তামাক আমাদের দেশের জন্য একটি মরণঘাতী সমস্যা- অধ্যাপক ডাঃ সারেদুর রহমান

রবিবার, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪

 

জাতির সংবাদ ডটকম।।

তামাক আমাদের দেশের জন্য একটি মরণঘাতী সমস্যা।প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ তামাক সেবনের কারণে মৃত্যু বরণ করে। যা আমাদের জন্য একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক বিষয় বলে তিনি এই মন্তব্য করেন।

 

রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে, তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন এর আয়োজনে ‘ছিল ‘ভামাক ও তামাকজাত পণ্য ব্যাবহারের ক্ষতিকর দিক এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় এর প্রতিরোধের উপায়’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ উপচার্য অধ্যাপক ডাঃ সারেদুর রহমান এই কথা বলেন।

 

 

অধ্যাপক ডাঃ সারেদুর রহমান বলেন,তামাক আমাদের দেশের জন্য একটি মরণঘাতী সমস্যা। প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষ তামাক সেবনের কারণে মারা যাচ্ছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে, যাতে তারা তামাক থেকে দূরে থাকতে পারে। স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং প্রয়োজনীয় আইন প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা তামাকের ব্যবহার হ্রাস করতে পারি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে, তামাক সেবনের ফলে প্রতিবছর ৮ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটে, শুধু বাংলাদেশেই প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে প্রায় ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরন করে। যা আমাদের জন্য একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক বিষয়।

 

, স্বাস্থ্য সুরক্ষণ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক,মোঃ নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ বলেন,: সুস্থ-সমৃদ্ধ দেশের জন্য ধূমপানমুক্ত সমাজ দরকার। কিছুক্ষণ আগে অধ্যাপক ডাঃ সায়েদুর রহমান বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে, তামাক সেবনের ফলে প্রতিবছর ৮ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু ঘটে এবং তাঁর সাথে আমি একটু যুগ করতে চাই, এই ৮ মিলিয়ন মৃত মানুষের মধ্যে সরাসরি তামাক ব্যবহারের কারণে মারা যায় ৭১ লক্ষ মানুষ এবং পরোক্ষ ধূমপানের কারণে মারা যায় প্রায় ৯ লক্ষ মানুষ। অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৩-১৫ বছরের শিশুদের মধ্যে (গ্লোবাল ইয়ুথ টোবাকো সার্ভে-২০১৩) শতকরা ৬.৯% কোন না কোন ধরনের তামাক ব্যাবহার করে, তাদের মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা শতকরা ৯.২% এবং মেয়েদের সংখ্যা শতকরা ২.৮%। তাই আমাদের লক্ষ্যে হতে হবে এই শতকরার পরিমান শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা।

 

 

স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন ,তামাক ব্যবহারজনিত কারনে স্বাস্থ্য খাতে সরকারের যে ব্যয় হয়, তা অত্যন্ত বিপর্যয়কর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে তামাকের কারণে বছরে ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হয়। তামাকের বিরুদ্ধে কৌশলগত নীতি গ্রহণ করা হলে, স্বাস্থ্য খাতে এই বায়কে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সম্ভব। আমাদের স্বাস্থ্য অর্থনীতিতে এটির প্রভাব বিশ্লেষণ করা জরুরি।

 

স্বাস্থ্য সেযা বিভাষ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব ডাঃ মোঃ শিব্বির আহমেদ ওসমানী বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন তামাকজাত কোম্পানি তামাকের পজেটিভ প্রচারনা দিন দিন বৃদ্ধি করে যাচ্ছে এবং তার ফলে তামাকের ক্ষতিকরদিক গুলো সম্পর্কে জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ কমে যাচ্ছে। আমাদের এই সমস্যাটার দ্রুত সমাধান করতে হবে। বিভিন্ন ভিনদেশি কোম্পানি বাংলাদেশে তামাকপণ্য আমদানিতে অনেক বেশি ভূমিকা রাখছে যার ফলে তামাকের ব্যাবহার বহুগুণে বেড়ে যাচ্ছে। এই সকল দিক গুলো আমাদের নজরে আনতে হবে, পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারকে তামাকপণ্যের উপর শতভাব শুল্ক বাড়াতে হবে যার ফলে তামাকপণ্যে বেবহারে ধূমপায়ীরা অনুৎসাহী হবে। বাংলাদেশে প্রতিবছর তামাকপণ্যে খাতে লাভের চেতে লোকসানের হার বেশি যা আমাদের দেশের জন্য বিশাল ক্ষতির কারন।

