
জাতির সংবাদ ডটকম।।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের (NHA) কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সঠিক নিয়মে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না সিন্ডিকেটের অদৃশ্য চাপে—এমন অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে ভুক্তভোগী নাগরিকদের। জমি বরাদ্দ, ফ্ল্যাট হস্তান্তর, নকশা অনুমোদন বা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এই সিন্ডিকেট প্রভাব বিস্তার করছে, ফলে সাধারণ মানুষ ন্যায়সঙ্গত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অধীন প্রায় প্রতিটি কার্যক্রমেই সিন্ডিকেটের প্রভাব রয়েছে বলে জানা গেছে। কর্মকর্তারা নিয়মনীতি অনুযায়ী কাজ করতে গেলেই নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিলম্বিত হচ্ছে কিংবা জনস্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্ত গৃহীত হচ্ছে।
একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“আমরা চেষ্টা করি নিয়ম মেনে কাজ করার। কিন্তু সিন্ডিকেটের চাপে অনেক সিদ্ধান্ত আটকে যায়। অনেক সময় আমাদের অজান্তেই ফাইল প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করা হয়।”
জমি বা ফ্ল্যাট পেতে আসা সাধারণ মানুষদের অভিযোগ, সঠিক নিয়মে আবেদন করেও বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। বরং যারা সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, তারা দ্রুত অনুমোদন পেয়ে যান।
রাজধানীর এক ভুক্তভোগী বলেন,
“আমি নিয়ম মেনে ফ্ল্যাট বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছি তিন বছর আগে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অথচ আমার পাশের এক পরিচিত লোক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে টাকা দিয়ে অল্প সময়ে ফ্ল্যাট পেয়েছেন।”
নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গৃহায়ন খাতটি মানুষের মৌলিক চাহিদার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। এখানে সিন্ডিকেটের প্রভাব থাকলে সেটি শুধু দুর্নীতি নয়, বরং সামাজিক বৈষম্য বাড়ানোর পথ তৈরি করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. শামীম আরা বলেন,
“জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মতো সংস্থায় সিন্ডিকেট থাকাটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ অবস্থায় সৎ কর্মকর্তা থাকলেও তাদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয় না। তাই প্রশাসনিক সংস্কার ও শক্ত জবাবদিহি ছাড়া সমাধান আসবে না।”
সিন্ডিকেট ভাঙতে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালানো।
কর্মকর্তাদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নিশ্চয়তা প্রদান।
সব ফ্ল্যাট ও জমি বরাদ্দের জন্য অনলাইন লটারি ও ডিজিটাল যাচাই ব্যবস্থা চালু।
জনগণের সরাসরি অভিযোগ জানানোর জন্য কার্যকর হটলাইন ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা।
নিয়মিত অডিট ও স্বচ্ছতা প্রতিবেদন প্রকাশ বাধ্যতামূলক করা।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ সাধারণ মানুষের বাসস্থান নিশ্চিত করার দায়িত্বে নিয়োজিত হলেও সিন্ডিকেটের প্রভাব সেই লক্ষ্যকে ব্যাহত করছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে কর্মকর্তাদের অক্ষমতা শুধু প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, বরং নাগরিক অধিকার হরণের সমতুল্য। তাই জনস্বার্থে অবিলম্বে এই সিন্ডিকেট ভেঙে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
মাঝেমধ্যে দু’একজন উদ্যোগী কর্মকর্তা মানুষের হয়রানি লাঘবে সচেষ্ট হলে ভিতর -বাহিরের অসাধু চক্রের বিরোধিতা ও কারসাজিতে তিনি উল্টো হয়রানির শিকার হন ও ভোগান্তিতে পড়েন।
অতি সম্প্রতি তেমন একটি ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানকে স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় ওএসডি পর্যন্ত হতে হয়েছে। কর্তৃপক্ষও ভুল তথ্য ও অসত্য প্রচার যাচাই করেছে মর্মে প্রতীয়মান হয়না। তার মতো দক্ষ, আন্তরিক ও উচুমানের একজন কর্মকর্তার এমন বিদায়ে সেবা গ্রহিতাদের মাঝে হতাশা ও অসন্তোষ লক্ষ্য করা গেছে।
এপ্রসঙ্গে সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, পদায়ন ও প্রত্যাহার দুটোই সরকারের বিষয়। তবে দু-একটি স্বল্প প্রচারিত পত্রিকায় প্রধানত ভুল তথ্যের ভিত্তিতে যে সংবাদ ছাপা হয়েছে তাতে নিয়ম মাফিক আমার বক্তব্য যেমন ছাপা হয়নি, তেমনি কর্তৃপক্ষও আমার বক্তব্য জানতে চায়নি। বোর্ডের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের বিষয়ে এককভাবে চেয়াম্যানকে দায়ী করা মোটেও সমীচীন নয়।তছাড়া সবগুলো বিষয় নিয়মমাফিক এবং প্রক্রিয়াধীন,ছিল যেগুলোর কার্যক্রমও বন্ধ আছে। কিছু লোকের অপ-প্রচারের কারণে ভুল বোঝাবুঝি হয়ছে । তদন্তেও অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। আমার কর্মকালে মানুষকে সেবা দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছি যা সেবা গ্রহীতাদের সন্তুষ্টি অর্জন করেছে।
কিন্তু, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও মনগড়া তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ পরিবেশিত হলে তা স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ রক্ষা করলেও জনস্বার্থ কে বিঘ্নিত করে, এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সম্মানহানির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। তাই এবিষয়ে সংশ্লিষ্টদের অধিকতর সতর্ক, দায়িত্বশীল ও নিরপেক্ষ হওয়া উচিত। কারো উদ্দেশ্য সাধনে কাজ করা উচিত নয়।সিন্ডিকেট সম্পর্কে বর্তমান চেয়ারম্যান ফেরদৌসী বেগম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন আমার নিকট তথ্য আছে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং এর সাথে যারা যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।