মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন:- মহামান্য উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী “একই পদে দুই ধরণের” বৈষম্যমূলক বেতন গ্রেড বৈষম্য নিরসন না করে অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিগত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে বৈষম্যমূলক প্রহসনের জি.ও. জারীর প্রেক্ষিতে গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রেস ক্লাবে আয়োজিত প্রেস কনফারেন্সে ঘোষনা মোতাবেক ঐ দিনের মধ্যে অডিটর পদকে ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ খ্রি. হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করে “জি.ও.” জারি না করায় গণ অনশন কর্মসূচি পালন করেন।
মঙ্গলবার,১৭ সেপ্টেম্বর সবুজ চত্ত্বর, হিসাব ভবন, সেগুনবাগিচায় সামনে সারা বাংলাদেশ থেকে দূই তিন হাজার আসা অডিট এন্ড একাউন্টস ডিপার্টমেন্টের অডিটর বৃন্দের গণ অনশন কর্মসূচীতে মোহাম্মদ আজিজ এই কথা বলেন ।
মোহাম্মদ আজিজ বলেন,মহামান্য উচ্চ আদালতের রায় এবং একই পদে দুই ধরণের” বৈষম্যমূলক বেতন গ্রেড বৈষম্য নিরসন না করে অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিগত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে বৈষম্যমূলক প্রহসনের জি.আইন, বিচার ও সংসদ বিষায়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় আইন উপেদেষ্টা জনাব আসিফ নজরুল স্যারের ইতিবাচক মতামতকে উপেক্ষা করে “ও. জারীর প্রেক্ষিতে গত ১৫ সেপ্টেম্বর তারিখে প্রেস ক্লাবে আয়োজিত প্রেস কনফারেন্সে ঘোষনা মোতাবেক ঐ দিনের মধ্যে অডিটর পদকে ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ খ্রি. হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করে “জি.ও.” জারি না করায় ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রি. তারিখ রোজ মঙ্গলবার, সকাল ১০.০০ ঘটিকা হতে সারা দেশের সিএজি’র কাঠামোভূক্ত সকল নন-ক্যাডার কর্মকর্তা- কর্মচারিগণ সবুজ চত্ত্বর, হিসাব ভবন, সেগুনবাগিচায় গণ অনশন কর্মসূচী পালন করছেন।
তিনি বলেন,মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে (স্পেশাল অরিজিনাল জুরিসডিকশান) দায়েরকৃত রিট পিটিশন নং-৯৩৯৯/২০১৫ এর রায় গত ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ খ্রি. তারিখে প্রদান করা হয়। উক্ত রায়ে “to upgrade the post of the petitioner” অর্থাৎ অডিটর পদটিকে ১১তম গ্রেড হতে ১০ গ্রেডে উন্নীতকরণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে সরকার কর্তৃক উচ্চ আদালতে সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নং ২৭১১/২০১৬ দায়ের করা হলে বিগত ১৯ মার্চ ২০১৭ খ্রি. তারিখে বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক আপিল খারিজ করা হয়। পরবর্তীতে রাষ্ট্র পক্ষ থেকে উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে মহামান্য আপিল বিভাগে সিভিল রিভিউ পিটিশন নং- ৩৯৮/২০১৮ দায়ের করা হলে বিগত ১১ ফ এবং ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক রিভিউ পিটিশনটি খারিজ করা হয়। রায়ের প্রেক্ষিতে অর্থ মন্ত্রণালয় অডিটর পদটিকে ১০ গ্রেডে উন্নীত না করে শুধুমাত্র রিটকারী ৬১ জন অডিটরের পদকে ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করে স্পষ্টতই বৈষম্যের সৃষ্টি করে। অডিটর পদটিকে ১০গ্রেডে উন্নীত না করায় বাকি প্রায় ৩৫০০ অডিটর ১১তম গ্রেডে অবস্থান করে। আদালতের রায় সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন না করায় ৩টি কনটেম্পট পিটিশন (কন্টেম্পট পিটিশন নং-৭৫৯/২০১৯, ২৬৪/২০২১ এবং ৫৬৯/২০২১) দায়ের করা হয়। কনটেম্পট পিটিশনের রায়েও পিটিশনকারী অডিটরদের পূর্বের প্রদত্ত রায়ের অনুরূপ মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়।