 

গ্লোবাল হেলথ এবং রিপ্রোডাকটিভ হেলথ বিশেষজ্ঞ ড হ্যালিদা হানম আখতার বলেন,হেলথের দৃষ্টিকোণ থেকে, তামাক একটি বৈশ্বিক সংকট। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (BTRC) এর এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে আমাদের দেশে প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন তামাক ব্যবহার করে, যা জনস্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। ২০১৯-২০২০ থেকে ২০২৩-২০২৪, এই পাঁচ অর্থবছরের প্রতিটিতেই কখনো সকল স্তরের শলাকার প্যাকেটের দাম অল্প অল্প করে বাড়ানো হয়েছে। তমে সিগারেটের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমাতে এক ধাক্কায় অনেকখানি করে দাম বাড়ানো দরকার। অল্প অল্প করে সিগারেটের দাম বাড়ালে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গতি রাখা সম্ভব হয়না। তাতে সিগারেট বরং সহজলভ্য হয়ে ওঠে অন্যান্য পণ্যের তুলনায়। জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার এবং সামাজিক মিডিয়ার ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।

 

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন,তামাকের ব্যবহার হৃদরোগ, ক্যান্সার শ্বাসকষ্ট সহ বিভিন্ন নন-কমিউনিকেবল রোগের অন্যতম কারণ। তিনি আরও বলেন, তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনুন, সুস্থ জীবন নিশ্চিত করুন। তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে, আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং তামাকমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে হবে। আসুন, তামাকের বিরুদ্ধে একসাথে লড়াই করি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করি

 

 

লিড পলিসি অ্যাডভাইজর,মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, বলেন , তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি সমন্বিত নীতি এবং আমাদের কিছু নতুন আইন বাস্তবায়ন করতে হবে, যেমন, সুনির্দিষ্ট করারোপ প্রথা চালু করা, সিগারেটের চারটি স্তর থেকে কমিয়ে প্রথমে দুইটি স্তর করা এবং অদুর ভবিষ্যতে একক স্তর প্রথা প্রচলন, নিম্ন স্তরের সিগারেটের সম্পূরক সুদ্ধ ৬৫% করা, যা তামাকের ব্যবহার হ্রাস করতে সাহায্য করবে। তিনি আরও বলেন, সকল পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান (DSA) নিষিদ্ধ করা। তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে (Points of Sale) তামাকজাত পণ্য প্রর্দশন (Product Display) নিষিদ্ধ করা। তামাক কোম্পানির যে কোন ধরণের সামাজিক দায়বদ্ধতা (CSR) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা। ই-সিগারেট, টোব্যাকো পণ্য-সহ সকল ইমার্জিং টোব্যাকো পণ্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা। তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৯০% করা। বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা।

 

 

এই আলোচনা সভার মধ্যে দিয়ে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে, তামাক ও তামাকজাত পণ্য ব্যাবহারের ক্ষতিকর দিক গুলো উঠে আসে এবং সকল স্তরের নাগরিকের সমন্বয়ে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য একটি বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

 

 

উক্ত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষণ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক,মোঃ নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ, বক্তব্য রাখেন বিএসএমএমইউ উপচার্য অধ্যাপক ডাঃ সারেদুর রহমান,অধ্যাপক ডঃ সৈয়দ আব্দুল হামিদ,ডাঃ মোঃ শিব্বির আহমেদ ওসমানী,ড হ্যালিদা হানম আখতার,অধ্যাপক ডাঃ সোহেল রেজা চৌধুরী,মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান,সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।