।। সৈয়দা রাশিদা বারী ।।
লেখক বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক
আমরা দেখেছি ৭০ পরবর্তী ৮০ এর দশক, ৯০’ দশকে শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষা কাঠামো, অবকাঠামো নকলযুক্ত শিক্ষা কিংবা শিক্ষার ক্ষুরধার তখন ছিল একটা নিরেট ও সুশিক্ষা ব্যবস্থা। আমি মনে করি ঐ সময়কালীন শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেক কঠিন ও সুশিক্ষা ছিল। সে সময়ে শিক্ষার হার পরীক্ষায় পাস ছিল ২৫-২৮ বা ৩৫% গড়ে হারে। সে সময়ে যারা শিক্ষা ব্যবস্থায় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তারা মূল্যায়িত হয়েছেন এবং শিক্ষার যোগ্যস্থানে তারা চাকুরীর সুযোগ পেয়েছেন।
এখন এই শিক্ষা ব্যবস্থায় ১৫ বছর বিগত সরকারের স্বৈরাচারিতায় শিক্ষার মান দিনে দিনে কতটা নি¤েœ পৌঁছেছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। ১০০% পরীক্ষায় পাস, উত্তীর্ণ ও জিপি এ-৫ এর সংখ্যাধিক এটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে অবমূল্যায়িত করেছে।
আমরা দেখেছি এস.এস.সি, এইচ. এস.সিতে বোর্ড স্ট্যান্ড, স্টার, ১ম বিভাগ, ২য় বিভাগ ও তৃতীয় বিভাগ, পাস বিভাগ মূল্যায়নে মূল্যায়িত হতে। এবং সে শিক্ষার মূল্যায়ণ ও গ্রহণ যোগ্যতা কত চমৎকার বলতে যথেষ্ট ভালো। বর্তমানে সবাই জিপি -এ ৫ পায়। কেউ ফেইল করে না পরীক্ষায়। অথচ কেউই কিছু জানে না শিক্ষার মান দন্ড বিবেচনায়। বলতে বোধ করি, এখন এই ব্যবস্থায় পরীক্ষায় সাপোস ১০টা বিষয়ের পরীক্ষায় কেউ ২টা বিষয়ে ফেল করলে, পরবর্তীতে সে ওই ২টা বিষয়ের পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে। কিন্তু পূর্বের ৯০ দশক পর্যন্ত যেটা ছিলো, ১টা বিষয়েও ফেল হলে টোটাল ১০টা সাবজেক্ট আবার তাকে পরীক্ষা দিয়ে বিজয়ী হতে হতো। ’৯০ দশক পরবর্তীতে এদেশে প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় এর সংখ্যা অগণিত হওয়ায় অনেক অযোগ্য ব্যক্তিও উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে।
এই ছোট দেশে সব বিবেচনায় আর কোন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হওয়া সমীচীন নয় বলে কেউ কেউ মনে করে। এতে করে এই ছোট্ট ভূখন্ডের সীমানা জায়গা আয়তন অধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছেয়ে যাবে। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হয়ে পড়বে।
২০১০ সালে একটি জনসমর্থিত জাতীয় শিক্ষানীতি গৃহীত হয়েছিল। দেশের শিক্ষা উন্নয়নের রূপরেখা দেওয়া হয়েছিলো এ নীতিতে।
কিন্তু গত ১৪ বছর ধরে এ নীতি বাস্তবায়নে কোনো সামগ্রিক ও সমন্বিত উদ্যোগ দেখা যায়নি। এর প্রধান লক্ষ্যের কোনটাই আর অর্জিত হয়নি। এসবের মধ্যে ছিল- ১. সব ধারার বিদ্যালয়ে সব শিশুর জন্য অভিন্ন মূল শিক্ষাক্রম প্রবর্তন ও একই মানের শিক্ষাসেবার সংস্থান; ২. শিক্ষকের দক্ষতা, মর্যাদা, প্রণোদনা ও কৃতীর মানেও শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধিতে বড় পরিবর্তন; ৩. বিকেন্দ্রায়িত, জবাবদিহি মূলক শিক্ষাশাসন, পরিকল্পণা ও ব্যবস্থাপনা এবং ৪. সময়ের উপযোগী দক্ষ জনশক্তি তৈরি।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, প্রাথমিক থেকে শুরু করে মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষক নির্বাচনে অনেক কঠোর হতে হবে সরকারকে। জাতিগঠনে শিক্ষার ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই অযোগ্য অদক্ষ ব্যক্তিকে শিক্ষক নিয়োগ না করা।