উক্ত রায়ের আলোকে এবং অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ বিভাগ এর স্মারক নং- ৩২৮, তারিখ: ০৩ নভেম্বর ২০১৩ খ্রি. ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং-৫৫ তারিখ: ১১ এপ্রিল ২০১৮ খ্রি. এর আলোকে অডিটর পদকে ১১তম হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে (পূর্বে বাস্তবায়নকৃত ৬১ জন অডিটরের ন্যায়) গত ০৮ আগষ্ট ২০২৪ খ্রি. তারিখে কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) মহোদয় বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
তিনি বলেন,সিএজি কার্যালয় কর্তৃক ‘অডিটর’ পদকে ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেড (২য় শ্রেণী) তে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে স্মারক নং-৫৬৫, তারিখ: ১২ আগষ্ট ২০২৪ এর মাধ্যমে সচিব, অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণলায় বরাবর পত্র প্রেরণ করা হয়। তৎপ্রেক্ষিতে, অর্থ মন্ত্রণালয় এর প্রশাসন-২ অধিশাখা হতে স্মারক নং-৩৪০ তারিখ: ১৩ আগষ্ট ২০২৪ খ্রি. এর মাধ্যমে অডিটর পদের বেতন গ্রেড ১১তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে (২য় শ্রেণী) উন্নীতকরণ করা যাবে কি না, সে বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য সচিব, আইন ও বিচার বিভাগ, আইন মন্ত্রণালয় বরাবর পত্র প্রেরণ করা হয়। সেই আলোকে, আইন ও বিচার শাখা এর স্মারক নং-৭৮ তারিখ: ২০ আগষ্ট ২০২৪ খ্রি. এর মাধ্যমে মাননীয় আইন উপদেষ্টা জনাব ড. আসিফ নজরুল সিএজি কার্যালয় ও এর অধীনস্থ দপ্তরসমূহের সকল ‘অডিটর’ পদের বেতন ১১তম গ্রেড হতে ১০ গ্রেডে উন্নীতকরণের সম্মতিসহ মতামত অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়।
তিনি আরো বলেন,প্রায় ০৩ সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পর বিগত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রি. তারিখে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন ও সমন্বয় অনুবিভাগ হতে পত্র স্মারক নং-৩৮৬ এর মাধ্যমে বলা হয়, “কনটেম্পট পিটিশন নং-৭৫৯/২০১৯, ২৬৪/২০২১ এবং ৫৬৯/২০২১ এর সকল আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা প্রয়োজন। কেননা, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ২০ অক্টোবর ২০২২ খ্রি. তারিখের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি মামলার সকল আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা নিঃশেষ হওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে এবং বর্ণিত কনটেম্পট পিটিশনগুলোর বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় কর্তৃক আপীল দায়ের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। উক্ত আপীলের বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতের আদেশ প্রাপ্তির সাথে সাথে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
এখানে উল্লেখ্য যে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ২০ অক্টোবর ২০২২ খ্রি. তারিখের যে পত্রের উল্লেখ করা হয়েছে বস্তুত তা “উন্নয়ন প্রকল্প হতে রাজস্ব খাতে জনবল আত্মীকরণ/ নিয়মিতকরণ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা যা সম্পূর্ণ রাজস্বভুক্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সিএজি এর অডিটর পদের জন্য সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক, প্রহসনমূলক ও অপ্রযোজ্য।
