
বাবুল আকতার, স্টাফ রিপোর্টারঃ দেশের অনেক অঞ্চলে যেখানে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামীণ প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের অংশ আকন্দ গাছ (Calotropis gigantea), সেখানে নওগাঁর সাপাহারে রান্তা ঘাট পথে প্রান্তরে এখনো শোভা পাচ্ছে পরিবেশবান্ধব এই ঔষধি গাছ আকন্দ। উপজেলায় এখনও রাস্তার পাশে, পতিত জমিতে ও বন-জঙ্গলে স্বাভাবিক ভাবেই জন্ম নিচ্ছে এই গাছ। ফুলে-ফলে ভরা আকন্দ গাছ এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের অংশ হয়ে রয়েছে।
উপজেলা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সদরের নিউ মার্কেটের পিছনে,হাপানিয়া স্লুইসগেট রাস্তা,কলমুডাঙ্গা,পাতাড়ী রাস্তা ও পতিত জমি এবং গ্রামীণ সড়কগুলোতে দেখা যায় অসংখ্য আকন্দ গাছের সম্ভার। বেগুনি-সাদা তারকা আকৃতির ফুলে ছেয়ে থাকা এসব গাছ পথচারীদের নজর কাড়ে। স্থানীয়দের ভাষায়, “এই গাছ যেমন ওষুধ, তেমনি প্রকৃতির সৌন্দর্য। আগে কবিরাজগণ ব্যবহার করতেন, এখনো অনেকে পাতার পট্টি দেন ব্যথায়।”
ঔষধি গুণ ও প্রাকৃতিক ভূমিকা সমৃদ্ধ আকন্দ গাছ বহু আগে থেকেই লোকজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এর পাতা ও মূল ব্যবহার হয় বাত, জ্বর, পেটের সমস্যা ও চুলকানির উপশমে। তবে চিকিৎসা ছাড়া এই গাছের দুধ জাতীয় সাদা রস কিছুটা বিষাক্ত হওয়ায় সরাসরি ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ।
এছাড়া এই গাছ পরিবেশগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ‘প্লেইন টাইগার’ নামক প্রজাপতির প্রধান আশ্রয়স্থল হলো আকন্দ গাছ। গবেষণায় দেখা গেছে, এই প্রজাপতির লার্ভা শুধু আকন্দ পাতাই খায়। ফলে গাছটি কেবল মানুষ নয়, প্রকৃতির অন্য প্রাণীদেরও আশ্রয়।
এ বিষয়ে জবই বিল জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও সমাজ কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সোহানুর রহমান সবুজ বলেন,”আকন্দ গাছ আমাদের জীববৈচিত্র্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই গাছ শুধু একটি ঔষধি উদ্ভিদ নয়, এটি একটি প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের আশ্রয়। সাপাহারে এই গাছের উপস্থিতি আমাদের জন্য আশার কথা, তবে এটি রক্ষা করতে হলে স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা ও পরিকল্পিত সংরক্ষণ উদ্যোগ প্রয়োজন। শিক্ষার্থী ও তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে পরিবেশ রক্ষায়।”
স্থানীয় পরিবেশ সচেতনরা মনে করেন, রাস্তা সম্প্রসারণ, জমির বাণিজ্যিক ব্যবহার এবং অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে এসব গাছ ভবিষ্যতে বিলুপ্তির পথে চলে যেতে পারে। তাই তারা আকন্দসহ স্থানীয় প্রজাতির গাছ সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন।
উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আতাউর রহমান সেলিম বলেন, এই আকন্দ গাছ সংরক্ষণে সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রতিটি গ্রামে যদি অন্তত কয়েকটি আকন্দ গাছ টিকে থাকে, তাহলে একদিকে যেমন প্রজাপতি ও পোকামাকড়ের ভারসাম্য থাকবে, অন্যদিকে হারিয়ে যাওয়া ঔষধীগুণ সম্পুর্ন এই গাছ প্রকৃতিতে বাঁচবে।”