জাতির সংবাদ ডটকম।।
সিলেটের সাথে উন্নয়ন বৈষম্য দূর করতে বিভিন্ন কর্মসূচির ডাক দেয়া হয়েছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিটি পয়েন্ট অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, দেশের অন্যজেলার প্রকল্প পাশ হলেও সিলেটের কোন প্রকল্প আলোর মূখ দেখে না। ঢাকা সিটিতে ২৪শত, খুলনা ২৪শত, চিটাগং ৩১শত, বরিশাল ২৪শত কোটি, আর সিলেটের বেলায় ১৯কোটি তাও আবার ফিরে নেয়া হয়েছে। কাটছাট করে আরো কমানোর জন্য, আমার সিলেটবাসী জানতে চাই কারা সিলেট বিদ্ধেষী। বিগত ১৭ বছর আমরা বৈষ্যমের শিকার, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের আমলে সিলেটবাসী বৈষ্যমের শিক্ষার হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, সিলেট পর্যটন নগরীতে একটি বিশেষ ট্রেন দেয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেই ট্রেনটি ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে।ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে উন্নীত করার জন্য, সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-কক্সবাজার রেলপথে দুটি নতুন ট্রেন চালুর কথা ছিল, সেই প্রকল্প অদৃশ্য কারণে বন্ধ রয়েছে।
সিলেটে একটি ওশা প্রকল্প করার কথা ছিল, কিন্তু বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে খাবার পানি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ওয়াটার প্লান্ট বাস্তবায়ন করতে হবে।
হযরত শাহজালাল (র) এর মাটি বার বার বৈষ্যমের শিকার হবে তা মেনে নেয়া হবে না। দ্রæত সময়ের মধ্যে সিলেটবাসীর দাবি আদায় না হলে সিলেট বিভাগজুড়ে অবরোধ করা হবে।তাছাড়াও বিশে^র বিভিন্ন দেশে থাকা সিলেটীরা ইতোমধ্যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সিলেটের প্রাকৃতিক সম্পদের কারণে দেশের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণভ‚মিকা পালন করে যাচ্ছে সিলেটর সম্পদ। সিলেটের বাইপাস সড়ক গত দেড় যুগে সম্পন্ন হয়ে। এছাড়াও সিলেটের বিভিন্ন সড়কের বেহাল দশা। সিলেটের বাইপাস সড়কগুলো দ্রæত বাস্তবায়নের দাবী জানাচ্ছি।
আজ রোবার সকাল ১১টায় সিটি পয়েন্ট থেকে সুরমা মার্কেট পয়েন্ট পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করা হয়। দরগাহ মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা আসজাদ আহমদ এর সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, পেশাজীবি সংগঠনের নেৃতৃবৃন্দ।
সিলেটের ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায়ে গঠিত ‘সিলেট আন্দোলন’র উদ্যোগে এ কমর্সচির ডাক দেয়া হয়েছে। আন্দোলনকারীদের পক্ষে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসায়ী. সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষক, সাংবাদিক, ধর্মীয় ও পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
কর্মসূচিতে বলা হয়, উন্নয়নের ক্ষেত্রে সিলেট নানাভাবে বঞ্চনার শিকার। এ বিভাগের উন্নয়ন বৈষম্য দূর করতে দ্রæত সময়ের মধ্যে দাবী বাস্তবায়নের আল্টিমেটাম দেয়া হয়।
সিসিকের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কর্মসূচি ঘোষণা করে গত শুক্রবার জুমার বয়ানে বিষয়টি তুলে ধরতে সিলেট অঞ্চলের ইমামদের প্রতি আহŸান জানান। পাশাপাশি মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডার দায়িত্বশীলদেরকেও সিলেটের মানুষের ন্যায্য দাবিটি তুলে ধরার আহŸান তার। এছাড়া, গত শনিবার বাদ মাগরিব হযরত শাহজালাল (র.) দরগাহ চত্বর থেকে কর্মসূচির সমর্থনে একটি মশাল মিছিল বের হয়।
আরিফুল হক চৌধুরী আরো জানান, সড়ক ও রেল যোগাযোগের বিষয়ে বিদ্যমান সমস্যাবলী নিয়ে তিনি স¤প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা এবং রেল উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সাথে সাক্ষাত করেন। সাক্ষাতকালে তিনি জানিয়েছেন, এ সমস্যা সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহাল এবং তিনি নিজে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক পরিদর্শন করেছেন। বর্তমানে পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। গত সপ্তাহখানেক ধরে লোকজন ৬/৭ ঘন্টায় ঢাকায় যাতায়াত করতে পারছেন। আরিফুল হক চৌধুরী সড়ক যোগাযোগ নিয়ে কিছুটা সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও রেলের টিকেটসহ অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে এখনো কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ করেন। তবে, উপদেষ্টা সিলেটের জন্য ১০টি বগি বরাদ্দের আশ্বাস তাকে দিয়েছেন। বিমান ভাড়ার বিষয়টি এখনো উদ্বেগের।
আরিফুল হক চৌধুরী জানান্, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সিলেট সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। সিলেটের জন্য ২০২১ সালে সিলেটের উপজেলা ও ইউনিয়নসমূহের রাস্তা-ঘাট সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য ২৪শ’ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু, স্থানীয় সরকার সচিব ফের প্রকল্পটির ডিপিপি(ডেভেলপম্যান্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল ) তৈরি করার নির্দেশনা দিয়েছেন- বিষয়টি আমাদের জন্য হতাশার। বাদাঘাটে ওয়াটার ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট স্থাপনেরও তেমন অগ্রগতি নেই। এ অবস্থায় আগামী রমজানে সিলেটে পানির জন্য হাহাকার তৈরি হতে পারে বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেন। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে সিলেটের মানুষের রাজপথে নামা ছাড়া সামনে কোন উপায় নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দাবি আদায় না হওয়া ছাড়া আমরা রাজপথ ছাড়বো না। সিলেটে বসবাসকারী সকলের দাবী, সরকারীভাবে কোন সিন্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না।
কর্মসূচীতে সিলেটের জেলা প্রশাসক আসলে তার হাতে লিখিত দাবীর কপি হস্তান্তর করেন সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
এসময় জেলা প্রশাসক বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড় দ্রæত জমি অধিগ্রহণ কাজ চলছে এবং দ্রæত কাজ সম্পন্ন করার জন্য তদারকি চলছে। যত প্রকল্প আছে দ্রæত বাস্তবায়ন করা হবে। পানি সমস্যার সমাধানে কাজ চলছে, এছাড়াও ইয়ার লাইন্সের টিকের আপডাউন করা নিয়ে সরকার একটি আইন করতে যাচ্ছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়ন হলে তা নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে। জেলা প্রশাসক বলেন, রেল লাইন সংস্কারে এমন একটি পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে যাতে আগামী শত বছরের জন্য যাতে সিলেটের মানুষ আন্দোলন না করতে হই। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সিলেটে আরো একটি ফ্লাইট চালু হবে, রাস্তা সংস্কার, উন্নয়নে অনেকগুলো ট্রেন্ডার করা হয়েছে অতি দ্রæত বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন করতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট উন্নয়ন করতে হবে। সিলেটের পর্যটন শিল্প নিয়ে সরকারের মহা-পরিকল্পনা রয়েছে। দ্রæত বাস্তবায়ন হলে সিলেটবাসী উপকৃত হবে।