স্টাফ রিপোর্টারঃ নওগাঁর সাপাহারে স্বামী ও শ্বশুর, শাশুড়ির অমানুষিক নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে নিগার সুলতানা (৩৩) নামের এক গৃহবধূ কিটনাশক পানে আত্মহত্যা করেছে। এঘটনায় নিহত ওই গৃহবধূর পিতা আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে স্বামী,শ্বশুর ও শ্বাশুড়ির বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় মামলা দায়ের করেছেন।গৃহবধুর পিতা রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ মজিবুর রহমান চৌধুরীর দায়েরকৃত এজাহার সুত্রে জানা গেছে। প্রায় ১৭ বছর পূর্বে উপজেৱার হোসেনডাঙ্গা গ্রামের গোলাম মোস্তফার সহিত তার মেয়ে মোছাঃ নিগার সুলতানা(৩৩) এর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে গোলাম মোস্তফা,তার পিতা আঃ সালাম ও মা মোছাঃ রাহেলা বেগম নিগার সুলতানাকে বিভিন্ন সময়ে শরীরিক এবং মানসিক ভাবে নির্যাতন করে আসছিল। এর মধ্যে ঘর সংসার করা কালে মেয়ের ২টি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহন করে । নিগার সুলতানা সন্তান দুটির সুখের
কথা চিন্তা করে নির্যাতন সহ্য করে আসামীর সহিত এযাবৎ ঘর সংসার করে আসছিল। এদিকে পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়ে সামান্য ঝগড়া-কলোহ বিবাদ হলেই আসামীগণ তাকে বিভিন্ন সময়ে মারপিট করতো এবং বলতো যে তুই মরে গেলে আমরা সবাই শান্তিতে থাকতে পারবো। তুই দুনিয়া থেকে চলে যেতে পারিস না। এমতাবস্থায় গত ৯ জুন সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮ টার সময় আসামী গোলাম মোস্তফা সহ
অন্যান্য আসামীগণ নিগার সুলতানাকে মারপিট করে গুরুত্বর আহত করে। এসময় তারা বলে যে তুই এখনও মরিস নি,তুই মরলে আমরা বেঁচে যাই। তাদের তিরস্কারের কারনে সে আত্মহত্যার জন্য প্ররোচিত হয় ও আসামীর শয়ন ঘরে প্রবেশ করে বিষপান করে। এসময় মুমূর্ষু অবস্থায় স্থানীয় লোকজন তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক গণ তাকে দ্রুত
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে চিকিৎসাকালীন অবস্থায় গত ১০জুন সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে নিগার সুলতানার মৃত্যু হয়। রাজশাহী রাজপাড়া থানায় অভিযোগ করে লাশের ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়। গৃহবধুর পরিবার পরিজন লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরে আসার পথে তানোর বাজারে পৌছালে স্বামী গোলাম মোস্তফা স্ত্রীর লাশবাহী গাড়ী থেকে কৌশলে পালিয়ে যায়। এ দিকে লাশের গাড়ি সাপাহার উপজেলার নিশ্চিন্তপুর মোড় পার হলে জামাই গোলাম মোস্তফার আত্মীয় পরিচয় দানকারী কয়েকজন লোক মোটরসাইকেল নিয়ে গাড়ীর পথ রোধ করে গাড়ী থেকে মোস্তফার মা ও ছোট ছেলে সন্তান আল্ নাহিয়ান কে সহ নিহত গৃহবধুর লাশ ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালায়। তারা নিগার সুলতানার লাশ বাহী গাড়ীতে রাখা সোনা গহনার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে এ বিষয়ে গৃহবধূর স্বামী গোলাম মোস্তফা,শ্বশুর মোঃ আঃ সালাম ও শ্বাশুড়ি রাহেলা বেগম কে আসামী করে দন্ডিবিধির ৩০৬ ধারা মোতাবেক আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলা দায়ের করেন নিহত গৃহবধূর নিগার সুলতানার পিতা মজিবুর রহমান চৌধুরী।