জাতির সংবাদ ডটকম।।
সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের নাম ভাঙিয়ে সাবেক সভাপতি মো. ওয়ারেছ আলী কথিত কাউন্সিলের যে প্রচারণা চালাচ্ছেন তাতে ক্ষোভ জানিয়েছে সংগঠনটি।
বুধবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেছে, সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি ওয়ারেছ বর্তমানে সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি সভাপতি না হলেও এই পরিচয় দিয়ে ১১ মার্চ কথিত কাউন্সিলের প্রচারণা চালাচ্ছেন।
সরকারের কয়েকটি দপ্তরের কতিপয় কর্মচারীকে সংগঠিত করে সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের স্ব-ঘোষিত সভাপতি দাবী করে ওয়ারেছ কাউন্সিল সভা আহবান করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাধারণ কর্মচারীদের মনে প্রশ্ন একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা কি কারণে সরকার বিরোধী কর্মচারীদেরকে সংগঠিত করার দায়িত্ব পালন করছেন? এছাড়া তিনি গেল বছরের ৩০ মে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কর্মচারীদের দাবীর বিষয়ে শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাঝে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে উশৃঙ্খল আচরণ করে জঘন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
তাছাড়া মো ওয়ারেছ আলী পদোন্নতি পেয়ে একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হওয়ায় গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ-১ (ক) ও অনুচ্ছেদ-৩ (ক) অনুযায়ী ফেডারেশনের সাধারণ সদস্য হওয়া বা নেতৃত্বে আসার কোনো সুযোগও নেই।
সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন বলছে, ওয়ারেছ আলী কোনো অপশক্তির ইন্ধনে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদেরকে সরকারের বিরুদ্ধে উস্কে দেয়ার মিশন হাতে নিয়েছে তারা মনে করছে।
সাধারণ কর্মচারীরা মনে করেন, সাংগঠনিক রীতি-নীতি অনুযায়ী মো. ওয়ারেছ আলীর ফেডারেশনের সভাপতি দাবি করে কাউন্সিল আহবানের কোনা সুযোগ নেই এবং সাধারণ কর্মচারীদেরও তার সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
প্রসঙ্গত, সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন বলতে আশির দশকে দুটি সংগঠন উল্লেখযোগ্য ছিল। মন্ত্রণালয়/সচিবালয় ভিত্তিক বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদ ও সচিবালয়ের বাইরে কর্মচারীদের প্রতিনিধিত্বকারী বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ।
তবে সমন্বয় পরিষদে প্রাধান্য বিস্তার করেছিল ৪র্থ শ্রেণী সরকারি কর্মচারী সমিতি। পরে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীরা সংগঠিত হতে থাকে এবং এক পর্যায়ে মাত্র ৪ (চার) জন কর্মচারীর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালের শেষের দিকে সংগঠনের রূপ নেয়ার পর্যায়ে যায়। তাদের মধ্যে মো. লুৎফর রহমান খানের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য।
২০০০ সালের প্রারম্ভেই আনুষ্ঠানিকভাবে আত্বপ্রকাশ করে বাংলাদেশ তৃতীয় শ্রেণী সরকারি কর্মচারী সমিতি। ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে এ সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন মো. লুৎফর রহমান খান। রচিত হয় সংগঠনের সংবিধান, সম্প্রসারিত হতে থাকে জেলা পর্যায়ে।
সভাপতি হিসেবে লুৎফর রহমান খানের সফলতা অর্জনে জুড়ি ছিল না। প্রতিটি সরকারি দপ্তরকে তিনি সম্পৃক্ত করেন সমিতির সঙ্গে। লুৎফর রহমান খানের নেতৃত্বে ২০১৫ সালে গঠিত পে-কমিশনের সঙ্গে একাধিক মতবিনিময় সভা হয়। কিছু কিছু দাবীও প্রাপ্তি হিসেবে আসে। এর মধ্যে একটি দাবী উল্লেখযোগ্য ছিলো। সেটি হলো, শ্রেণী প্রথার বিলুপ্তি। ফলে চালু হয় গ্রেডেশন পদ্ধতি।
২০১৫ সালের মাঝামাঝি মো. লুৎফর রহমান খান চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ায় ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলের ঘোষণা দেওয়া হয়। একই বছরের ১৭ অক্টোবর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে অত্যন্ত জাকজমকপূর্ণভাবে সেই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।
কাউন্সিলে দাবি ওঠে, যেহেতু সরকার শ্রেণী প্রথা বিলুপ্ত করে গ্রেডেশন পদ্ধতির প্রচলন করেছে তাই তৃতীয় শ্রেণী কর্মচারী সমিতির পরিবর্তে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন গঠনের।
কাউন্সিলে উপস্থিত দু-সহশ্রাধিক কাউন্সিলর ও ডেলিগেটস তা অনুমোদন করেন। এ কাউন্সিলে মো. ওয়ারেছ আলী সভাপতি ও মো. হেদায়েত হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ গঠিত হয়।
২০১৫ সালে তৎকালীন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান এমপিকে প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও মো. লুৎফর রহমান খানকে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচিত করা হয়। এই দুজন এখনো সেই অলঙ্কৃত করে আছেন।
গঠনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী ২০১৯ তারিখে ২৯ নভেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে পরবর্তী ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে সর্বসম্মতভাবে জনাব মো. হেদায়েত হোসেন সভাপতি ও মো. আকতার হোসেন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তাদের নেতৃত্বে গঠিত হয় ৯৫ সদস্য বিশিষ্ট ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ। বর্তমানে এই কমিটি ফেডারেশন চালাচ্ছে।