সাপাহারে ঐতিহ্যবাহী জবই বিলে নৌকাবাইচ দেখতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়

বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১২, ২০২৩

 

স্টাফ রিপোর্টারঃ

নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী জবই বিলে অনুষ্ঠিত নৌকা বাইচ দেখতে বিলের দুই পাড়ের প্রায় দুই কিলোমিটার জুড়ে হাজার হাজার দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছিল। বইঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ আর মাঝি-মাল্লাদের কণ্ঠের গানের তালে মেতেছিল সবাই । সমান তালে একেকটি নৌকা ছুটে চলছিল তীর বেগে। তাদের কারিশমা দেখে মুগ্ধ হয়ে দর্শক জনতা বাইচে অংশ নেয়া প্রতিযোগীদের উৎসাহিত করতে থাকেন। এ সময় বিল পাড়ের পুরো এলাকা মুখর হয়ে ওঠে।

এভাবেই বৃহস্পতিবার বিকেলে নওগাঁর সাপাহার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জবই বিলে হয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগীতা। বাইচ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্যাহ আল মামুন।

 

স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন এই নৌকা বাইচের আয়োজন করেন। এতে অংশ নেন নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ আশেপাশের ছোট-বড় মিলে প্রায় ৮টি দল।

এই নৌকাবাইচ উপভোগ করতে দুপুরের পর থেকেই তীব্র রোদ ও গরম উপেক্ষা করে বিলের দুপাশের রাস্তার ধারে উৎসুক জনতা জড়ো হতে থাকেন। বিকেল সাড়ে ৩টায় জবই বিলের দক্ষিনের মাহিল প্রান্ত থেকে নৌকাবাইচ শুরু হয়ে মাছ চত্বরে এসে শেষ হয়। নৌকাবাইচের দূরত্ব ছিল প্রায় ১ কিলোমিটার। এ সময় বিলের মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তার দুই পাশে মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল। তাদের আনন্দ-উল্লাসে মুখরিত বিলের চারপাশ।

 

নৌকা বাইচ দেখতে আসা বৃদ্ধ রজিম বলেন, বাইচ দেখতে আমি দুপুরে এখানে এসেছি। বাইচ দেখে খুব আনন্দ পেয়েছি।

 

স্কুল ছাত্রী কাজল রেখা বলেন, আমার জীবনে প্রথম নৌকা বাইচ দেখতে এসেছি। এখানে এসে নৌকা বাইচ দেখে দারুণ আনন্দ পেয়েছি। প্রতি বছর এমন আয়োজন করার আহ্বান জানান ।

 

নওগাঁ থেকে নৌকা বাইচ দেখতে আসা ইকবাল হোসেন বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে নৌকা বাইচ উৎসবের কথা জানতে পেরেছি। সকাল ১১টায় রওনা হয়ে এখানে এসেছি। এসে খুব ভালো লাগছে। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই নৌকা বাইচ এখন বিলুপ্তির পথে।

 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন বলেন, জবই বিল কেন্দ্রীক পর্যটন বিকাশে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রতিনিয়ত বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এরই একটি অংশ জবই বিলে নৌকা বাইচ। এই প্রতিযোগীতা আয়োজন করায় আবহমান বাংলার চিরায়ত চিত্র ধরে রাখার পাশাপাশি পর্যটকদের কাছে জবই বিল আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। এতে স্থানীয়দের জীবন জীবিকায় পরিবর্তন আসবে।

 

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, আবহমান গ্রাম-বাংলার সংস্কৃতি ধরে রাখতে ও জবই বিলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যর অংশ এই নৌকা বাইচ।

 

তিনি বলেন, নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। স্থানীয়দের মাঝে যেন প্রাণ ফিরে এসেছে। আগামীতেও আরও বড় পরিসরে এই ধরনের আয়োজন করা হবে বলে তিনি জানান ।

 

এসময় সাপাহার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শহজাহান হোসেন মন্ডল, উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি শামসুল আলম শাহ্ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রেজা সারোওয়ার, প্রকৌশলী তৃণা মজুমদার, উপজেলার ছয় ইউপি চেয়ারম্যানগণ সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।