নিজস্ব প্রতিবেদক : শতশত কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ নিয়ে চাকরির মেয়াদকাল শেষ করলেন ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান।
বুধবার (১০ জানুয়ারী ২০২৪) ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এর সাবেক এই ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিদায় উপলক্ষে ডেসা-ডিপিডিসি’র অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কল্যান সমিতির পক্ষে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
‘ভুতুড়ে বিল’ অর্থ কেলেঙ্কারিসহ নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য বছরের শেষ দিন পর্যন্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ডিপিডিসির এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
২০১৭ সালের জুনে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এর প্রধান প্রকৌশলী (পরিকল্পনা ও নকশা) পদ থেকে ডিপিডিসি’র এমডি নিযুক্তহোন বিকাশ দেওয়ান।
অভিযোগ আছে, করোনা মহামারির মধ্যেই পরিকল্পনা করে গ্রাহকের কাছ থেকে বিদ্যুতের বাড়তি বিল আদায় করে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)।
বিকাশ দেওয়ানের পরিকল্পনায় রাজধানীর দক্ষিণ ও নারায়ণগঞ্জের সাড়ে ১৩ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে করোনা মহামারির মধ্যে কয়েকগুণ অতিরিক্ত বিল আদায় করে নেয় ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)।
মজার বিষয় হচ্ছে, করোনার মত চরম দুর্যোগকালে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে ধরা পড়ল যে সংস্থাটি তারই প্রধানকে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের ‘শুদ্ধাচার পুরস্কার’ দেওয়া হয়েছে।
ঐ সময়ে প্রথম শ্রেণির দৈনিকে গুলোতে এই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ পেলেও পুরস্কার হাতছাড়া হইনি বিকাশের।
তবে ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের অভিযোগে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) পাঁচ প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে আরও ৩৬ প্রকৌশলীকে শোকজ (কারণ দর্শানোর নোটিশ) করা হয়।
প্রকৌশলী বিকাশ ১৯৫৯ সালের ১১ই জানুয়ারি রাঙামাটিতে জম্মগ্রহণ করেন। তিনি সাবেক বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, চট্টগ্রাম, (বিআইটি) বর্তমানে চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (চুয়েট) থেকে বিএসসি (ইঞ্জিনিয়ারিং) ডিগ্রী অর্জন করেন।
গতবছরের ৮ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা পড়া অভিযোগ পত্র থেকে জানাযায়, ‘অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় প্রায় ১৪০০ কোটি টাকা পাচার করেছে ডিপিডিসির এমডি বিকাশ দেওয়ান’।
বিদেশি এবং ঠিকাদারদের নিয়ে মদ পার্টির আয়োজনসহ দূর্নীতির সকল সেক্টরে তার পদচারণার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগ পত্রে সাড়ে ৬ লাখ প্রিপ্রেইড মিটারের কাজ পছন্দের ঠিকাদারকে পাইয়ে দেয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করা হয়েছে।
প্রজেক্ট পিডিদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে নিম্নমানের মিটার ক্রয় এবং গ্রাহক হয়রানীর বিষয়টিও তুলে ধরেছেন।
এছাড়াও ডিপিডিসির সুপারভাইজরি কন্ট্রোল এবং ডেটা অধিগ্রহণ (SCADA) প্রজেক্ট ছয়শত কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার কোটি টাকা করার অপতৎপরতা ও জিটুজি ও পিডিএসডি প্রজেক্টে অন্য কাউকে অংশগ্রহণ করতে না দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
ঘুষ বানিজ্যের মধ্যে পিডিএসডি প্রজেক্টের প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্যাবল চুরি এবং এই ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আড়াই কোটি টাকার বিনিময়ে ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্ব প্রধানসহ দূর্নীতি দমন কমিশনে(দুদক) জমা পড়া দুই পাতার অভিযোগ পত্রে প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ানের বিরুদ্ধে প্রকল্প ব্যয়ে ঘষামাজা, ঠিকাদার নিয়োগ ও কাজ বন্টন, ভয়ভীতি প্রদর্শন, প্রজেক্ট দেখভালের দায়িত্বে লুকোচুরি, বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ, অভিযুক্তদের প্রমোশন, নিয়োগ-বদলী উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়াও ডিপিডিসি’র এই পদে নিয়োগ পাওয়ার আগে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এর প্রধান প্রকৌশলী (প্লানিং অ্যান্ড ডিজাইন) হিসেবে দায়িত্বে
থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে বিদেশ ভ্রমন সংক্রান্ত একটি অনিয়মের মামলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে জমা হওয়া অভিযোগের বিষয়ে, ঢাকা পাওয়ার ডিসট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) এমডি প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ানের মতামত জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।