মাধবপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ!

শনিবার, জুন ১, ২০২৪

 ত্রিপুরারী দেবনাথ তিপু ।।

হবিগঞ্জের মাধবপুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা (প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার) দায়িত্ব দেওয়ার মধ্যে নানা অনিয়ম,স্বজনপ্রীতি ও কারসাজির অভিযোগ উঠেছে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে উপজেলা জুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।

উপজেলার নির্বাচনের প্রিজাইডিং অফিসার , সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার নিয়োগে নির্দিষ্ট প্রার্থীর পছন্দের লোক নিয়োগ ও অভিজ্ঞদের বাদ দিয়ে এমনকি শিক্ষক রেখে অফিস সহকারীকে দায়িত্ব দিয়েছেন।

বুধবার(৫ জুন) উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

মৌলানা আছাদ আলী ডিগ্রী কলেজ থেকেই ২০ জন শিক্ষককে প্রিজাইডিং অফিসার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।অথচ পার্শ্ববর্তী মনতলা শাহজালাল সরকারি কলেজ থেকে মাত্র ৭ জন প্রিজাইডিং অফিসার নেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় বিগত ৭টি নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মনতলা শাহজালাল সরকারি কলেজের ৩ জন প্রভাষককে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সহকারী প্রিজাইডিং পদে নিযুক্ত করায় এবার তারা তাদের সাথে বৈষম্য করার কারণে ডিউটি না করার ঘোষণা দিয়েছেন।ওই ৩ জন কলেজ প্রভাষক হলেন – শাহ মো:শামসুজ্জামান,শেখ রফিকুল ইসলাম ও সৈয়দ মোহসিনুল হোসাইন।

তাদের অভিযোগ,তারা কারো তাবেদদারী করে না কারো নীল নকশা বাস্তবায়নে রাজি নয় তাই তাদের সাথে বৈষম্য করা হয়েছে।

 

উপজেলা সদরে অবস্থানরত যে সকল কিন্ডারগার্টেন ইএমআইএস কোড ধারী প্রতিষ্ঠান এবং জাতীয় দিবস গুলোতে ইউএনও অফিস থেকে চিঠি প্রাপ্ত অংশগ্রহণ কারী কিন্ডারগার্টেন গুলোর শিক্ষক দায়িত্ব পায়নি বরং নামধারী কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক দায়িত্ব পেয়েছেন এতে উপজেলা সদরের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

 

উপজেলার ফুলকলি কিন্ডারগার্টেনর ২২ জন শিক্ষকের মধ্যে থেকে ২২ জনকেই পোলিং অফিসার নেয়া হয়েছে যদিও এর মধ্যে ৩ জন স্বেচ্ছায় ডিউটি বাতিল করেছেন।ওই কিন্ডারগার্টেনের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মেয়র হাবিবুর রহমান মানিক বিএনপি হতে নির্বাচিত মেয়র।

 

এ ছাড়া আরো অনেক কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া হলেও ঐতিহ্যবাহী কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের নির্বাচনী দায়িত্বে নিযুক্ত না করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

 

উপজেলা প্রশাসনের কুচকাওয়াজ সহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলোতে অংশ নেওয়া উপজেলা সদরে অবস্থানরত ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বুশরা ইসলামিক কিন্ডারগার্টেন ( ইএম আই এস কোড : ৬০৩০৬১৮০৩) ও ব্লু বার্ড কিন্ডারগার্টেনের কোন শিক্ষককে নির্বাচনী দায়িত্বে নিযুক্ত না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। শিক্ষকরা বলেন আমাদের প্রতিষ্ঠানের নামে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার শিক্ষার্থীদের প্রবেশ পত্র নিয়ে পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করে এমন প্রতিষ্ঠান থেকে দায়িত্বে নেয়নি বরং নতুন কিছু নামধারী প্রতিষ্ঠান থেকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা পুলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন।

 

অন্যদিকে মাধবপুর উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আল-আমিনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান জাগরন আইডিয়াল একাডেমীর শিক্ষকদের পোলিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হলেও চৌমুহনী ইউপির যুবলীগ নেতা এমদাদুল ইসলাম সুজনের মালিকানাধীন কিন্ডারগার্টেন ইদ্রিস একাডেমির কোন শিক্ষককেই দায়িত্বে দেয়নি। এ নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ।

 

এসব অনিয়ম দুর্নীতি খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন আনারস প্রতীকে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ও হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম ও শালিক পাখির প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী ও আওয়ামীলীগ নেতা সৈয়দ হাবিবুল্লাহ সূচন ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান আরেফিন রাজিব।

 

জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, বর্তমানে আনারস প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী এবিষয়ে জানতে চাইলে বলেন,এখানে আমি আশা করব নিরপেক্ষ ভাবে যাতে এগুলো করা হয়,এর মধ্যে নিরপেক্ষতার কোনো ঘাটতি দেখি জেলা নির্বাচন অফিস এবং প্রয়োজনে আমি চিফ নির্বাচন অফিস যাবো,এটা নিয়ে কোনো উল্টা পাল্টা হলে আমি কোনো প্রকার ছাড় দিবনা।

 

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল লায়েস দুলাল জানান, ভোট গ্রহন কর্মকর্তা নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলা টাইমসকে বলেন, নির্বাচন অফিস আমরা শুধু ট্রেনিং করাইতেছি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফয়সাল বলেন, ভোট গ্রহন কর্মকর্তা নিয়োগে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তার এখতিয়ার। তিনি এবিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি না।