অন্যদিকে শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে প্রাকটিক্যাল ওয়ার্ক কমায়ে বস্তুনিষ্ঠ …. শিক্ষা ব্যবস্থাকে জোরদার করা। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগে বি.সি.এস এর মতো পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু করা। কারণ এখানেও চরম দুর্নীতি হতে দেখা যায়। যেখানে শিক্ষা বিদ্যালয়ে ক্লাস/রেজাল্ট র্যাংকিং বিবেচনা না করে নিচের র্যাংকিং থেকে উপরে উঠায়ে শিক্ষক নিয়োগ দিতে দেখা যায়।
এক্ষেত্রে ১টা সুষ্ট ব্যবস্থা চালু করা। এর পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থাকে কঠিন ও সুদৃঢ় করা। অতি সহজে যে কাউকে পিএইডি/ এমফিল এর সুযোগ না দেয়া এবং সহজে পাশ এর ব্যবস্থা না করা। এক্ষেত্রে শিক্ষার মর্যাদা যেমন রক্ষা হবে। তেমনি শিক্ষার মূল্যায়ণ অগ্রাধিকার পাবে।
২০২২ সালেও শিক্ষা ব্যবস্থায় যে নীতি প্রণয়ন হয়েছে সেটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। এ ধারণায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গার্ডিয়ানের আক্কেলগুরুম শংকিত হয়েছে। বিভ্রান্তিতে পড়েছে। আবার সম্ভবত সপ্তম শ্রেণীদের একটা পাঠ স্বাস্থ্যকথা শিক্ষার্থীর বয়স তুলনায় অশ্লিল। এখানে কোমলমতি শিশুর যে পাঠক্রম। এটাও চোখ কাপালে ওঠার মতো। ঐ পাঠ যা বর্ণনা করেছে, তা লিখতেও দ্বিধা, সেটা কি করে শিশুদের পাঠ থাকে?
অতএব ঐ বই উল্লেখিত বহাল রেখে চলাবার প্রশ্নই নাই। যা হোক সর্ব বিবেচনায় এখন সুযোগ সময় এসেছে শিক্ষা সংস্কারের বৈষম্যহীন শিক্ষা সমাজ গঠনে শিক্ষার মান উন্নয়ন করতে হবে।
আরো সংস্কারের প্রশ্নে আমি নারীর জন্যও বলবো, নারী শিক্ষার আরো অগ্রগতি চাই। নারীকে বাধ্যতামূলক ডিগ্রি পাশের পূর্বে বিয়ে নাকোচ জোরদার করতে হবে। যা সময়ের দাবী। একজন মা শিক্ষিত মানে জাতি শিক্ষিত। এই কারণে মেয়েদের আইটডোরের বা অপরাটের থেকে বড় পোষ্ট অফিসার র্যাংকে উঠিয়ে আনা জরুরী। মেয়েরা কর্মসংস্থানে বড় পোষ্টে বহাল হবে।
এতে দেশ এগিয়ে যাবে, উন্নতি উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। এটাও এখন সময়েরই দাবী। এখন দেশে সংস্কার পরিকল্পণায় অন্তবর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। এতে করে সুশীল ও শিক্ষিত সমাজ/জাতি মনে করে এ অন্তবর্তী কালীন সরকার প্রধান নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস বিশেষ ভূমিকা পালন করবেন। তিনি নারীর শিক্ষা, নারী কর্ম ও ক্ষমতায়ণে আরো বেশি, আরো মজবুত করণেও ভূমিকা রাখবেন।
গুরুত্ব দিবেন আশা করছি, সমাজ দেশ জাতি উন্নয়নে নারীর শিক্ষা ও কর্মের প্রতি। এক্ষেত্রেও আগের তুলনায় সুযোগ সুবিধা বাড়িয়ে দিবেন সবদিক বিবেচনায় একজন নারীর জীবনে যেন বাস্তবায়ন সহজতর হয়। অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীন শিক্ষা ব্যবস্থার মান, উন্নয়নে এমন সংস্কার অত্যন্ত জরুরী।
এ ব্যাপারে আমি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস সাহেব ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আশাকরি তারা বাংলাদেশের নারী শিক্ষা ও কর্ম ব্যবস্থায় সুদৃষ্টি দিবেন।