স্টাফ রিপোর্টার :: ছাত্র-জনতার গন অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার সরকার প্রধান শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালালেও রয়ে গেছে তার দোসররা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং কর্পোরেশনের (বিএইচবিএফসি) বিভিন্ন উইংয়ের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এখনও বহাল তবিয়তে। পতিত স্বৈরাচারের দোসর কতিপয় দুনীর্তিবাজ র্কমকর্তারা ঢাকায় সদর দফতরে এখনও গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত রয়েছেন। যা নতুন বাংলাদেশে এ প্রতিষ্ঠানের সেবা সঠিকভাবে জনগণের দোড় গোড়ায় পৌছানোর জন্য হুমকিস্বরুপ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএইচবিএফসিতে মহাব্যাবস্থাপক পদে রয়েছেন মো. খায়রুল ইসলাম। যিনি কিনা একাই দায়িত্ব পালন করে আসছেন প্রশাসন, হিসাব ও অর্থ বিভাগ এবং ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের মত গুরুত্বপূর্ণ দফতরে। বিএইচবিএফসিতে সিনিয়র জিএম থাকা সত্ত্বেও মো. খায়রুল ইসলাম এ গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলো দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নিজ নিয়ন্ত্রনে রেখেছেন। এ দফতরে স্বৈরাচারের দোসরখ্যাত আরো অনেক কর্মকর্তা থাকলেও আমাদের অনুসন্ধানের নজর আটকে যায় এ মহাব্যাবস্থাপকের কর্মকান্ডে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যখন যে সচিব এবং ব্যাবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে তাদের ঘনিষ্ট বনেযান মো. খায়রুল ইসলাম।
ছাত্র জীবনে মো. খায়রুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম ছাত্র হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। সে সুবাধে বিএইচবিএফসিতে কর্মকর্তা পদে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের ডিও লেটার ও নড়াইল আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান শাহ আতিয়ার রহমানের সুপারিশে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এ নিয়োগ নিয়ে তৈরী হয় অডিট আপত্তি। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অডিট আপত্তির তোয়াক্কা না করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নেন মো. খায়রুল ইসলাম।
স্বৈরাচার সরকারের দীর্ঘ শাসনামলে তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পরপর পাঁচটি পদোন্নতি বাগিয়ে নিয়েছেন। অফিসার পদে চাকরিতে যোগদান করে এখন তিনি মহাব্যবস্থাপক। চাকরি জীবেন ডিজিএম হওয়ার সময় এ দফতরে এই পোস্ট ছিল না। সে সময় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে ডিজিএম পদ তৈরী করেন এবং পদোন্নতি বাগিয়ে নেন। পরবর্তীতে জিএম হওয়ার সময় তার বয়স পূর্ণ না হওয়ায় ক্ষমতার প্রভাবে পরীক্ষার সময় পিছিয়ে পরবর্তীতে বয়সের সময়সীমা পূর্ণ হওয়ার পরে পদোন্নতির পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন এ কর্মকর্তা। প্রভাব খাটিয়ে জিএম পদে পদোন্নতি নেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এর তৎকালীন দুর্নীতিবাজ সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহর মাধ্যমে তিনি এ পদ বাগিয়ে নেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, ঋণ প্রদানে নানা সুবিধা গ্রহন, কমিশনের জন্য বিএইচবিএফসির টাকা নির্দিষ্ট ব্যাংকে এফডিআর করা, সারাদেশের ৬৪ টি অফিস ডেকোরেশন এর নামে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে এ কর্মকর্তা। এছাড়া সুবিধাজনক জায়গায় কর্মকর্তাদের বদলী বানিজ্য করে থাকেন। যাদের সাথে তার সম্পর্ক কিছুটা ভালো তাদের কাছ থেকে তিনি দামী দামী উপহার গ্রহণের মাধ্যমে পছন্দের জায়গায় বদলীর সুপারিশ করেন বলে জানায় কয়েকজন কর্মকর্তা।
সম্প্রতি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরকার তথা পুলিশ ও ছাত্রলীগের পক্ষে ব্যাপক সহযোগিতা করেছেন বলে জানা যায়। একটি বিশেষ সূত্র জানায়, এই আন্দোলনে ছাত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে ছাত্রলীগকে বিভিন্ন সময় অর্থসহ নানা সুযোগ সুবিধা দিয়েছে এই কর্মকর্তা। সূত্রটি আরো জানায়, নারী পুলিশ কান্ডে জড়িত পুলিশের কর্মকর্তা এডিসি হারুন তার নিকট বন্ধু। বর্তমানে এডিসি হারুন পলাতক থাকলেও, নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করে আসছেন এ কর্মকর্তা।
এসব বিষয়ে জানতে মহাব্যবস্থাপক মো. খায়রুল ইসলামের সাথে কথা বলার জন্য অসংখ্যবার তার অফিসিয়াল টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
স্বাধীন মুক্ত পরিবেশে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থায় দলবাজ অদক্ষ কর্মকর্তাদের স্থলে দেশপ্রেমিক দক্ষ কর্মকর্তাদের পদায়ন শুরু হয়েছে। বিএইচবিএফসি’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও দাবী বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং কর্পোরেশনে এ প্রক্রিয়া শুরু হোক।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা যে কর্তৃত্ববাদের পরাজয় দেখলাম, তার মূলে ছিল দুর্নীতি ও দুঃশাসন। জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করে সম্পদের পাহাড় গড়াই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। যেখানে জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহি ছিল না। ছিল প্রশাসনে দলীয়করণ ও পরিবারতন্ত্রের ছড়াছড়ি। এগুলো এখন প্রতিহত করার সময় এসেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এ কর্মকর্তাকে নিয়ে বিস্তর অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চাঞ্চলকর আরো অনেক তথ্য। বেশ কিছু তথ্য প্রমান ইতোমধ্যে এসেছে আমাদের হাতে। এর মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য নারী কর্মকর্তা ও সুন্দরী ঋণ গ্রহীতাদের সাথে অনৈতিক সম্পর্কের ফোনালাপ। নামে বেনামে সম্পদের ফিরিস্তি। যা নিয়ে প্রকাশিত হবে ধারাবাহিক প্রতিবেদন।