আপনি অর্থনৈতিক বা উন্নয়ন সাংবাদিকতা করেছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলুন?

 

বাংলাদেশ জনবহুল একটি দেশ। অর্থনৈতিক আকারও এর অনেক বড়। দিনে দিনে সেটি আরও বিস্তৃত হচ্ছে। এখানে মানুষ বেশি কিন্তু একটা সমস্যা আমার কাছে প্রকট মনে হয়, সেটি হল সঠিক পরিকল্পনার অভাব। এখানে পরিকল্পনামাপিক কাজ হয় কম। আজকে যা করছে কালকে সেটি অকেজো মনে হয়। এটি অর্থনীতির জন‍্য অশনি সংকেত। এ কারণে কোটি কোটি টাকা খরচ করে যা করা হয় অনেক ক্ষেত্রে সেটি লাভের চেয়ে ক্ষতিই হয়ে থাকে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে প্রতিনিয়ত শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। কর্মসংস্থান বাড়ছে না। ফলে বোঝা বাড়ছে। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট কাজে লাগাতে পারছে না। এ জন্য দরকার জোন ভাগ করে ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করা। কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারলে, বেকারদের কাজে লাগাতে পারলে দেশের চেহারায় পাল্টে যাবে।

 

আপনি শিল্পসাহিত্য চর্চা করেন। বিনোদন সাংবাদিকতা করেছেন। নাটক, সিনেমায় কাজ করেছেন। বাংলাদেশের সিনেমা শিল্প দাঁড়াচ্ছে না কেন?

 

একসময় আমাদের চলচ্চিত্র অনেক সমৃদ্ধ ছিল। প্রায় ১২শত হল ছিল। এখন আছে দেড়’শ এর মতো। অবস্থা খুবই খারাপ। সিনেমার এখন সবচেয়ে বড় সংকট হল অর্থ। এখানে অর্থলগ্নীকারী লোকজনের বড়ই অভাব। আর এই কারণে দেখা যাচ্ছে আমাদের এখন ভালো সিনেমা হচ্ছে না। ভালো সিনেমা না হওয়ার অন্যতম একটা কারণ হলো টাকা পয়সা। যেমন ধরেন ইন্ডিয়াতে একটা সিনেমা তৈরি হচ্ছে কয়েক’শ কোটি টাকা থাকে বাজেট। সেখানে আমাদের এখানে বাজেট হয় ৫০ লাখ ৬০ লাখ টাকা। কিন্তু এত কম টাকায় সিনেমা আসলে হয় না। আমাদের এখানে আর্টিস্ট আছে। আমার কাছে মনে হয় যে আর্টিস্টের অভাব নেই, ভালো মানের শিল্পী আছে। সবকিছুই আছে কিন্তু এখানে বাজেট নির্ভর সিনেমা তৈরি হচ্ছে না। প্রযোজক যারা তারা যদি এগিয়ে আসেন বা অর্থের যদি ব্যবস্থা করেন অথবা সরকার যদি এক্ষেত্রে সহযোগিতা করে তাহলে সিনেমা শিল্প দাঁড়াবেই। আর একটি বিষয় হলো আমাদের সিনেমা হল গুলো একে একে বন্ধ হয়ে যাওয়াতে সংকটটা অনেক বেশি হয়ে গেছে। ভালো সিনেমা তৈরিতে কেউ আগ্রহীও হচ্ছে না। এই কারণে সারাদেশেই জেলাগুলোতে সিনেফ্লেক্স তৈরি করা দরকার। বলা যায় বহুমুখী একটা সংকটই চলছে। এসব উত্তরণ করতে পারলে এ শিল্পটা আবার ঘুরে দাঁড়াবে।