তিনি বলেন,পরবর্তীতে উক্ত পত্র জারীর ২৪ ঘন্টার মধ্যেই বিগত ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রি. তারিখে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন ও সমন্বয় অনুবিভাগ হতে পত্র স্মারক নং-৩৯১ এর মাধ্যমে পূর্বের ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রি. তারিখের পত্রে উল্লেখকৃত ০৩ টি কনটেম্পট পিটিশনের সাথে সংশ্লিষ্ট পিটিশনার অর্থাৎ অডিটরগণকে রিট পিটিশন নং- ৯৩৯৯/২০১৫ এর ৬১ জন পিটিশনারের ক্ষেত্রে প্রদত্ত সুবিধার অনুরূপ সুবিধা প্রদানপূর্বক বিজ্ঞ আদালতের আদেশ প্রতিপালনের নির্দেশনা দিয়ে বাংলাদেশের কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল বরাবর পত্র প্রেরণ করা হয় যা অর্থ মন্ত্রণালয়ের ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রি. তারিখে জারীকৃত পত্রের সহিত সাংঘর্ষিক ও স্ববিরোধী। অর্থাৎ অডিটর পদটিকে ১১ তম গ্রেড হতে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণের ক্ষেত্রে মহামান্য উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে এবং আইন মন্ত্রণালয়ের ইতিবাচক মতামত উপেক্ষা করে অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরপর দু’দিনে দুই ধরনের অপ্রাসঙ্গিক ও স্ববিরোধী পত্র জারী আদালত অবমাননার সামিল।
তিনি আরো বলেন,অর্থ বিভাগ, বাস্তবায়ন অনুবিভাগের পত্র নং ৬৬, তারিখ: ২৩ এপ্রিল ২০২২ অনুযায়ী যে সকল কর্মকর্তাগণ মামলার পক্ষভুক্ত নন সেসকল কর্মকর্তাগণও কনটেম্টট পিটিশন এর রায় অনুযায়ী সেম ফুটিং (same footing) এর ক্ষেত্রে সমসুবিধা অর্থাৎ জাতীয় বেতন স্কেলসহ অন্যান্য বিধিবিধান মোতাবেক বেতন নির্ধারণী সুবিধা প্রাপ্ত হবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা সকল ডিপার্টমেন্টের সংস্কারমূলক কাজের জন্য তাগিদ প্রদান করলেও আমাদের ডিপার্টমেন্ট আমাদের প্রতি বৈষম্যমূলক অর্থাৎ “অডিটর পদে বিদ্যমান দুই গ্রেড” বৈষম্যটি দূরীকরণে কালক্ষেপণ করছে। বৈষম্যহীন বাংলাদেশে আমরা যখন আমাদের ন্যায্য অধিকার দাবী করছি তখন সিএজি কার্যালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে এখনো বিরাজমান বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের কিছুসংখ্যক অনুসারী ও সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী একটি সিন্ডিকেট কর্তৃক আমাদের বিরুদ্ধে কাল্পনিক, ভিত্তিহীন এবং অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে। আমরা লক্ষ্য করছি, আমাদের ন্যায্য অধিকারের প্রতি মহামান্য উচ্চ আদালতের রায় ও মাননীয় আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল স্যারের সদয় সম্মতি থাকা সত্ত্বেও তা উপেক্ষা করে বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন, জনসেবা প্রদানে বিঘ্ন সৃষ্টি, অডিট এন্ড একাউন্টস বিভাগে বৈষম্য জিইয়ে রাখা এবং অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমাদের ন্যায্য অধিকারের বিষয়ে বাংলাদেশের প্রায় সকল ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া অবগত আছে। আমরা আশা করি আদালতের আদেশের প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক অর্থ মন্ত্রণালয় অডিটর পদকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করে দ্রুত “জি.ও.” জারির মাধ্যমে বৈষম্যহীন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করবেন।
গণ অনশন কর্মসূচীত বক্তব্য রাখেন সমন্বয়ক মোঃ আজিজ আরো উপস্থিত ছিলেন, মোঃ আল আমিন, আলিমুর রহমান ডালিম, মোঃ শাহিনুর রহমান,মোঃ আলী আকবর সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।