সার আমদানিতে দুর্নীতির অভিযোগ: কৃষি সচিবের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সমাজের বিক্ষোভ

মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫

জাতির সংবাদ ডটকম।।

সার আমদানিতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের সংবাদ প্রকাশের জেরে গণমাধ্যম কর্মীদের হুমকি দেওয়ার প্রতিবাদে কৃষি সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ‘বৈষম্যবিরোধী সাংবাদিক সমাজ’। আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এই সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা কৃষি সচিবের অপসারণ এবং সার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তের জোর দাবি জানান।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইউজে’র সাংগঠনিক সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদ। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাহী সদস্য রাজু আহমেদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক নির্বাহী সদস্য এইচ এম আল আমিন, সিনিয়র সাংবাদিক ও দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ এর সম্পাদক মোহাম্মদ মাসুদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য সিনিয়র সাংবাদিক নুরুল হক কাইউম, হুমায়ুন কবির, এইচ আর শফিক, মোঃ মতিউর রহমান সরদার, কাজী আবির আসলাম, আলী আশ্রাফ আকন্দ প্রমুখ।

বিক্ষোভ সমাবেশ উপস্থিত ছিলেন, সিনিয়র সাংবাদিক ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদক এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য রাসেল আহমেদ, মেহেদী হাসান, মিজানুর রহমান, মোহাম্মদ জাহিদ, মেহরুন আশ্রাফ, সৈয়দ জাহিদুল হক টিপু, বদীউল আলম চৌধুরী ও সাংবাদিক তাজ উদ্দিন আহমেদ, পৃতি জান্নাত, তৃপ্তি, লায়লা রুণা সাজেদুল ইসলাম সাজ্জাদ প্রমুখ।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক জাকির হোসেন এবং সঞ্চালনা করেন সমন্বয়ক এস এম তাজুল ইসলাম। বক্তারা অভিযোগ করেন, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সার আমদানি নিয়ে সরকারি অর্থ লোপাটের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর কৃষি সচিব সাংবাদিকদের প্রতি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন এবং অশ্লীল ভাষায় হুমকি প্রদান করেন।

সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় দৈনিক ‘আমাদের সময়’, ‘আজকের পত্রিকা’, ‘ঢাকা টাইমস’ ও ‘নয়া দিগন্ত’ সহ একাধিক গণমাধ্যমে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার আমদানি প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এই আলোচনার সূত্রপাত করেন প্রবাসী অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান (সামি)। তিনি তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে দাবি করেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা দরপত্রের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিয়ে লাখ লাখ ডলারের সার আমদানির কার্যাদেশ দিয়েছেন, যা রাষ্ট্রীয় অর্থ লুটপাটের শামিল।

সামির তথ্য অনুযায়ী, মন্ত্রণালয় একই সময়ে, একই উৎস দেশ থেকে একই মানের ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) ও ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) সার ভিন্ন ভিন্ন দামে একাধিক প্রতিষ্ঠানকে আমদানি করার অনুমতি দিয়েছে, যা সরকারি ক্রয় নীতির সরাসরি লঙ্ঘন।

তার পোস্টে উল্লিখিত তথ্যে দেখা যায়- ডিএপি সার: ‘বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে দুটি ভিন্ন কার্যাদেশে মিশর থেকে প্রতি টন ৮৭৪ ডলারে এবং চীন থেকে ৮৪৮ ডলারে ডিএপি সার আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। একই সময়ে ‘এনআরকে হোল্ডিং’ নামক প্রতিষ্ঠানকেও চীন থেকে একই দরে (৮৪৮ ডলার/টন) সার আমদানির কার্যাদেশ দেওয়া হয়। প্রশ্ন উঠেছে, সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে উচ্চমূল্যে কেন সার আমদানির অনুমতি দেওয়া হলো?

টিএসপি সার: ‘দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন’কে মরক্কো থেকে ৬৯৪ ডলার/টন এবং লেবানন থেকে ৬৮৮ ডলার/টন দরে টিএসপি সার আমদানির কাজ দেওয়া হয়। এখানেও সর্বনিম্ন দরের নীতিমালা উপেক্ষা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সামি দাবি করেন, দরপত্রের পরিবর্তে ‘নেগোসিয়েশন’ বা সমঝোতার মাধ্যমে এই কার্যাদেশগুলো দেওয়া হয়েছে, যা মূলত পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার একটি কৌশল।

বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এবং ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের অর্জনকে ম্লান করতে একটি মহল সক্রিয় রয়েছে। তাদের মতে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী কিছু কর্মকর্তা সুকৌশলে দেশে সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। চলতি বোরো মৌসুমের শুরুতেই দেশব্যাপী যে সারের সংকট দেখা দিয়েছিল, তা এই ষড়যন্ত্রেরই অংশ বলে মনে করছেন তারা।

বক্তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, অবিলম্বে সার সংকটের সমাধান করা না গেলে বোরো মৌসুমের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে, যা দেশে খাদ্য সংকট তৈরি করতে পারে।

সমাবেশ থেকে কৃষি সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ানের অপসারণ, সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ার ঘটনার বিচার এবং সার আমদানিতে দুর্নীতির অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানানো হয়।