সুবুদ্ধির আশপাশেই সৌন্দর্য আর জ্ঞান মেধার বসবাস

বুধবার, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫

সৈয়দা রাশিদা বার
লেখক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক

 

মানুষ সাজুগুজু করলে, ভালো পরিবেশে থাকলে, ক্রিটিক্যাল ষড়যন্ত্র পলিটিক্স শয়তানি কুমতলব কুবুদ্ধিমুক্ত থাকলে, শয়তানি কুবুদ্ধি মাথাই না রাখলে, মানুষ সুস্থ থাকে আর বেশি দিন বাঁচে। হিংসার বশীভূত হয়ে অন্য মানুষকে, নিয়ে ষড়যন্ত্র আর বদমাইশি পাকালে, অকল্যাণ কামনা করলে, মানুষের ক্ষতির বীজ বপন করলে, নিন্দা গীবত কান ভাঙানি দিয়ে বেড়ালে, পাজেমো ফাইজলামি বেয়াদবি অমানবিকতার শিক্ষায় শিক্ষিত হলে এবং অপরকে ওই শিক্ষা দিলে, তারও খারাপ হয়, ভালো হয় না। শুধু বয়স্কদের মধ্যেই না, এটা শিশুদের মধ্যে দিলেও, কারো শাস্তি দেয়ার বন্দোবস্ত অনাথ শিশুর দিয়ে করালে অথবা নির্মম কুকর্মকা-টি শিশুর মগজে ঢুকিয়ে করলে।
যেমন পুত্রবধূ তার মাকে নিয়ে বোনকে নিয়ে অনাথ শিশুর সাক্ষাৎ সামনে, বৃদ্ধা অসহায় শাশুড়ি মায়ের হয়রানি লাঞ্ছিত গঞ্জিত হেয় প্রতিপন্ন অপমান অপদস্থ করলে এবং শিশুর দিয়ে করালে। এই অভদ্র শিক্ষা, শিশুর খারাপিতে দ্বিগুণ প্রভাব ফেলে। এটা যেমন অসহায় বৃদ্ধার কষ্টের কারণ শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে বেশি কার্যকরী হয়, তেমন বেশিই শিশুদের বা শিশুটির ক্ষতি হয়। অবশ্যই ক্ষতিটা বেচারা অসহায় বৃদ্ধার থেকে, কচি শিশুটারই বেশি হয়। কারণ সে যে ভুল শিক্ষায় শিক্ষিত হয়, সম্মানীয় ব্যক্তির সাথে বেয়াদবি করার শিক্ষা, এটাই তার অবনতির মূল কারণ পরবর্তীতে জীবন গড়ার ক্ষেত্রে হয়ে দাঁড়ায়, বিষয়টা বড়ই গুরুত্বপূর্ণ!!
প্রাপ্ত বয়সের সন্তানের মায়েরা গুরুত্ব না দিলে, এই শয়তানি করা মহাবিদ্যা জানা মহাগ্রন্থের উপরন্ত পাতা পৃষ্ঠা পড়ানো, মানে বেয়াদবি করা শিক্ষায় শিক্ষিত করা বা হওয়া ঐ শিশুর, ঘোড়া রোগে পেয়ে বসবে। হ্যাঁ শয়তানি করার মুভমেন্ট এটা ঘোড়া রোগ হয়ে যাবে বলতে এর নামই ঘোড়া রোগ । যা একদিন শিশুর জীবনেই উজ্জ্বল জীবন গড়ার ক্ষেত্রে, কাল হবে, কাল নাগ নাগিনী গোখরার ফণা হয়ে দাড়াবে।
পরকালের কথা বাদই দিলাম, আমি তার ইহকালের কথাই লিখছি। যদিও জানি হিংসা পরশ্রীকাতর ভুক্ত ভোগীর ইবাদত বন্দেগি করা বিফল। কবুল হয় না ওটা আল্লাহর দরবারে। জীবনের প্রথম স্তর, মাঝে স্তর, লাস্ট মানে শেষ স্তর, কোন স্তরেই স্বস্তি পাবে না জ্বলে পুড়বে মরবে ঘোড়া রোগের আগুনে। সম্মান পাওয়ার প্রশ্নই নাই। নিজেকে নিজেই অপরাধী তো মনে করবেই কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না, পথ থাকবে না।
