১০ দফা দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করেন রেমিট্যান্স ফাইটার্স

রবিবার, আগস্ট ১৮, ২০২৪

জাতির সংবাদ ডটকম।‌

অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে ১০ দফা দাবী উপস্থাপন করেন রেমিট্যান্স ফাইটার্স।

 

রবিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জহুর হোসেন মিলনায়তনে রেমিট্যান্স ফাইটার্স এর উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন এর মাধ্যমে এ দাবি জানানো হয়।

 

ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন,বিদেশগামী শ্রমিকদের বড় একটা অংশই অদক্ষ। তাদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে যথাযথ প্রশিক্ষণের মধ্যমে। তাহলে এসব দক্ষ শ্রমিকরা বিদেশে গিয়ে শ্রমের যথাযথ মূল্য পাবেন। বিদেশে গিয়ে অদক্ষ আধাদক্ষ শ্রমিক হিসেবে কম বেতনে যেন চাকরি করতে না হয়, প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে যাওয়া দক্ষ অভিজ্ঞ শ্রমিকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি বেতনের চাকরি যাতে পেতে পারেন, তেমনি যোগ্যতা নিয়ে বিদেশে যেতে হবে।

তিনি আরো বলেন,এক্ষেত্রে বায়রাকে অবশ্যই আরো ডাইনামিক ভূমিকা পালন করতে হবে। অধিকসংখ্যক অতি দক্ষকর্মী ও প্রফেশনালস পাঠানোর উদ্যোগে বায়রাকে বড় ক্যাটালিস্টের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। এটি নিশ্চিত—অদক্ষ কর্মী পাঠালে শুধু কর্মীর সংখ্যাই বাড়বে, প্রবাসী আয় সেই তুলনায় বাড়বে না।

 

আহম্মেদ উল্লাহ সাদী বলেন, অধিকসংখ্যক প্রবাসী কর্মী চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কিংবা কাজ না করেই ফিরে আসতে বাধ্য হন। প্রবাসী কর্মীদের ফিরে আসার আরেকটি কারণ অদক্ষতা। হয়রানি ও প্রতারিত হওয়া থেকে প্রবাসী কর্মীদের রক্ষা করতে হলে প্রতিটি নিয়োগ ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। কাগজপত্র ঠিক থাকা সত্তে¡ও তারা যাতে বিদেশে হয়রানির শিকার না হন, গন্তব্য দেশটিকে তা নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোকে নিবিড়ভাবে তদারক করতে হবে।

সৌরভ আল জাহিদ বলেন,অর্থনীতিতে প্রবাসীদের ভ‚মিকা অনেক। তারা জিডিপিতে ছয় থেকে সাত শতাংশ অবদান রাখছেন। বাংলাদেশের কর্মীরা যেকোনো ধরনের কাজ করতে পারেন। তাদের দক্ষ করে তুলতে হবে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা প্রমাণ হয়েছে ছাত্র আন্দোলনের সময়, তপূর্ব আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক সংকটেও প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্বল। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প উৎপাদন, স্কুল-মাদ্রাসা, মসজিদ, হাসপাতাল স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডেও এ অর্থ ব্যয় হয়। রেমিট্যান্স আয়ের প্রায় ৬৩ শতাংশ ব্যয় হয় দৈনন্দিন খরচের খাতে। এতে ওই পরিবারগুলোর দারিদ্র্য দূর হয়।

 

রেমিট্যান্স ফাইটার্সদের ১০ দফা দাবী সমুহ:

(১) বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোতে প্রবাসীদের সাথে পূর্ণ সম্মানের সাথে আচরণ নিশ্চিত করতে হবে। বিমানবন্দরসহ দেশের যেকোন স্থানে প্রবাসীরা হয়রানির সম্মুখীন হতে হবে না এমন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

 

(২) রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে সরকার প্রদত্ত প্রণোদনার পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

 

(৩) প্রবাসীদেরকে রেমিট্যান্স সার্টিফিকেট বা অগ্রাধিকার পাস প্রদান করতে হবে।

 

(৪) বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী দূতাবাস বা কনস্যুলেটে প্রবাসীদেরকে আন্তরিকভাবে সেবা প্রদান করতে হবে, জরুরী সেবা সমূহ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে, যেমনঃ পাসপোর্ট নবায়ন, প্রবাসীদের মৃতদেহ দ্রুততম সময়ে সরকারী খরচে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।

 

(৫) ইতিমধ্যে প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে এসেছেন এবং দেশেই ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করতে চাইছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য আর্থিক সহায়তা/ সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

 

(৬) প্রবাসীদের জন্য জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে, অনলাইন ভোটিং সিস্টেম চালু করতে হবে।

 

(৭) বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের দক্ষতা কাজে লাগানোর সুযোগ প্রদান করতে হবে।

 

(৮) ভিসার প্রাপ্তির পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ভিসা সংক্রান্ত বিষয়ে ভারতের দিল্লি যাওয়া এড়াতে ঢাকাতে আরও বেশি দেশের বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশেগুলোর দূতাবাস বা কনস্যুলেট বা ভিসা কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।

 

(৯) জনশক্তি খাতকে সিন্ডিকেটমুক্ত করতে হবে। আরও চাহিদাপত্র আনয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিদেশ যেতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের নিবিড় প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা উন্নয়নে ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে। ভিসা এবং অন্যান্য খরচ অবশ্যই যৌক্তিক হতে হবে। সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ প্রদান করতে হবে। বিমানের টিকেট অবশ্যই ন্যায্য মূল্যে প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।

 

(১০) ব্যাংকে ছাত্রদের ফাইল ওপেন এবং বিদেশে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়/কলেজে টিউশন ফি সহ সকল ফি পেমেন্ট প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। মেধার ভিত্তিতে স্কলারশিপ প্রাপ্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সেন্ট্রাল ডকুমেন্টেশন প্রত্যয়ন/এটাস্টেশন সিস্টেম চালু করতে হবে।

 

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন, সংগঠনের আহ্বায়ক আহম্মেদ উল্লাহ সাদী, সদস্য সচিব সৌরভ আল জাহিদ, ইফতেখার আলম চৌধুরী সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।