নুরুল আলম, মিরসরাই চট্টগ্রামঃ
চট্টগ্রামের মিরসরাই থানায় আরো এক মামলা দায়ের করা হয়েছে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এর বিরুদ্ধে। মিরসরাই পৌরসভা এলাকায় বেগম খালেদা জিয়ার রোড মার্চের গাড়ি বহরে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় ৭ বছর পর
মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদ হোসাইন বাদি হয়ে সাবেক গৃহায়নমন্ত্রী গ্রেফতারকৃত ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং তার ছেলে সাবেক এমপি রুহেল সহ ৫৯ জনের বিরুদ্ধে মিরসরাই থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলার আরো অজ্ঞাত নামা আসামি ৭০ জন।
২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগস খালেদা জিয়া কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাওয়ার পথে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মিরসরাই পৌরসভা এলাকায় দপায় দপায় গাড়ি বহরে হামলা ও ভাংচুর চালায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা ।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) মিরসরাই থানায় এজাহার নামীয় ৫৯জন সহ অজ্ঞাত ৭০ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। মামলা নং ২২। এ নিয়ে জোরারগঞ্জ এবং মিরসরাই থানায় মোশাররফ হোসেন এর বিরুদ্ধে ৮ মামলা হয়েছে। মিরসরাই থানায় ৪টি এবং জোরারগঞ্জ থানায় ৪টি মামলা। এ ছাড়া ঢাকার পল্টন থানায় একটি হত্যা মামলা রয়েছে মোশাররফ হোসেন এর বিরুদ্ধে।
মামলার অপর অসামীরা হলেন, সাবেক এমপি মাহবুব উর রহমান রুহেল, উত্তরজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক তানবীর হোসেন তপু, মিরসরাই পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর শাখের ইসলাম রাজু, সাবেক মেয়র গিয়াস উদ্দিন, মিরসরাই উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মাসুদ করিম রানা, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মাইনুর ইসলাম রানা, সাবেক কাউন্সিলর ইলিয়াস লিটন, যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ফরহাদ হোসাইন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কবির নিজামী, সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজ কবির চৌধুরী, সাবেক কাউন্সিলর আল ফরহাদ সংগ্রাম, সাবেক চেয়ারম্যান কামরুল হায়দার চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান শামসুল আলম দিদার, সাবেক চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক জুনু, মঘাদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফায়েল উল্লাহ চৌধুরী নাজমুল, সাবেক কাউন্সিলর নুর নবী, যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা নিয়াজ মোর্শেদ এলিট সহ ৭০ জনকে এই মামলার আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদি মিরসরাই পৌরসভা বিএনপি’র সদস্য সচিব জাহিদ হোসাইন মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন প্রধান আসামি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও তার ছেলে সাবেক এমপি মাহবুব উর রহমান রুহেল এর নির্দেশে মামলার অপরাপর আসামিরা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় মিরসরাই উপজেলায় একছত্র আধিপত্য বিস্তার করে। তাহাদের ভয়ে সাধারণ মানুষ কথা বলতে পারতো না।
বিগত ২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর সকাল ১১ টায় সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার পূর্ব নির্ধারিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফরে গাড়ি বহর মিরসরাই পৌঁছামাত্র প্রধান আসামি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং তার পুত্র মাহবুব উর রহমান রুহেল এর নির্দেশে অপরাপর আসামীরা মিলে বেগম খালেদা জিয়ার রোড মার্চের সফর বানচাল করার উদ্দেশ্যে গতিরোধ করে লোহার রড, রাম দা, কিরিচি, লাঠিসোঠা সহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালায়।
বেগম খালেদা জিয়ার রোড মার্চের গাড়ি বহরে কে স্বাগত জানানোর জন্য মিরসরাই উপজেলার বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন এলাকার অনুমান ১০০/১২০জন দলীয় নেতাকর্মী মিরসরাই পৌরসভাস্থ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থানকালে তাদের উপর হামলা করে মারাত্মক জখম করে।
প্রধান এবং দ্বিতীয় নাম্বার আসামীর হুকুমে ৩নং, ৪নং ও ৫নং বিবাদীর নেতৃত্বে উল্লেখিত সকল বিবাদীগণ বলতে থাকেন তোদের ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য আমাদের নেতার নির্দেশ আছে বলতে বলতে ঘটনাস্থলে ত্রাস সৃষ্টি করে।
বাদি আরো উল্লেখ করেন, একপর্যায়ে ৬নং-২০নং বিবাদী তাহাদের হাতে থাকা লাঠিসোঠা দিয়া আমাকে এবং উপস্থিত নেতাকর্মীদের হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাথারী হামলা করে মারাত্মক জখম করে। ২১-৪২নং বিবাদীগণ তাহাদের হাতে থাকা লোহার রড, দা কিরিচ ইত্যাদি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বহনকৃত ৫ থেকে ৭টি গাড়ীর সামনের ও পিছনের গ্লাস ভাংচুর করে প্রায় আড়াই লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে।
সামলার বাদি জাহিদ হোসাইন জানান, একপর্যায়ে আমরা প্রাণ রক্ষার্থে ঘটনাস্থল হইতে পিছু হটলে লাঠি-সোটা, দা, চেনী অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।
মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল কাদের জানান, মিরসরাই পৌরসভা বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদ হোসাইন মামলার বাদি। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ঢাকা পল্টন থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে রয়েছে। মিরসরাই থানার মামলায় শোন এরেস্ট দেখানো হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।
উল্লেখ্য, ২৭ অক্টোবর দুপুরে ডিবি পুলিশ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন কে ঢাকা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে। তাকে পল্টন থানার একটি হত্যা মামলায় আটক দেখিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।