সাংবাদিক হাসান মেহেদীর মৃত্যুর তদন্ত ও বিচার দাবি রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের

বুধবার, জুলাই ২৪, ২০২৪

জাতির সংবাদ ডটকম।।
কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত  ঢাকা টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মেহেদীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের দাবি জানিয়েছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস—আরএসএফ।

গত ১৮ জুলাই রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে সাংবাদিক হাসান মেহেদীর মৃত্যুর পরদিন ১৯ জুলাই বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের নিয়ে কাজ করা এ আন্তর্জাতিক সংগঠনটি এক বিবৃতিতে এই দাবি জানায়।

বিবৃতিতে আরএসএফ বলেছে, সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহাল করার হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের ফলে শুরু হওয়া আন্দোলন গত ১৫ জুলাই থেকে সহিংস রূপ নেয়। এসময় পুলিশ, ছাত্র এবং সরকার সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে সংবাদ সংগ্রহের সময় ১৮ জুলাই ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক হাসান মেহেদী নিহত হন।

হাসান মেহেদীর মৃত্যুর ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে আরএসএফ বাংলাদেশ সরকারের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের বিচারের দাবি জানায়।

আরএসএফ বলেছে, ১৮ জুলাই পর্যন্ত আরও ৩০ জন সাংবাদিক লাঞ্ছিত ও আহত হন। এরমধ্যে কয়েকজন পুলিশের মারধর বা গুলির শিকার হয়েছেন। কেউ কেউ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের আক্রমণের শিকার হয়েছেন।

বিবৃতিতে আরএসএফের দক্ষিণ এশিয়া ডেস্কের প্রধান সেলিয়া মার্সিয়ার বলেন, ‘বিক্ষোভ কভার করার সময় একজন সাংবাদিকের মৃত্যু হওয়া খুবই আতঙ্কজনক। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একাধিক সহিংস আক্রমণ দেখা অগ্রহণযোগ্য।’

কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও তথ্যের অধিকার নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আরএসএফ মিডিয়া পেশাদারদের ওপর যে নৃশংস সহিংসতা ঘটেছে সেসবের নিন্দা এবং পাশাপাশি এসব ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করার দাবি জানায়।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুলাই বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে যাত্রাবাড়ীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে টোল প্লাজার ওপরের অংশে গুলিবিদ্ধ হন ঢাকা টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মেহেদী।

সেখানে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক দৈনিক বাংলাদেশের আলোর স্টাফ রিপোর্টার ইমাম হোসেন ইমন জানান, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর প্রায় ১০ মিনিট সড়কে পড়ে থাকার পর হাসান মেহেদীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

ইমাম হোসেন ইমন জানান, ওইদিন অন্য সাংবাদিকদের সঙ্গে থেকে পুলিশের পাশে দাঁড়িয়েই সংবাদ সংগ্রহ করেন হাসান মেহেদী। বিকালে পুলিশের একটি এপিসি থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে টিয়ারশেল ও গুলি ছোড়া হচ্ছিল। এসময় হাসান মেহেদী গুলিবিদ্ধ হন। তার মুখ, গলা ও বুকে শরীরে অসংখ্য ছররা গুলির চিহ্ন দেখা যায়।
এদিকে ১৯ জুলাই সকালে সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে হাসান মেহেদীর মরদেহ আনা হয় রাজধানীর রমনার ইস্কাটন গার্ডেনের ঢাকা টাইমস অফিস প্রাঙ্গণে। এসময় সহকর্মীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সেখানেই তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকা টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মেহেদী দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিটে কর্মরত ছিলেন। ঢাকায় তিনি কেরাণীগঞ্জ এলাকায় পরিবারসহ থাকতেন। তার সাত মাস ও চার বছর বয়সী দুই কন্যা শিশু রয়েছে।

হাসান মেহেদীর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামে। গত শনিবার দুপুরে সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।