ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি ।। ঠাকুরগাঁও জেলার রাণিশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগীদের পথ্য,স্টেশনারি এবং লিলেন সরবরাহের টেন্ডার নিয়ে পছন্দের সিন্ডিকেটকে কাজ পাইয়ে দিতে চলে নানা অনিয়ম দুর্নীতি, আর এবার তাতে যোগ হলো নতুন এক মাত্রা। সকল অনিয়মকে বৈধ করতে এবং সিন্ডিকেটের দ্বারা কাজ চালিয়ে নিতে আশ্রয় নিয়েছেন আদালতের। এসব অনৈতিক কাজের নেপথ্য কারিগর হিসেবে কাজ করছেন খোদ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা আব্দুস সামাদ।
গত প্রায় ১৫ বছর ধরে ৪ জনের একটি গ্রæপ(হেদায়েতুল্লাহ গ্রæপ) রাণিশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরবরাহ টেন্ডারের কাজ পেয়ে আসছে।পছন্দের এ গ্রæপকে কাজ পাওয়াতে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়। এই গ্রæপটির নেপথ্য মদদদাতা উপজেলা পঃপঃ কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুস সামাদ।
গত ০২ সেপ্টেম্বর,২০২৪ তারিখে রাণিশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের পথ্য,স্টেশনারি ও লিলেন এর টেÐার অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি দরপত্র বাক্স খোলার সাথে সাথে জানান“ উপস্থিত সকল ঠিকাদারের সামনে দর এবং দরপত্রে সংযুক্ত কাগজপত্রাদি দরপত্রের শর্তানুযায়ী দাখিল করা হয়েছে কি না তা যাচাই বাছাই করে রেজুলেশনে স্বাক্ষর করবো”। এ কথা শোনার পর টেÐার কমিটির সদস্য সচিব ডা: ফিরোজ কাগজপত্র অন্য সময় দেখাবেন বললে ইউ এন ও প্রতিনিধি সভাস্থল ত্যাগ করার চেষ্টা করেন। এর ফলে সকলের সামনেই কাগজপত্রাদি খোলা হয়।
টেÐার খোলার পর দেখা যায়, ধোলাই ও লিলেনে ৭জন দরপত্র দাখিল করেন এর মধ্যে ৫ টি দরপত্র বাতিল হয়। অবশিষ্ট ২জনের দরপত্র সঠিক বলে বিবেচিত হয়। স্টেশনারি ও মনোহারি দরপত্রে ৩জন দরপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে ২ জনের দরপত্র বাতিল হয় অবশিষ্ট ১ জনের দরপত্র সঠিক বলে বিবেচিত হয়। পথ্য সরবরাহের দরপত্রে ১৪ জন দরপত্র দাখিল করেন। এরমধ্যে ১০ জনের দরপত্র সঠিক বলে বিবেচিত হয়। গত ০৮/৯/২০২৪ তারিখে উক্ত দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভা ঠাকুরগাঁও এ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সিভিল সার্জন ঠাকুরগাঁও দপ্তরে এধরণের কোন সভা করতে না দেয়ায় উক্ত সভা এ যাবৎ অনুষ্ঠিত হয়েছে কি না কারো জানা নেই। অথচ এরই মধ্যে সিÐিকেটের সদস্য যে সমস্ত ঠিকাদারের দরপত্র বাতিল হয়েছে তাদেরকে কার্য্যাদেশ দেয়ার জন্য নানা ছলচাতুরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুস সামাদ। বিষয়টি স্থানীয় ঠিকাদারগণ উপ পরিচালক(স্বাস্থ) রংপুর ডা. মো.ওয়াজেদ আলীকে জানালে তিনি বলেন “ আমাকে আবেদনের অনুলিপি দেয়া হয়েছে। আপনারা আবেদন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট। তিনি ব্যবস্থা নেবেন”। এরপর ঠিকাদারগণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান এর সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুস সামাদকে তার দপ্তরে ডেকে “আইন মোতাবেক সঠিকভাবে”কার্য্যাদেশ দেয়ার কথা বলেন। সিভিল সার্জন বিষয়টি অবগত হয়ে সকল কাগজপত্র তার নিকট পাঠানোর জন্য উপজেলা পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুস সামাদকে বলেন। ডা সামাদ ইতোপূর্বে বাতিল হওয়া ঠিকাদারদের ফরমাল করে নাম সহ তার নিকট প্রেরণ করেন। ঠিকাদাররা সিভিল সার্জনকে বিষয়টি অবগত করলে সিভিল সার্জল ফাইলটি পুনরায় পঃপঃ কর্মকর্তার নিকট ফেরত পাঠান এবং দরপত্র সহ ফরমাল, ইনফরমাল সকল কাগজপত্র তার নিকট পেরণ করার নির্দেশ দেন, কিন্তু উক্ত পঃ পঃ কর্মকর্তা টেন্ডারের কাগজপত্র সিভিল সার্জনকে না দিয়ে পরিচালক,স্বাস্থ্য বিভাগ,রংপুর তপ্তরে সিভিল সার্জনকে দেয়া কাগজপত্রই প্রেরণ করেন। সেখানেও ঠিকাদাররা অভিযোগ করলে পরিচালক স্বাস্থ্য,রংপুর সকল দরপত্র সহ ফরমাল, ইনফরমাল সকল কাগজপত্র তার নিকট পেরণ করার নির্দেশ দেন উপজেলা পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুস সামাদকে । উপজেলা পঃপঃ কর্মকর্তা কৌশলে ইতোপূর্বে যাচাই বাছাইয়ে বাতিলকৃত সিন্ডিকেট ঠিকাদারদের নাম ও দরপত্রগুলো ফরমাল করে তার নিকট পাঠিয়ে দিয়ে অনুমোদনের অনুরোধ করেন। একই সাথে তিনি ঠাকুরগাঁও দিনাজপুর জেলার মধ্যে সবচে পুরনো অভিজ্ঞ ঠিকাদার আব্দুল করিম সহ জেলার বেশ কয়েকজন বিজ্ঞ ঠিকাদারের দরপত্র নিজের কাছে আটকে রাখেন। বিষয়টি ঠিকাদাররা অবগত হলে তারা বিভিন্নভাবে এমন অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করেন এবং এরপরও বিষয়টি নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত না নেয়ায় ঠিকাদারগণ মানবন্ধন করেন ও লিখিতভাবে বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেরন। এমতাবস্থায় পরিস্তিতি আরো ঘোলাটে করতে সিন্ডিকেট ঠিকাদাররা রানীশংকৈল সহকারি জজ আদালতে উক্ত টেন্ডারের সকলপ্রকার কার্যক্রম স্থগিতাদেশ চেয়ে মামলা করেন( মামলা নং-৪৪৩ তারিখ-১৩-১১-২৪)।আদালত যদি এ নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেন তাহলে সেই সিন্ডিকেট ঠিকাদারদের পুরনো কার্যাদেশের ভিত্তিতেই সরবরাহ চলতে থাকবে। এ কাজটিই চেয়েছিল সিন্ডিকেট ঠিকাদাররা।ছলে বলে কৌশলে উপজেলা পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুস সামাদ এর সিন্ডকেট ঠিকাদাররাই সরবরাহ কাজে থেকে যাবে।
অবিলম্বে বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য),রংপুর বিভাগ ডাঃ হারুন-অর রশীদ এর নির্দেশনা মেনে দরপত্র পুনঃ মুল্যায়ন করে প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য তার নিকট প্রেরনের জন্য জোর দাবি জানান স্থানীয় ঠিকাদাররা।