আরমান বাদল।।
ঢাকার তেজগাঁওয়ে অবস্থিত রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে ৩৮জন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শনাক্ত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের অর্থ-সম্পদের হিসাব, চাকরির মেয়াদ ও বদলিসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাবলি জেলা রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে চেয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। এ ছাড়া অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ওই কর্মকর্তাদের নামের তালিকা চূড়ান্ত করে কমিশনে দাখিল করা হয়েছে। কমিশন সিদ্ধান্ত দিলে পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে।
জানা গেছে, তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে জেলা রেজিস্ট্রার অফিস, রেকর্ডরুম ছাড়াও অন্তত ১১টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস রয়েছে। এসব অফিস ঘিরে তৈরি হয়েছে বিশাল দালাল চক্র। রয়েছে অসাধু কর্মকতা-কর্মচারীদের একাধিক শক্তিশালী চক্র। দালাল এবং অফিসের অসাধু কর্মকতা-কর্মচারীদের যোগসাজশে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি ও নাজেহাল হতে হয় সেবাপ্রার্থীদের। প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেনের ঘটনায় কর্তৃপক্ষ কোনো সুরাহা করতে পারেনি। তবে, সেবাপ্রার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে মাঝে মধ্যে দুদকের কর্মকর্তারা অভিযান চালান। এতে দালালচক্র কয়েকদিন নীরব থাকলেও আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে।
এমন প্রেক্ষাপটে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি তে তেজগাঁওয়ে রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে অভিযান চালায় দুদক। ঘুষের বিনিময়ে জমি বা ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন, ভূমি হস্তান্তরে দলিল নিবন্ধনে ঘুষ বা অতিরিক্ত টাকা আদায়, জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের সূত্র ধরে দুদকের সহকারী পরিচালক জাফর সাদিক শিবলীর নেতৃত্বে এনফোর্সমেন্ট টিমের সদস্যরা ছদ্মবেশে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। টিমের সদস্যরা সারা দিন সেখানে অবস্থান করে সেবাগ্রহীতাদের বক্তব্য গ্রহণ করেন। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত মোহরার, এক্সট্রা মোহরার ও ওমেদারদের মধ্যে ৩৮ জনের তালিকা করেন। তালিকায় রয়েছেন- রেকর্ড রুমের নকলনবিশ গৌতম দাস, আব্দুল ওয়াজিত, মহিউদ্দিন, মোহাম্মদপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নকলনবিশ বাবু হাওলাদার, আবদুস সোবহান, আব্দুল মালেক, ইসমাইল হোসেন, ঢাকা সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ওমেদার লোকমান হোসেন, খিলগাঁও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের শাহিন মিয়া, পল্লবীর জসিম উদ্দিন, উত্তরার সফি উদ্দিন, ধানমন্ডির আশিক, রানা আহমেদ, সাদ্দাম হোসেন ও জাকির হোসেন। প্রাথমিকভাবে তালিকাটি জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে দিয়েছে দুদকের টিম।
ওই দিন তাৎক্ষণিকভাবে জেলা রেজিস্ট্রার অফিস থেকে ওই সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরির ব্যক্তিগত ফাইল থেকে তাদের যোগদান, পদোন্নতি ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করেন টিমের সদস্যরা। পাশাপাশি তালিকাভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে থাকা অর্থ-সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন আকারে দুদকে পাঠাতে জেলা রেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনের সঙ্গে রেকর্ডরুম সম্প্রসারণসংক্রান্ত কাগজপত্র এবং রেকর্ড কিপারদের সর্বশেষ বদলির তথ্য দুদকে জমা দিতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কথা বলতে জেলা রেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলামের সঙ্গে কয়েকবার বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি।
তবে দুদক কর্মকর্তারা জানান, এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযানকালে প্রাপ্ত অনিয়মের বিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কথা বলেন এবং অনিয়মে জড়িতদের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে কমিশনকে অবহিত করার অনুরোধ জানান।
অপরদিকে অভিযানে পাওয়া তথ্য ও রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে সেগুলো যাচাই করে কিছু সুপারিশসহ কমিশন বরাবর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন করেছে এনফোর্সমেন্ট টিম। অভিযানের নেতৃত্বে থাকা দুদকের সহকারী পরিচালক জাফর সাদিক শিবলী জাতির সংবাদ কে বলেন, ‘ঢাকার রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ৩৮ জনের সম্পদের বিবরণ ও সংশ্লিষ্ট তথ্য উপাত্তসমূহ জেলা রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে চাওয়া হয়েছে। অভিযানে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত কমিশন বরাবর জমা দেওয়া হয়েছে। এখন কমিশন সিদ্ধান্ত দিলে পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে।আ