কারণ মগজের বিষ প্রয়োগ একবার বস হয়ে গেলে, তাকে নিয়েই সরে, একলা সরে যায় না। তারপরও কোনদিন একটা ভালো পরিবেশে স্থান তার নিজের জন্য সে নিজেই করতে পারবে না । প্রবাদ আছে ‘ইল্লোত যায় ধুইলে, খাসলত যায় মরিলে । ওই যে শিশুকালের, মা নানী খালা কর্তৃক প্রভাবিত হওয়া, বিষক্রিয়ায়। তার উপরে প্রতিক্রিয়া হয়ে দাঁড়ায়। দিদার কাছে যেতে হয়না, ও দিদামনি না, ও শয়তান মহিলা … ইত্যাদি অভিজ্ঞতার আলোকে, বিষ প্রয়োগ হওয়া শিক্ষা, পাগলা কুকুরের মত, সারাটা জীবন নাড়িয়েই না তছনছ করে দেয় এই পথিক জনের। শিশুকালের তার ওই নষ্ট ভুল শিক্ষা, কোনদিন মন মানসিকতাই বড় হতে দেবে না। দেয় না ! টাকা থাকা মানেই বড় হওয়া নয়! এসির মধ্যে স্প্রিংয়ের খাটে, ময়ূরপঙ্খী বিছানায় ঘুমানো মানেই বড় হওয়া নয় । বড় হওয়া সোজা নয় । এর অর্থ জানার ক্ষমতা অর্জন করতে হলেও ঐতিহ্যবাহী হতে হয় ।
সেটা জানা মানেও মানুষের পরিচয় লাভ করা । ভুল শিক্ষা অপর প্রতিপক্ষকে শাস্তি দেয়ার জন্য দিলেও, ফিরে দাড়ায় তাই তার নিজেরই উপরে । সারা জীবন নিজেকেই কামড়িয়ে, তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াবে । এই ভয়াবহ কর্মকা- নিষ্পাপ শিশুর কাঁচা মনে প্রয়োগ করা থেকে, অবিলম্বে বিরত থাকা দরকার, শিশুর মা সহ সব মানুষের। সমাজের গৃহের মা নানি খালা কিংবা মাতা পিতার বিরত থাকতে হবে। শুধুমাত্র সন্তানের কাঁচা নিষ্পাপ শিশুর ভবিষ্যৎ উজ্জল মঙ্গলে ও কল্যাণের স্বার্থে ।
অসহায় বৃদ্ধা তো দুদিন পরে মরেই যাবে। আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়েই যাবে। এর জন্য দেশের প্রজন্ম অনাগত ভবিষ্যৎ এর ধ্বংস সর্বনাশ ডেকে আনবেন না। ঘরের বৃদ্ধ-শশুর শাশুড়ির অমঙ্গল অকল্যাণ কষ্টের মধ্যে ফেলানোর জন্য, মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার জন্য, নিজের নিষ্পাপ শিশুর জীবনে অমঙ্গল ডেকে আনবেন না।
ওই শিক্ষাটা তো একদিন তার আপনার উপরেও কার্যকরী করার উৎসাহ দেবে। জীবনের কিছুই কিন্তু বলা যায় না। কোন কিছু নিয়েই গর্ব অহংকার করা বোকামো ছাড়া কিছু নয়। কেননা ভাগ্য পরিবর্তন হতে সময় লাগে না। আর সেটা বিধাতার হাতে। তাই এইসব কুমন্ত্র দিয়ে নিজের শিশুর ভবিষ্যৎ নষ্ট করবেন না। শশুর শাশুড়ির বৃদ্ধকালের সুযোগ নিতে, কষ্ট দিতে, কান পড়া, কান ভাঙানি দিয়ে-নিয়ে বেড়াবেন না শিশুর মাধ্যমে। এটা আমি আমার তরফ থেকে নিষেধ করলাম কারো ইন্ডিকেট করে নয়। তবে ওই ধরনের ব্যক্তিদের সবাইকে। এর ভয়াবহ রূপ আপনার জানা থাকলে আপনিও বিরতি নিতেন, নিজের থেকেই। যখন আপনার এই বিষয়ে জ্ঞান হবে, তখন আপনার সময় থাকবে না, সংশোধনের।
সময় থাকবে না আপনার শিশুকে ফেরানোর অথবা মুক্ত করার। সমাজ সংসারে এটাই প্রচলন এবং রীতি । তাই কেউই ভালো থাকতে পারে নাই, এখনও পারছে না, সংশোধন না হলে ভবিষ্যতেও পারবেনা। দিনে দিনে সামনের দিন তো খারাপই আসতেছে । যাচ্ছে ভালো আসতেছে খারাপ। বড়ই দুঃখজনক বিষয় সময় থাকতে সংশোধন হয় না মানুষ, দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা হয় না যেমন। তাই আপনিও না বুঝে এটা করছেন। খারাপ কটু অনৈতিক শিক্ষা কখনোই ভালো কিছু দেয় না ধ্বংস ছাড়া। ওটা তার সারা জীবন বীরত্ব হতে বাধা দেয়, মেধা জ্ঞানে পিছিয়ে রেখে, তুলনা মূলকভাবে। ভালো কাজে উৎসাহ থাকে না, নিরুৎসাহিত হয়।
