জাতির সংবাদ ডটকম।।
বার বার অগ্নি দুর্ঘটনায় গণমৃত্যু, সরকারের দায় ও মানুষের জীবন নিয়ে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান সমূহের দায়িত্বহীনতা’র প্রতিবাদে আজ মিডিয়া ব্রিফিং করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টি। ব্রিফিংয়ে এবি পার্টির নেতৃবৃন্দ বলেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কার্যক্রমের ২০২২ ও ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সারা দেশে এই দুই বছরে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৬৩টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আগের ১৪ মাস ১০ দিনে সারা দেশে অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছেন ১৪৫ জন। ২০২২ সালে সারা দেশে ২৪ হাজার ১০২টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৩৪২ কোটি টাকার বেশি সম্পদ পুড়েছে।
এর আগের বছর ২১ হাজার ৬০১টি অগ্নিকাণ্ডে ২১৮ কোটি টাকার সম্পদ পুড়ে যায়। আর ২০২০ সালে সারা দেশে ২১ হাজার ৭৩টি আগুনের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২৪৬ কোটি টাকা।
অন্যদিকে অগ্নিকাণ্ডে ঢাকাকে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ শহর হিসেবে ঘোষণা করার পরেও সরকার ও সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থা সমুহের টনক নড়ছে না। এর মূল কারণ সংস্থা সমুহের কর্মকর্তাদের দূর্নীতি ও সরকারদলীয় বাহিনীর চাঁদাবাজি।
যুগ্ম সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদের সঞ্চালনায় মিডিয়া ব্রিফিংটিতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবি পার্টির যুগ্ম আহবায়ক ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, যুবপার্টির আহবায়ক এবিএম খালিদ হাসান ও সহকারী সদস্যসচিব ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ লোকমান।
অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, যেকোনো রেষ্টুরেন্ট চালাতে দশটি সংস্থার অনুমোদন লাগে। বছর বছর ধরে ঢাকার রেষ্টুরেন্ট চলছে এই সংস্থা গুলোর কোন ভুমিকা নাই, একটা দুর্ঘটনা ঘটার পর এক সংস্থা আরেক সংস্থার উপর দায় চাপিয়ে নিজেরা বাচার চেষ্টা চলছে। অগ্নিকাণ্ডে মানুষ মরছে, মরার পর আমরা শুনতে পাই মৃত, আহত ব্যক্তিদের খবর রাখছেন প্রধানমন্ত্রী। এটি জনগণের সাথে তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের পর এখন প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করা বাদ দিয়ে নিরপরাধ সাধারণ রেষ্টুরেন্ট কর্মচারীদের গ্রেফতার করে হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা সাউন্ড গ্রেনেড কিনতে পারেন অথচ ফায়ার বল কিনতে পারেন না। এই ধরনের অনিয়ম নিয়ে একটি জাতি চলতে পারেনা। অবিলম্বে ফায়ার সার্ভিসকে সকল যন্ত্রপাতি দিয়ে সক্ষম করে গড়তে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা সমুহের সমন্বয়ে একটা রিভিউ কমিটির মাধ্যমে সকল ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সমুহ পর্যবেক্ষণ করে একমাসের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা সমুহ ভেঙ্গে ফেলতে হবে।
তিনি অবিলম্বে সকল নিরিহ মানুষকে হয়রানি বন্ধ করে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানান।
ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, জনবহুল স্থান সমুহে আগুন নির্বাপক সিস্টেম চালু করতে হবে। এটা কোন কঠিন বিষয় নয়। এক সপ্তাহের মধ্যে এই ব্যবস্থা করা সম্ভব। ওয়াসার উদ্যোগে জনবহুল জায়গা গুলোতে আলাদা ভাবে অগ্নিনির্বাপক লাইন তৈরী করে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি শহরে সেচ্ছাসেবক ট্রেনিং দেওয়ার ব্যবস্থা নেন। তিনি অবিলম্বে নিরিহ রেষ্টুরেন্ট কর্মচারীদের গ্রেফতার বা হয়রানি বন্ধ করার দাবি জানান। এই সমস্ত নাটক বন্ধ করুন এগুলোর মাধ্যমে কি হয় আমরা সবাই জানি। রমজানের আগে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে নতুন বানিজ্য শুরু হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডকে পুজি করে লুটপাট বানিজ্য শুরু হয়েছে। কোন অগ্নিকাণ্ডের কোন ঘটনার জন্য রেষ্টুরেন্টের সাধারণ কর্মচারীরা দায়ী নয়, দায়ী যে সমস্ত সরকারি কর্মকর্তারা ঘুষ খেয়ে, দূর্নীতি করে এই রেষ্টুরেন্ট সমুহের অনুমোদন দিয়েছে, গ্রেফতার করলে তাদের করতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ লোকমান ঢাকার বিভিন্ন স্থাপনার প্রযুক্তিগত ত্রুটি সমুহ উপস্থাপন করে অবিলম্বে এগুলো সংশোধন করার আহবান জানান।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তরের আহবায়ক আলতাফ হোসাইন, কেন্দ্রীয় সহকারী সদস্যসচিব শাহ আব্দুর রহমান, মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক গাজী নাসির, যুগ্ম সদস্যসচিব আহমাদ বারকাজ নাসির, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হালিম নান্নু, যুবপার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্যসচিব মাহমুদ আজাদ, উত্তরের সদস্যসচিব শাহীনুর আক্তার শীলা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফেরদৌসী আক্তার অপি, সুমাইয়া শারমিন ফারহানা, রিপন মাহমুদ, যাত্রাবাড়ী থানার সমন্বয়ক সিএম আরিফ সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।