দুদকের নিষেধাজ্ঞা আসার আগেই দেশ ত্যাগের চেষ্টায় কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল

রবিবার, জুন ৩০, ২০২৪

জাতির সংবাদ ডটকম।।

অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনে অভিযুক্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রথম সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের দেশত্যাগের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আসছে। দুদকের আবেদনে তার সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ দেওয়ার পরই তিনি দেশ ছাড়ার জন্য চেষ্টা করছেন বলে তথ্য রয়েছে।

 

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে জানা গেছে, এনবিআর সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে খুব শিগগির আলাদতে আবেদন করবে সংস্থাটি।

 

বর্তমানে মাহমুদ ফয়সাল দেশেই অবস্থান করছেন। তবে তিনি দুদকের নিষেধাজ্ঞা আসার আগেই দেশ ত্যাগের চেষ্টা করছেন বলে তথ্য রয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি পরিবারের অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ বন্ধ রেখেছেন। ঢাকার বেইলি রোডের বাসায় এমনকি অফিসেও তিনি যাচ্ছেন না। এছাড়াও মাহমুদ ফয়সালের পরিবারের সদস্য ও স্বজনরাও গা ঢাকা দিতে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালদের পরিবারের অবস্থা আগে খুব একটা ভালো ছিল না। পরিবারের অনেকেই এক সময় কৃষি কাজে নিয়োজিত ছিল। ফয়সালের বাবা হিরু কাজি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তবে কয়েক বছর ধরেই তাদের আমূল পরিবর্তন হতে থাকে।

 

বিষয়টি নিশ্চিত করে খুলনা সিটি করপোরেশনের ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এম ডি মাহফুজুর রহমান বলেন, কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের মা আমার এখানে মাঝে মধ্যে হ্যারিয়ার গাড়ি নিয়ে আসতেন। ফয়সালের ছোট ভাই খুলনায় আইনজীবী হিসেবে নিয়োজিত আছেন।

 

বর্তমানে তাদের গ্রামের বাড়িতে কেউ আছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রামের বাড়িতে তারা কেউই নেই। আমরা খবরের কাগজের মাধ্যমে জানতে পেরেছি কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের দুর্নীতির বিষয়ে। তবে গ্রামের বাড়ি এখন ফাঁকা রয়েছে।

 

এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক (অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা) মো. মোস্তাফিজের আবেদনের ভিত্তিতে কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের আয় বহির্ভূত স্থাবর-অস্থাবর জব্দের নির্দেশ দেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসামছ জগলুল হোসেন।

 

কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল খুলনার খান জাহান আলী উপজেলার মুজগলি এলাকার কাজী আব্দুল হান্নানের (হিরু কাজী) ছেলে।

 

কাজী মাহমুদ ফয়সালের সম্পদের বিবরণিতে দেখা গেছে, উত্তর মেরাদিয়া মৌজায় শাশুরি মমতাজ বেগমের নামে ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা প্লট ক্রয় করেছেন ফয়সাল।

 

এছাড়াও শশুর আহম্মেদ আলীর নামে রমনার সিদ্ধেশ্বরী রোডে রূপায়ন স্বপ্ন নিলয় নামক বিল্ডিং এর ১০ম তলায় আই ১০ নামক ২৯৯০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট ও ২৩৮ বর্গফুট আয়তনের কার পার্কিং এর জায়গা ক্রয় করেন। ফ্ল্যাট ক্রয় বাবদ মাহমুদ ফয়সাল ১ কোটি টাকা পরিশোধ করেন।

 

স্ত্রী আফসানা জেসমিনের নামে বড় কাঠালদিয়া মৌজায় ৭৫ লাখ টাকা দিয়ে ৫ কাঠার প্লট ক্রয়, স্ত্রীর সঙ্গে যৌথভাবে বড় কাঠালদিয়া মৌজায় আরও ৫ কাঠার প্লট ক্রয় করেছেন ৩৪ লাখ ৭ হাজার টাকায়। রূপগঞ্জ উপজেলার কামতা মৌজায় পূর্বাচল নতুন শহর আবাসিক প্রকল্পে ২০০.১৭ বর্গমিটার আয়তনের ৭ লাখ ৪২ হাজার টাকার প্লট কিনে দিয়েছেন ফয়সাল।

 

মাহমুদ ফয়সালের নিজের নামে রূপগঞ্জ উপজেলার কামতা মৌজায় ছয় কাঠা এর ১/৭ অংশ দুই লাখ টাকায় প্লট ক্রয়, গুতিয়াব মৌজায় সাত লাখ ১০ হাজার টাকায় ০.০৩ একর প্লট, হারারবাড়ি মৌজায় ১২ লাখ ১৬ হাজার টাকায় ৩৩৪.৪৫ বর্গমিটার প্লট, খিলগাঁও এর নন্দিপাড়া মৌজায় দুই লাখ টাকায় ০.২৭ একর এর ১/৬০ অংশ বা ০.৪৫ শতাংশ জমি কিনেছেন। এছাড়াও আবু মাহমুদ ফয়সাল, তার স্ত্রী আফসানা জেসমিন, শ্বশুর আহম্মেদ আলী এবং শাশুড়ি মমতাজ বেগমের নামে সর্বমোট ৬ ছয় কোটি ৮৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা) মূল্যের স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।

 

এদিকে আবু মাহমুদ ফয়সাল ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে সর্বমোট ৯ কোটি ৫১ লাখ ৫০ হাজার ৯০৮ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।

 

সেই হিসেবে সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের মোট স্থাবর ও অস্থাবর ১৬ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৯০৮৭ টাকার সম্পত্তির জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

 

দুদকের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকার ভাটারা, রমনা, খিলগাঁও এবং নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ জমি বাড়ি এবং ফ্ল্যাট রয়েছে এই সচিবের নামে ও বেনামে।

 

এছাড়াও মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, অগ্রনী ব্যাংক এবং ঢাকা ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় বিভিন্ন হিসেব নাম্বারে বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে সচিব আবু মাহমুদ ফয়সালের নামে বেনামে।সূত্র -ঢাকা টাইমস্