চেহারাও বিদঘুটে নষ্ট হয়, লাবণ্যতা হারাই, থাকেনা মাধুর্যতা । শরীর মনের স্বচ্ছলতা, এটা পরীক্ষিত বিষয় একদম সত্যি। জীবনে বহু জায়গায় বহু প্রমাণ দেখেছি এমনকি আমার ঘরেও প্রমাণ আছে। বয়স হলে নানান রোগে শোকে, অসুস্থতাই, অমানবিক অত্যাচারে নির্যাতনে চেহারা সুরত বদলায়, নষ্ট হয়, এটা স্বাভাবিক এবং আলাদা। কিন্তু বয়স না হতে, আগেই হয় চেহারা সুরতের, মেধা মননের অবনতি অধঃপতন, এটাই হলো বিষয় ।
পড়ন্ত বয়সে স্বামী হারানো আর অপ্রাপ্ত বয়সে বিধবা হওয়া এক নয়। অবশ্যই পার্থক্য আছে। ভালো কাজ করলেও, ভালো কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও, মন মানসিকতা ও শরীর স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। আর তাছাড়া নিরলস মন প্রাণের অধিকারী হতে, সুন্দর ভালো কাজে বলিষ্ঠ থাকতে, মাঝেসাজে সাজুগুজুও করা ভালো। এক্ষেত্রে বয়সের সাথে সাধ নাই।
কিন্তু আমাদের সমাজ এটা মেনে নেয় না বিশেষ করে দেখা যাচ্ছে শাশুড়ির একটু ভালো পরিচ্ছন্ন থাকা, বয়স্কর মত না থেকে, একটু সাজুগুজু করে মন মানসিকতায় ভালো থাকা, শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকা, দেখলে পুত্রবধূরা চক্ষুর আগলায়। চক্ষু রগরাই। ঠোট বিসরাই। রেগে মেগে ফুলে ঢোপ হয় । তবে আমার কথা এইভাবে শাশুড়িকে ভালো অবস্থানে দেখলে, পুত্রবধূরা চক্ষু সুল দৃষ্টিতে দেখবে কেন? যে বয়সেরই হোক সাজুগুজু করে স্বাভাবিক থাকলে শরীর মন ভালো থাকে। ভালো হয়। পুত্রবধূরা এই তুচ্ছ বিষয় নিয়েও দেখা যাচ্ছে এক ধরনের কৌতুহলে আসক্ত হয়।
ছোট করে, সমালোচনা করে, অপমান তো করেই। এমনকি অপবাদও দিতে পিছপা হয় না ইত্যাদি । মূলত এই সমস্ত করা মানুষরাই ষড়যন্ত্রকারী ক্রিটিক্যাল এবং পরশ্রীকাতর । সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা এবং সাহিত্য সংস্কৃতি সেবা, পত্রপত্রিকার প্রকাশক সম্পাদকের, ব্যবসা সেবাটাও অনেক বড়। সেবা পর্যায়ে এর উপরে ভালো কাজ নাই। কেননা তারা বৈষম্য অরাজকতা ও পাছে লোকে কিছু বলে, পরের নিন্দে কাহিনী ইত্যাদি এইগুলো করেনা । খারাপ চর্চা খারাপ কাজগুলোতে তারা থাকেনা। রাজনীতি করা ব্যক্তিরাও এক সময় ভালো কাজ করেন বলে খ্যাতি অর্জন করে ছিলেন। যখন রাজনীতির মধ্যে বাটপারি ছিলো না, এখন বাটপারি আছে। অন্যান্য সেক্টরেও আছে নানা রকম বাটপারির খেলা, পাঞ্জা ছক্কা।
বাটপারি মুক্ত, বদমাইশি শয়তানি মুক্ত, ভালো কাজে সংশ্লিষ্টতা রাখলে, সংশ্লিষ্ট থাকলে, সেই মানুষ বেশি দিন মানসিকভাবে সুস্থ থাকেন। তবে বদমাইশি কুচরিত্রিক কুন্নৈতিক চরিত্রহীন হলে, দেহের সংশ্লিষ্টতা দেহ ব্যবসায় জড়িত ব্যক্তির সবচেয়ে বেশি লাবণ্যতা নষ্ট হয়। ধ্বংস হয়। অন্যের ফেলানোর জন্য নিজের ঘরের সামনে বা নিজের উঠানে খাল কাটলে যা হয় অর্থাৎ কারো ধ্বংস চাইলে নিজেরই ধ্বংস আসে। জানতে হবে মানতে হবে, সুবুদ্ধির আশেপাশেই সৌন্দর্য আর জ্ঞান মেধার বসবাস।
কুমতলব কুবুদ্ধির আশপাশে আছে ধ্বংসের বসবাস। অপশক্তি অপকর্ম, অপপরিচর্যা, অপপরিকল্পনার প্রভাবে, আদর্শের ঘাটতি, যে কারণে সৌন্দর্য আর জ্ঞান মেধাও পটল তোলে। অর্থাৎ ধুরন্ধর চতুর্বাজ ধুরবাজদের থেকে চিরতরে সরে থাকে। সহজ সরল সাহিত্য সাংস্কৃতিক মনষ্ক, সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংস্কৃতিক সেবক, সব দিক থেকে যেমন ভালো, থাকেনও ভালো।