সাপাহারে শিক্ষার নতুন দিগন্ত: বিশ্বমানের ‘সেন্ট জেভিয়ার্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’-এর যাত্রা শুরু

বুধবার, নভেম্বর ১৯, ২০২৫

 

স্টাফ রিপোর্টার,

নওগাঁর সীমান্তঘেঁষা উপজেলা সাপাহারে শিক্ষা ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা হতে যাচ্ছে। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করে এবং বিশ্বমানের শিক্ষার প্রতিশ্রুতি নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে ‘সেন্ট জেভিয়ার্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সাপাহার’। আগামী ২০২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে পাঠদান শুরুর লক্ষে প্রতিষ্ঠানটি তাদের কার্যক্রম জোরদার করেছে।

সেন্ট জেভিয়ার্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুল কোনো সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়। এটি ১৫৪০ সালে স্পেনের লয়োলার সেন্ট ইগনাশিয়াস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এবং বিশ্বজুড়ে সমাদৃত ‘সোসাইটি অফ জিজাস’ (জেসুইট) দ্বারা পরিচালিত। প্রায় ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটি বিশ্বের ৯৬টি দেশে ৪,০০০-এর বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে। যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫টি এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতের ৬৫টি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ রয়েছে।
বাংলাদেশেও জেসুইটদের পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো গুণগত মানের জন্য সর্বজনবিদিত। নটরডেম কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়, হলিক্রস স্কুল এন্ড কলেজ, সেন্ট যোসেফ’স স্কুল ও কলেজ এবং সেন্ট ফিলিপস-এর মতো দেশসেরা প্রতিষ্ঠানগুলোর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই সাপাহারে এই নতুন স্কুলের যাত্রা।

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, এটি গতানুগতিক ‘ইংলিশ ভার্সন’ স্কুল নয়, বরং ব্রিটেনের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম অনুসরণকারী একটি পুরোদস্তুর ‘ইংলিশ মিডিয়াম’ স্কুল। শিক্ষার্থীদের বই ও সিলেবাস সরাসরি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।
প্রতিষ্ঠানের মূল ভিত্তি হলো ‘কুরা পারসোনালিস’ যার অর্থ প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রতি বিশেষ ও ব্যক্তিগত যত্ন নেওয়া। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য হলো—শিক্ষার্থীদের একাডেমিক, আবেগিক, সামাজিক এবং আধ্যাত্মিকভাবে বিকশিত করা। এখানে মুখস্থবিদ্যার পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের মেধা ও প্রতিভার বিকাশে ‘ম্যাজিস’ বা উৎকর্ষ সাধনের ওপর জোর দেওয়া হবে।

স্কুলটির অধ্যক্ষ ড. ফাদার মিল্টন কস্তা, এস.জে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের কেবল ভালো ফলাফল করানো নয়, বরং তাদের চরিত্রবান, নীতিতে অটল এবং মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। আমাদের প্রতিষ্ঠানে পাঠদান করলে শিক্ষার্থীদের বাইরে কোনো প্রাইভেট বা কোচিংয়ের প্রয়োজন হবে না। আমরা ক্লাসরুমেই সম্পূর্ণ শিক্ষা নিশ্চিত করব।”

প্রাথমিকভাবে নার্সারি ও কেজি-১ শ্রেণি দিয়ে স্কুলের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে এটি ‘ও’ লেভেল (এসএসসি সমমান) এবং ‘এ’ লেভেল (এইচএসসি সমমান) পর্যন্ত উন্নীত হবে। এখান থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা যাতে ভবিষ্যতে স্কলারশিপ নিয়ে দেশে ও বিদেশের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়, সেই লক্ষ্যেই শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করা হবে।

স্কুলটি সাপাহারের জয়পুর এলাকার পোরশা রোডে, ডাঃ মো. শহিদুল ইসলামের ক্লিনিকের বিপরীত পাশে অবস্থিত। প্রায় এক একর জমিতে মনোরম ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে এর নিজস্ব ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের জন্য জন্য আলাদা ডেক্স এবং আধুনিক ক্লাশ রুমের ব্যবস্থা।
ইতিমধ্যেই ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের (জানুয়ারি সেশন) জন্য ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগ্রহী অভিভাবকরা স্কুল অফিস থেকে ভর্তি ফরম সংগ্রহ করতে পারছেন। আগামী ১ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে ফরম পূরণ ও ভর্তি প্রক্রিয়া পুরোদমে চলবে এবং ১১ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস শুরু হবে। ধর্ম, বর্ণ ও জাতি নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীর জন্য এই স্কুলের দ্বার উন্মুক্ত।

উপজেলার একজন শিক্ষাণুরাগী মোস্তাক আহমেদ বলেন, সাপাহারের মতো মফস্বল এলাকায় এমন একটি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় স্থানীয় অভিভাবক ও সুশীল সমাজের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও আশার সঞ্চার হয়েছে।