স্টাফ রিপোর্টারঃ নওগাঁ জেলার সীমান্তের পাশ্ববর্তী উপজেলা সাপাহার। উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৯ কিঃমিঃ পশ্চিমে গেলে দেখা মিলবে দৃষ্টিননন্দন জবই বিল। শীতের শুরুতে জবই বিল মুখরিত হচ্ছে নানান দেশ থেকে আসা অতিথি পাখির কলতানে।
প্রতিনিয়ত খাবারের খোঁজে ও শীত নিবারনের জন্য জবই বিলে ঝাঁক বেঁধে আসছে অতিথি পাখি। ঐতিহ্যবাহী এই বিলটি যেন হাজার হাজার অতিথি পাখির নিরাপদ বিচরণ ভূমি। যা অত্যান্ত মনমুগ্ধকর এক প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বিলের পানি কমতে শুরু করার ফলে প্রতিবছর শীত মৌসুমে বিভিন্ন প্রজাতির হাজারো নতুন পাখির আনাগোনা শুরু হয় জাবাই বিলে। জবাই বিল ও পার্শ্ববতী পূনর্ভবা নদীতে জলকেলীতে মুখরিত পরিবেশ যেন এক অপূর্ব দৃষ্টিনন্দিত স্থানে পরিণত করেছে। এসব স্থানে এই পাখিরা দিন রাত বিচরণ করছে। প্রতিদিন পাখির কিচির-মিচির শব্দে আর কল-কাকলীতে বিমুগ্ধ হচ্ছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।
জবাইবিল ও পূনর্ভবা নদীতে অতিথি পাখিদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার থাকার ফলে প্রতি বছর শীত মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছুটে আসে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে হাজার হাজার পাখি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাখি হলো শামুকখোল, সাদা বক, বালিহাঁস, চাহা, রাজহাঁস, পাতি সরালীসহ নানা প্রজাতির নাম না জানা পাখি। পাখির কলতানে সারাক্ষন মুখরিত থাকে পুরো বিল এলাকা। মূলত: এই বিলের ছোট ছোট মাছ আর শামুকই পাখির প্রধান খাবার।
জবই বিল জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি সোহানুর রহমান সবুজ জানান, বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী এই বিলে পাতি-সরালি, লাল ঝুটি-ভুতিহাস, গিরিয়া হাস, তিলি হাঁস, টিকি হাঁস, পিয়াং হাঁস, ঠেঙ্গি হাঁস, চা পাখি, বেগুনী বক, বাজলা বক, শামুখ খোল, মাছ মুরাল, সাপ পাখি, চখা চখি, হরেক রকম হাঁসের আনাগোনা শুরু হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে বিলটি পাখির সমাহারে সারা বিল ভরে উঠবে।
তাদের জরিপ মতে গত ২০১৯ সালে এবিলে দেশী বিদেশী মিলে মোট পাখির সংখ্যা ৫ হাজার ৫৯৩টি, ২০২০ সালে ৭ হাজার ৬৮৩টি, ২০২১ সালে ৯ হাজার ৭১২টি এবং ২০২২ সালে বিলে মৎস্য শিকারীদের ব্যাপক দাপাদাপিতে পাখির সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৬৯২টিতে। ২০২৩ সালের পাখি জরিপ কাজ চলমান প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে জবই বিল জীববৈচিত্র্য সংস্থার সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান জানিয়েছেন।
এলাকাবাসী আরো জানান, বর্ষার শেষ ভাগে বিলে পানি কমতে শুরু করায় ফসলী আবাদী জমি পানির নিচ থেকে বের হয়ে আসে আর ওসব জমিতে স্বল্প পরিমাণ পানি থাকায় পানি থাকায় ছোট মাছ, শামুক, পোকা-মাকড়ের আমদানী বেশি হয়। সেসব খাওয়ার জন্য নানা ধরণের পাখি ঝাঁক বেঁধে ছুটে আসে এই জবাই বিলে। যার ফলস্বরূপ জবাই বিল এলাকা হয়ে ওঠে মনমুগ্ধকর প্রাকৃতিক লীলার এক অভয়াশ্রম। এসব অতিথি পাখি যাতে কোন শীকারীর কবলে না পড়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট এমনটাই আশাবাদী এলাকার প্রকৃতিপ্রেমীরা।
সাপাহার উপজেলার জবই বিলটিকে একটি ঐতিহ্যবাহী পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা ও সারা বছর বিলে নিরাপদে পাখির বসবাসের জন্য একটি অংশ সংরক্ষিত এলাকা ঘোষনা করে সেখানে পাখির জন্য অভয় আশ্রম নির্মানের জোর দাবী করছে প্রকৃতি প্রেমিকগণ।