জাতির সংবাদ ডটকম: উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়ক দিয়ে সড়ক পথে ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ২২ জেলার যোগাযোগ। এর ফলে সারা বছরই এ রাস্তায় পরিবহনের চাপ লেগে থাকে। এই চাপ যেন আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায় ঈদযাত্রায়।
গত কয়েক বছর ধরে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে সিরাজগঞ্জের ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। এই উন্নয়ন কাজই এবার ঈদযাত্রায় ঘরে ফেরা মানুষের যাতায়াতে দুর্ভোগ বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম পাড় থেকে চান্দাইকোনো পর্যন্ত ১৪টি স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে আগামী ১৫ রমজানের মধ্যে মহাসড়কের এসব ঝুঁকিপূর্ণ অংশ দ্রুত সংস্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া এই ঝুঁকিকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে মহাসড়কে তিন চাকার দৌরাত্ম্য। মহাসড়কের বিশেষ করে নলকা থেকে হাটিকুমরুল গোলচত্বর হয়ে বগুড়ামুখী মহাসড়কে এই তিন চাকার যান যেন পাল্লা দিয়ে চলছে অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে।
মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ ১৪টি স্থানের মধ্যে রয়েছে- বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিমের মুলিবাড়ি এলাকা, নলকা মোড় ও নলকা সেতু এলাকা, কড্ডার মোড় এলাকা, পাচলিয়া, হাটিকুমরুল গোলচত্বর, হাটিকুমরুল বাজার, দাদপুর বাজার, ঘুড়কা বাজার, ভুইয়াগাতী বাজার ও চান্দাইকোনা বাজারসহ আরও কয়েকটি পয়েন্ট।
বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম থেকে ঝুঁকিপূর্ণ নলকা সেতু হয়ে হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকা পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কড্ডা ফ্লাইওভার, নলকা ব্রিজ ও মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। মহাসড়কের দুপাশে চলছে ড্রাম ট্রাক দিয়ে মাটি ভরাটের কাজ। উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় অসংখ্য খানাখন্দে মহাসড়কে গাড়ি চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। আবার অনেক জায়গায় রাস্তা ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাতে পণ্যবাহী ট্রাকের চাপ বেড়ে যাওয়ায় মহাসড়কে কখনো কখনো সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। কখনো ধীরগতি, কখনো থেমে থেমে যান চলায় যানবাহন ও যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে নবনির্মিত নলকা সেতুর উত্তরের লেন খুলে দিলেও ঢাকামুখী লেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঢাকামুখী লেন বন্ধ করে দেওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ পুরাতন সেতু দিয়েই চলাচল করছে যানবাহন। এতে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। তবে ঈদযাত্রার আগেই নবনির্মিত নলকা সেতুর উভয় লেন খুলে দেওয়া হবে বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন সাসেক-২ এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মাহবুবুর রহমান রাসেল।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বদরুল কবির বলেন, সাসেক-২ এর কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে জেলা পুলিশ এবং আমাদের বৈঠক হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে চান্দাইকোনো পর্যন্ত হাইওয়ে থানার আওতাধীন এলাকায় ১০টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো ১৫ রমজানের মধ্যে তারা সংস্কার করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এখনো চূড়ান্ত না হলেও ঈদ উপলক্ষ্যে মহাসড়কে আমাদের ১০টি হোন্ডা মোবাইল টিম, ১৪টি পয়েন্টে ১৪টি পিকেট টিম, দুইটি পিকআপ টিম ও একটি অ্যাম্বুলেন্স টিম কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া সচেতনতায় মাইকিং ও ডিজিটাল সাইনবোর্ড লাগানো হবে। সবমিলিয়ে এবার ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে আমাদের মোট ১৪৫ জন পুলিশ সদস্য কাজ করার কথা রয়েছে। তবে জেলা পুলিশ ও ট্র্যাফিক বিভাগের কোথায় কতজন কাজ করবেন এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার আওতাধীন মহাসড়কে তিন চাকার যানের বেপরোয়া চলাচলের ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রায়ই আমরা এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি তারপরও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তাদের ধরলে আড়াই হাজার টাকা জরিমানা করা হচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে তারা এই টাকা জোগাড় করার জন্য মহাসড়কে আরও দ্বিগুণ আকারে চলাচল করছে।
সিরাজগঞ্জ ট্র্যাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) সালেকুজ্জামান খান সালেক বলেন, মহাসড়কের ১৪টি স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হয়েছে। সেই ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো নিয়ে ঈদ উপলক্ষ্যে মহাসড়ককে যানজট মুক্ত রাখতে আমরা ইতোমধ্যে পুলিশ সুপার স্যারসহ সাসেক-২ ও মহাসড়কে কাজ করা সকল ঠিকাদারের সঙ্গে বসেছি। তারা আমাদের কথা দিয়েছেন ১৫ রোজার মধ্যেই মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো ঠিক করে দেবেন এবং রাস্তার কারণে যেন যানজট না হয় তার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।
তিনি আরও বলেন, ঈদযাত্রায় সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে আমাদের সবমিলিয়ে প্রায় ২০টি মোবাইল টিম কাজ করবে। তবে ঈদ উপলক্ষ্যে মহাসড়কে ট্র্যাফিক ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মোট কতজন পুলিশ সদস্য কাজ করবেন এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
সাসেক-২ এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মাহবুবুর রহমান রাসেল বলেন, সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার ও হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তারা আমাদের কিছু স্থান মেরামতের জন্য বলেছেন। আমরা বলেছি মহাসড়কের যেসব জায়গায় খানাখন্দ রয়েছে সেই স্থানগুলো মেরামত করে দেওয়া হবে। তবে এসকল জায়গাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা যায় না। ঝুঁকিপূর্ণ বলতে তো অন্যকিছু বোঝায়। এছাড়া কিছু এলাকায় ১৫ রমজানের মধ্যে চার লেনের নতুন সড়ক খুলে দেওয়া হবে এবং ঈদের আগেই নবনির্মিত নলকা সেতুর উভয় লেন খুলে দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার রাস্তার মান অনেক ভালো আছে। অনেক জায়গায় চার লেনের কাজ হয়ে গেছে। এছাড়া যানজট মূলত চালকদের হুড়োহুড়ি ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে গাড়ি চালানোর জন্য তৈরি হয়। আশা করছি গত বছরের চেয়ে এবারের ঈদযাত্রা আরও স্বস্তির হবে।
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল বলেন, মহাসড়কের কিছু স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এসকল বিষয় নিয়ে সাসেক-২ এর কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের নিয়ে কয়েক দিন আগে একটি মিটিং করেছি। ১২ থেকে ১৪ এপ্রিলের মধ্যে তারা সেগুলো সংস্কার করে দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
তবে ঈদ উপলক্ষ্যে মহাসড়কে কতজন পুলিশ সদস্য কাজ করবেন এই বিষয়টি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।