জাতির সংবাদ ডটকম।।
চলমান শ্রমিক আন্দোলন মোকাবিলা এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে পোশাক খাতের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বোঝাতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বিজিএমইএ’র পরিচালনা বোর্ড। অভিযোগে আরও বলা হয়, এ শিল্পকে ধ্বংস করতে একটি গোষ্ঠী কলকাঠি নাড়ছে, বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার কমিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারপরও সরকারের কাছে শিল্পে বাস্তব অবস্থা তুলে ধরছে না এবং বিদেশি ক্রেতাদের আস্থায় আনতে তারা উদ্যোগ গ্রহণ করছে না।
শনিবার (৫ অক্টোবর ২০২৪ ইং) রাজধানীর কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে এক সভায় সাধারণ গার্মেন্টস মালিকরা এসব অভিযোগ করেন। পোশাক শিল্পের চলমান অস্থিরতা দূরীকরণে করণীয় খুজতে এই সভার আয়োজন করে ফোরাম। প্রসঙ্গত, ফোরাম হচ্ছে বিজিএমইএ নির্বাচনে অংশ নেয়া একটি গ্রুপ।
এতে ফোরাম সাধারণ সম্পাদক এবং নেক্সাস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রশিদ হোসাইনী বলেন, ‘গার্মেন্টসে শিল্পে অস্থিরতা আগেও ছিল। অতীতের অস্থিরতা এতো দীর্ঘায়িত হয়নি। এর পেছনে কারো ইন্ধন থাকতে পারে। এরা শ্রমিক অসন্তোষের নামে দেশের অর্থনীতিকে ধূলিস্মাৎ করতে চায়। গার্মেন্টস করে অনেকে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেনি, বিদেশে টাকা পাচার করেছে। এদের কারণে বেকায়দায় থাকেন সত্যিকারের মালিকরা। এখন গোয়েন্দা সংস্থা পাসপোর্টের তথ্য চাচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে, এটাই কী গার্মেন্টস মালিকদের অপরাধ। বিজিএমইএ বোর্ড সরকারকে গার্মেন্টস শিল্পের প্রকৃত অবস্থা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে।’
সীমা ফ্যাশনের প্রোপাইটার আবুল হোসেন বলেন, ‘সরকারের উপদেষ্টাদের গার্মেন্টস সম্পর্কে জ্ঞান বা জানাশোনা নিয়ে সন্দেহ আছে। একইসঙ্গে বিজিএমইএ বোর্ডও দায়িত্বজ্ঞান হীনভাবে সরকারের কাছে সেক্টরের সমস্যা তুলে ধরতে পারছে না। তারা শুধু ব্যস্ত নিজেদের স্বার্থ নিয়ে। আশুলিয়া এলাকায় আগস্টের বেতন ব্যাংক থেকে ১৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে দিতে হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে অনেক কারখানায় এক দিনও কাজ হয়নি। সেইসব কারখানা বেতন দেবে কীভাবে। সেই কারো আছে বলে মনে হয় না।’
চলমান সংকট মোকাবিলায় বিজিএমইএ বোর্ডকে ৪টি পরামর্শ দিয়ে সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ফয়সাল সামাদ বলেন, ‘আশুলিয়া এলাকায় ২৫-৩০টি কারখানা এখনো বন্ধ আছে। একটি টাস্কফোর্স গঠনের নামে কারখানা সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, আশুলিয়ায় রেসকিউ (উদ্ধার) প্যাকেজ ঘোষণা করা যেতে পারে। এর আওতায় গার্মেন্টস মালিক ব্যাংক ঋণসহ যাবতীয় সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া উচিত। তৃতীয়ত, তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা হতে পারে। চতুর্থত, বিজিএমইএ সদস্যদের কারখানার সক্ষমতার ভিত্তিতে ক্যাটাগরি করে পৃথক পলিসি প্রণয়ন করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, এখনই উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে না পারলে শ্রীলঙ্কা থেকে তামিল বিদ্রোহীদের কারণে নব্বইয়ের দশকে যেভাবে গার্মেন্টস শিল্প বাংলাদেশে এসেছিল, সেভাবে ব্যবসা বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশে চলে যেতে পারে।’
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, ‘সরকার চায় গার্মেন্টস মালিকরা শান্তিতে ব্যবসা করুক। প্রধান উপদেষ্টা পোশাক খাত নিয়ে ভীষণ বিচলিত, সমাধান খুজছেন। কিন্তু সরকারের সাথে দর কষাকষি বা নিজেদের দাবি আদায় করার মতো মুখ খুঁজে পাচ্ছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতিতে বায়ারদের আস্থায় আনা ভীষণ জরুরি। প্রধান উপদেষ্টা বিদেশি বায়ারদের সাথেও আলোচনায় বসতে রাজি আছেন। ওনার মতো বিশ্ব বরেণ্য মানুষকে ব্যবহার করতে না পারলে আমাদের (বিজিএমইএ) ব্যর্থতা। এছাড়া এক্সিট পলিসি নিয়ে কাজ করারও এখন উপযুক্ত সময়।