রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বিষয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন

বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ২৪, ২০২৪

জাতির সংবাদ ডটকম।।

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বিষয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতির সুরাহা না হওয়ায় এবং এই বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করায় এনডিএম এর নীতিনির্ধারণী কমিটির জরুরি সভায় এসংক্রান্ত আলোচনা হয়। দলে সিদ্ধান্তসমূহ গণমাধ্যমের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে পৌঁছে দেয়াই আজকের সংবাদ সম্মেলন এর মূল উদ্দেশ্য।

ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার হায়েনার দল ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে আপনাদের জন্য তৈরি করা আমাদের প্রেসনোটের বিষয়গুলো তুলে ধরছি।

১। গত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী ফ্যাসিবাদ রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গে এবং প্রশাসনের সর্বস্তরে নিজেদের অনুগত, দলদাস, লুটেরা সমর্থকদের বসিয়েছে এবং এদের ক্ষমতায়ন করেছে । আওয়ামী ফ্যাসিবাদের এসব দোসররা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত বর্তমান সরকারকে অসহযোগিতা করছে। আমরা চাই, ফ্যাসিবাদের পূর্ণ অপসারণ। বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটিতেও আমরা ফ্যাসিস্ট হাসিনার গণহত্যায় সহযোগিতাকারী কাউকেই সরকারের কোন পরজায়ে প্রতিষ্ঠিত দেখতে চাই না।

২। বিপ্লবের মাধ্যমে গঠিত সরকারের সবচেয়ে বড় সংবিধান হলো জনগণের সমর্থন এবং বিপ্লবের শক্তি। এই সরকারকে আমরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করেছি। এনডিএম এর আইন বিষয়ক সম্পাদকসহ দলের অংশীদার সকল বিজ্ঞ আইনজীবীদের মতামতের ভিত্তিতে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, এই সরকারের ভিত্তি হলো “doctrine of necessity” ও “supremacy of the will of the people”। এই দুই এর ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে এবং এটার মাধ্যমে আমরা চাইলে নতুন রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত করতে পারি। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগপত্র জমা দেয়া বা শপথের জন্য স্পিকার এর প্রয়োজন থাকবেনা। আমাদের দৃঢ় ঘোষণা, রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সংবিধান কোন বাঁধা হবে না ৷ পরবর্তী নির্বাচিত সরকার সংসদে বৈধতা দিলেই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সব পদক্ষেপ আইনগত বৈধতা পাবে৷

৩। বর্তমান সরকার রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে যে সিদ্ধান্ত নিবে আমরা সেটাকেই স্বাগত জানাব। আমরা চাই রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতির বিষয়টি মীমাংসিত হোক ৷ সরকার যদি রাষ্ট্রপতি পরিবর্তন করতে চায় সংবিধান কোনো বাঁধা হবে না৷ সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্সও সরকারের এই সিদ্ধান্তের পক্ষে থাকবে বলে আমরা আশা করি৷ তবে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টির ধোঁয়া তুলে কেউ যদি সরকারকে অস্থিতিশীল করার চিন্তাও করে আমরা সমুচিত জবাব দিতে দ্বিতীয়বার ভাববো না।

৪। সরকারের পক্ষ থেকে জনগণকে পরিষ্কার জানাতে হবে যে ১৯৭২ সালের সংবিধান রচিত হয়েছিল মুজিববাদী আদর্শের ভিত্তিতে। আমরা এই ফ্যাসিবাদী আদর্শের সংবিধানকে নতুন বাংলাদেশের সাথে সাংঘর্ষিক মনে করি৷ যেই সংবিধান আওয়ামী লীগের মত দানবীয় ফ্যাসিস্ট শক্তি এবং হাসিনার মত গণহত্যাকারী “প্রধানমন্ত্রী” তৈরি করে, সেই সংবিধানে পরিবর্তন আনা জরুরি। জাতির পিতার স্বীকৃতি, জাতির পিতার ছবির বিধানসহ সংবিধানের অনেক মৌলিক ধারা এবং বিধানে পরিবর্তন আনতে হবে৷ সংবিধানে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের চেতনা প্রতিফলিত হতেই হবে।শাসনব্যবস্থার কাঠামো, নির্বাচন পদ্ধতি, সংসদের ক্ষমতা এবং কাঠামো, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য ইত্যাদি পরিবর্তনসহ সংবিধান সংস্কারে গঠিত কমিশন নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশাকে ধারণ করবে বলে আমরা বিশ্বাস করতে চাই। তবে সংবিধান সংস্কার রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচিত সরকারই সবচেয়ে ভালোভাবে করতে পারে বলে আমরা মনে করি৷ সংবিধান সংস্কারে গঠিত কমিশনকে আমরা পূর্ণ সহযোগিতা করে যাব।

৫। আমরা অত্যন্ত গর্বিত এবং আনন্দিত, একজন নোবেল বিজয়ী বিশ্বনন্দিত ব্যক্তিত্ব আমাদের সরকার প্রধান৷ আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম সেনাপতি প্রফেসর ড. ইউনূসের প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা এবং সদিচ্ছাকে সম্মান জানাই৷ দেশের ক্রান্তিলগ্নে এবং স্পর্শকাতর সময়ে আমাদের অনুরোধে উনি দেশের গুরুদায়িত্ব নিয়েছেন। ড. ইউনূসের আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা এবং বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতার কারণে আজ আমরা প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক শক্তি এবং উন্নয়ন সহযোগীদের পক্ষ থেকে অব্যাহত সহযোগিতা এবং সমর্থন পেয়ে আসছি।

একটি নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তোরণের জন্য মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস যে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন আমরা তার প্রতি আস্থাশীল। তাঁর যোগ্য নেতৃত্ব এবং অসাধারণ ধীশক্তি আমাদেরকে রাষ্ট্র সংস্কারের পূর্ণ পথপ্রদর্শন করবে বলে বিশ্বাস করি৷ তাঁর প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আমরা পুনরায় ব্যক্ত করছি।

 

পরিশেষে আমরা নতুন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ দেখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে আমার বক্তব্য শেষ করছি৷